খেরসান ও খেসারত

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রায় দশমাস যুদ্ধ চলিল রাশিয়া ইউক্রেনের। আগাইয়া আসিল না ইউরোপ কিংবা ন্যাটো। ভুল কি কেবল জেলেনস্কি একা করিয়াছিলেন? হামলা তো করিয়াছিল রাশিয়া, সেই দিক হইতে ভুলের তুলনায় জেলেনস্কির অসহায়তাই ছিল বেশি। বলা যায় ইহার চাইতেও অধিক ছিল শৌর্য। যেমতে এক বিশ্বশক্তি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বুক চিতাইয়া লড়াই করিয়া গিয়াছে তাহা পুতিনের জন্য এক শিক্ষা বলা যাইতেছে। ইতিমধ্যে খেরসান হইতে সেনা সরাইয়া লইয়া গিয়াছে রাশিয়া। ইহাতে প্রতীয়মাণ হয়, এই দফায় রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হইতেছে। নিঃসন্দেহে হাফ ছাড়িয়া বাঁচিবেন অনেকেই।

বিশেষত ইউরোপে যে জ্বালানির সঙ্কট শুরু হইয়াছে এই যুদ্ধের ফলে সেই সঙ্কটের অবসান ঘটিবে। সঙ্কট কেবল ইউরোপেই সীমাবদ্ধ নহে। কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারের সঙ্কট এই ভারত উপমহাদেশেও আসিয়া পড়িয়াছে। কোনও যুদ্ধই কখনওই কাম্য নহে। কিন্তু ইহার পরেও যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ অবধারিত হয়। যুদ্ধ চলিতে চলিতে এখন যুদ্ধ অর্থনীতি বলিয়া একখানা শব্দ চালু হইয়া গিয়াছে। ইহার জনক সেই অর্থে আমেরিকা। তাই বলিয়া অন্যান্য শক্তিধরের যুদ্ধ করে না এমন নহে। তবে শক্তিধরের সঙ্গে শক্তিধরেরা যুদ্ধ কমই হয়। যেমতে অপেক্ষাকৃত ইউক্রেনের উপর শক্তিধর রাশিয়ার হামলা ঘটিল আবার শক্তিধর রাশিয়াকে কেবল হম্বিতম্বিই করিল আমেরিকা, আর কিছুই করিল না।

কৌশলবিদ পুতিন আজ যুদ্ধের দশমাস সময় অতিক্রমের পর হতাশায় ভুগিতেছেন। এই যুদ্ধ হইতে যাহা যাহা অর্জন করিতে চাহিয়াছেন তাহার অনেক কিছুই তিনি পান নাই। যুদ্ধ ক্ষেত্রের অব্যবস্থা, রণকৌশলের ভুল, অত্যধিক আত্মবিশ্বাস পুতিনকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য থেকে দূরে রাখিয়াছে। হতাশা তাহাকে ঘিরিয়া ধরিয়াছে বলিয়াই পুতিন রণক্ষেত্র হইতে সেনা সরাইয়া আনিবার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় শক্তি, যাহারা ইউক্রেনের পাশে থাকিবার আশ্বাস দিতেছে তাহাদের প্রতি পারমাণবিক বোমার হুমকি অব্যাহত রাখিয়াছেন। তাই অনেক বিশ্লেষক মনে করিতেছেন যুদ্ধ শেষ হইয়াও শেষ হইবার নহে।

এর একটি বড় কারণ হইলো যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রুশ প্রভাবিত ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে গণভোট শেষ হইবার পর সেই সকল অঞ্চলগুলিকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তির জন্য পুতিন ডিক্রি সই করিয়া ফেলিয়াছেন। এইবার এই সকল অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনা যদি বোমা ফেলিয়া আসে তাহা হইবে পুতিনের জন্য ক্রেমলিনে বোমা ফেলিবার শামিল অর্থাৎ প্রতিশোধ লইবার নতুন পথ তখন পুতিনের সামনে আসিয়া পড়িবে। আর পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে পুতিন কিন্তু নতুন কথা বলিতেছে না। গত ফেব্রুয়ারীতে ইউক্রেন হামলার সময়ে রণক্ষেত্রে তিন লক্ষ সেনা পাঠাইবার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে পুতিন জানাইয়া দিয়াছিলেন, পশ্চিমি দেশসকল ইউক্রেনকে সমর্থন, অর্থ- অস্ত্র, প্রযুক্তি প্রদান অব্যাহত রাখিলে অবধারিতভাবে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ হইবে।

