পরমাণুকে ভেঙে নয়, সংযুক্তকরণে তৈরি হল ৭ কোটি ডিগ্রির ‘কৃত্রিম সূর্য’

 পরমাণুকে ভেঙে নয়, সংযুক্তকরণে তৈরি হল ৭ কোটি ডিগ্রির ‘কৃত্রিম সূর্য’
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ফ্রান্সে ৩৫টি দেশ যৌথভাবে একটি ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরির কাজ করছে। ‘কৃত্রিম সূর্যের’ নাম ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা
আইটিইআর। একে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘কৃত্রিম সূর্য’ বলা হচ্ছে। এই কাজে চলতি বছরের মধ্যে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। আইটিইআর নিউক্লিয়ার ফিউশন নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মেগা প্রকল্পের কাজে অংশ নিয়েছে বিশ্বের ৩৬টি দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, চিন, ভারত, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপের ইউনিয়নের ২৭টি দেশ এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। দেশগুলির আশা, সূর্যের শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বিপুল শক্তি উৎপাদন সম্ভব। মানুষের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার পরিবেশবান্ধব উৎস তৈরি করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। কৃত্রিম সূর্য তৈরির খরচের প্রায় ৪৫ শতাংশ বহন করছে ইউরোপ। আর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্য দেশগুলি প্রতিটি ৯ শতাংশ করে ব্যয় বহন করে চলেছে। এ ছাড়া প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি দেশ আইটিইআর প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন উপাদান, পদ্ধতি ও পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য কাজ করে চলেছে। বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা মূলত নিউক্লিয়ার ফিউশন ব্যবহার করে এ কাজ করছেন। এ প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয় বিক্রিয়া ঘটিয়ে একাধিক হালকা নিউক্লিয়াই সংযোজন করে তুলনামূলক ভারী নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় বিপুল শক্তি। মূলত সূর্যের নিউক্লিয়ার ফিউশনের প্রক্রিয়া অনুকরণ করছেন ওই বিজ্ঞানীরা। মূলত সূর্যের নিউক্লিয়ার ফিউশনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন বিজ্ঞানীরা। এ ধরনের গবেষণাগারকে ‘কৃত্রিম সূর্য’ বলার কারণ সূর্যের শক্তি উৎপন্নের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এমন বিক্রিয়ায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার
করা হয় হাইড্রোজেন ও ডয়টোরিয়াম গ্যাস। এর মূল লক্ষ্য বলা যায়, সমুদ্রের এক লিটার জল থেকে যে পরিমাণ ডয়টোরিয়াম গ্যাস পাওয়া যাবে, তা থেকে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে পাওয়া শক্তি ৩০০ লিটার গ্যাসোলিন পুড়িয়ে পাওয়া শক্তির প্রায় সমান। চিনের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়াও পারমাণবিক চুল্লিগুলিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগিয়েছে। এই একটি কোরিয়া
সুপারকন্ডাক্টিং টকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ (কেএসটিএআর) বা কেস্টার। একেই বলা হচ্ছে দেশটির ‘কৃত্রিম সূর্য’। এই চুল্লিতে উত্তাপে আয়ন ও পরমাণুর ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন হয়। আর এর মাধ্যমে যে শক্তি পাওয়া যায়, তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কেস্টার চুল্লিটি এর আগে ২০১৮ সালে ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে সেই তাপমাত্রা ৮ সেকেন্ড ধরে রাখতে পেরেছিল। এরপর অবশ্য বিভিন্ন দেশের কয়েকটি চুল্লি সেই রেকর্ড ভেঙে ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল। কিন্তু এবার কেস্টার যে রেকর্ড গড়ল, তা এর আগে কোনো চুল্লিই করতে পারেনি। পরপর দুবার ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পেরেছে কেস্টার। ‘নিউইয়র্ক পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসল সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। নিউক্লিয় সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ উৎপাদনের মতোই তাপমাত্রা পেতে এই প্রক্রিয়াকে কৃত্রিমভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। নিউক্লিয় বিভাজন অর্থাৎ পরমাণুর অভ্যন্তরে বা নিউক্লিয়াসে যে প্রোটন, ইলেকট্রন বা নিউট্রন কণিকা আছে তাকে ভেঙে তাপশক্তি উৎপাদন করাই ছিল এতদিনের লক্ষ্য। সেই পদ্ধতির মাধ্যমেই হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ভয়াবহ পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটেছিল। উৎপন্ন হয়েছিল তাপের তরঙ্গ। কিন্তু নিউক্লিয় সংযোজন প্রক্রিয়ায় এই বছরের শেষ দিকে ১০ কোটিডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ৫০ সেকেন্ড ধরে রাখতে চান বিজ্ঞানীরা। ২০২৬ সাল নাগাদ তাদের লক্ষ্য হচ্ছে কৃত্রিম সূর্যের তাপমাত্রা ৩০০ সেকেন্ড বা ৫ মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.