আজ কিন্তু স্পষ্ট হইতেছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পদ হইতে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সরাইয়া দিবার উদ্দেশ্যে পুতিন যে কৌশল লইয়াছিলেন তাহা সঠিক ছিলো না। তিন দিনে যুদ্ধ শেষ হইলো না, তিন মাসেও না। যুদ্ধ বাধাইয়া রাশিয়া তেল ও গ্যাস ব্যবসা বাড়াইয়া লইলো বটে। পেট্রো ডলারকে রক্তচক্ষু দেখাইয়া রুবলে ব্যবসা করিয়া দেশের আর্থিক কাঠামো শক্ত করিল বটে খানিক কিন্তু যুদ্ধ প্রলম্বিত করিয়া ব্যয়ও বৃদ্ধি করিল। এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হইলে তাহাদের গুড়ের লাভ পিঁপড়ের পেটে চলিয়া যাইতে বাধ্য। আজ যুদ্ধ রাশিয়াকে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন করিয়াছে। পুতিনের সমালোচকেরা বলিতেছেন পুতিন যুদ্ধ বাধাইয়া চারখানা ভুল করিয়াছেন।

প্রথমত, রুশ সেনার ক্ষমতা লইয়া অতিমূল্যায়ন। পুতিনকে বুঝাইয়া দেওয়া হইয়াছিল যুদ্ধ তিন দিনে শেষ হইবে। পুতিন বুঝিয়াছিলেন তিন দিনেই কিয়েভের পতন হইবে, জেলেনস্কি জেলখানায় যাইবে, আর ইউক্রেনে রাশিয়ার পুতুল সরকার থাকিবে। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনের মানুষ এবং তাহাদের জাতীয়তাবোধকে অবমূল্যায়ন। তিনি কী ভাবিয়াছিলেন রুশ সেনাবাহিনীকে মুক্তিদাতা ধরিয়া লইয়া ইউক্রেনিয়রা ফুল দিয়া বরণ করিবেন? তৃতীয়ত, পশ্চিমি দেশ সকলের মতিগতি বুঝিতে না পারা। উহারা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত না থাকিয়াও ইউক্রেনের পাশেই থাকিয়া গিয়াছে সকল সহায়তা লইয়া।

সর্বশেষ ভুল হইলো ইউরোপীয় দেশ সকলের অর্থনৈতিক অবস্থান। পুতিন জ্বালানির ক্ষেত্রে সেই দেশ সকলের রাশিয়া নির্ভরতা যতটা ভাবিয়াছিলেন, ততটা ছিল না। ছোট কয়েকটি দেশ ইউরোপের জারি করা নিষেধাজ্ঞা মানিতে পারে নাই। আবার বড় দেশ জার্মানি, ইল্যাণ্ড ও রাশিয়ার জ্বালানির জাহাজের অপেক্ষায় থাকিয়া গিয়াছে। কিন্তু এরপরেও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার বাকি যাহা বাঁচিয়া রহিয়াছে তাহাতে দীর্ঘকালীন যুদ্ধে ক্ষতিরই শিকার হইতেছে পুতিনের ভাবমূর্তি এবং দেশের অর্থনীতি।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ঈদের দিনে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অতর্কিত হামলায় মৃত্যু ৪২ ফিলিস্তিনির!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পবিত্র ঈদুল আজহার দিনেও থেমে থাকল না গাজার মৃত্যমিছিল। স্থানীয় চিকিৎসা সূত্রের দাবী,…

4 hours ago

কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের নামাজ আদায়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পবিত্র ঈদুল আজহারে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি বন্দিদের জন্য…

4 hours ago

দুবাইয়ের নতুন মহা-প্রকল্প, ছাপিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বুর্জ খলিফাকেও!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-দুবাইয়ের আগামী প্রকল্প বুর্জ খলিফার থেকেও "বৃহৎ এবং সুন্দর" হতে পারে—এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন…

4 hours ago

অনূর্ধ্ব ১৪, ১৮ মহিলা ক্রিকেট, বিশালগড় দল গঠনে শীঘ্রই ওপেন ট্রায়াল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজ্যভিত্তিক অনূর্ধ্ব চৌদ্দ ও অনূর্ধ্ব আঠারো মহিলা ক্রিকেটকে সামনে রেখে বিশালগড় ক্রিকেট…

5 hours ago

কৃষি সংকল্প অভিযানে নয়া জাগরণ,৮ দিনে ১.২০ লক্ষ কৃষকের কাছে পৌঁছেছে কৃষিরথ, প্রশংসিত রাজ্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- টার্গেট ছিলো বারোদিনে সারা রাজ্যে এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার কৃষককে এই মেগা…

5 hours ago

পরিবেশ দিবস ও মশকরা!!

গোটা বিশ্বজাড়ের ৫জুন ঘটা করে আর ও একবার আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস উদ্যাপন করা হলো।এদিন আমাদের…

5 hours ago