রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
খরার বিশ্বকাপ
যদিও শেষ ষোলয় হাজির রহিয়াছে এশিয়ার দুই দেশ তথাপিও এশিয়ার ফুটবলপ্রেমী বিশাল সংখ্যক মানুষ এই দিনেও ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনারই সমর্থক। এই সকল ফুটবলমোদী এশিয়ার বেশিদূর অগ্রগম নে আশাবাদী নহে। ষোলয় এশিয়ার দুইটি দলের আসিয়া যাওয়া কম গর্বের নহে। তথাপিও আবেগের বেগ ধাবিত অন্যত্র। বিশ্বকাপ কে জিতিবে— এই প্রশ্নে এই উপমহাদেশের মানুষ মূলত ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার বাহিরে খুব বেশি কেউ যাইতে পারেন না।এরপর যদি উহাদের কাউকে প্রশ্ন করা হয়,আপনি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় দেখিয়াছেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহা হইলে ইহা স্পষ্ট যে ওই ব্যক্তির বয়স এই সময়ে চল্লিশ ছাড়াইয়া অনেক দূর।
উনার নাকে চশমা উঠিয়াছে, অন্তত পত্রিকা বা মোবাইল পড়া ও দেখার সময়ে তার চশমা লাগিবেই। কারণ আর্জেন্টিনা শেষবার বিশ্বকাপ জিতিয়াছিল ৩৬ বৎসর আগে অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে। ৩৬ বৎসর আগের স্মৃতিকথা মনে করিতে হইলে ওই ব্যক্তির মোট বয়স অন্তত সাত আট হইতে হইবে,উহাই বিজ্ঞান। অর্থাৎ সেইদিন যাহারা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ লইয়া উল্লাস করিয়াছিলেন তাহাদের কেহই বর্তমানে কিশোর বা তরুণ নাই। মারাদোনার লাইভ যাহারা দেখিয়াছেন তাহারা সকলেই এখন প্রৌঢ়।অপরদিকে যদি ব্রাজিলের কথা বলিতে হয় তাহারা সর্বশেষ বিশ্বকাপ ঘরে তুলিয়াছিল ২০০২ সালে। ইহার পরে কাটিয়া গিয়াছে দুই দশক ।
সেই ম্যাচে যাহারা কাফুর দুর্দান্ত লাইভ দেখিয়াছিলেন জায়েন্ট স্ক্রিনে,টিভিতে বলিয়া মনে করিতে পারিতেছেন তাহাদের বয়স বর্তমানে কাহারওই ২৭ বা ২৮-এর কম নহে।তর্কাতীত না হইলেও এই কথা বলাই যায় এই উপমহাদেশের তরুণেরা অধিকাংশই এই দুই দলের বিশ্ববিজয়ের লাইভ দেখিতে পান নাই।তথাপিও যেন এক অভ্যাসবশত এই দুই দলেরই লোক বেশি।তাহাদের জনপ্রিয়তা তর্কাতীত। ইতিহাস বলিতেছে, বিশ্বকাপ শুরুর ২৮ বৎসর পর প্রথম বিশ্বকাপ জিতিয়াছিল ব্রাজিল।১৯৭০ সালে পেলের ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয় করিবার আগে আরও দুইবার এই খেতাব জয় করে নিয়েছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপে তাহাদের এক ধারাবাহিকতা ছিল সেই সময়কালে।
ইহার পর ব্রাজিলের সাফল্যে টানা খরা চলিতে থাকে ২৪ বৎসর। অর্থাৎ এরপরের চ্যাম্পিয়ন খেতাব মেলে ১৯৯৪ সালে। পরপর দুইবার, অর্থাৎ ২০০২ সালেও ব্রাজিল বিশ্বকাপ ঘরে তুলে। এর পর হইতে আবারও শূন্যতা চলিতেছে। ২০০২-এর পর চার চারটি বিশ্বকাপে ব্রাজিল ফাইনালেই যাইতে পারে নাই। দেখা গিয়াছে প্রতি বিশ্বকাপেই কোনও না কোনও ইউরোপিয় দেশের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করিতে হইয়াছে ব্রাজিলকে। একইরকম সমাপতন দেখা যায় আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রেও। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে হারিয়া কাঁদিয়াছিলেন দিয়াগো মারাদোনা। সেই কান্না এরপর হইতে যেন আর্জেন্টিনার অভ্যাস হইয়া গিয়াছে। আবার আর্জেন্টিনাকে মাঠে সামনে পাইলে কাঁদাইয়া দেওয়া জার্মানিরও অভ্যাস হইয়া পড়িয়াছিল।
তথাপিও বিশ্বকাপের ময়দানে আর্জেন্টিনার প্রথম শত্রু জার্মানি হইতে পারে নাই, হইয়া উঠিয়াছে ব্রাজিল। যেন অহি নকুল সম্পর্ক।লাতিন আমেরিকার এই অন্তর্দ্বন্দ্ব যখন ক্রমশ তীব্র অন্যদিকে গত চার চারটি বিশ্বকাপে খেতাব জয় করিয়াছে ইউরোপ।এই দুইটি দলের মধ্যে এইবার খেতাব জয়ের ক্ষুধা যেমন কাজ করিবে তেমনি নিজ উপমহাদেশের কথাও নাকি তাহারা ভাবিতেছেন।তাছাড়া মেসির এইবার শেষ বিশ্বকাপ। তাই খেতাব জয় তাহার জন্য জরুরি।আবার ময়দানে নামিবার আগে নেইমার তাহার প্রিয়জনদের নাকি বলিয়াছেন এই বিশ্বকাপ তাহার শেষ বিশ্বকাপ।
যদিও ৩১ বৎসর বয়সি নেইমারের বিশ্বকাপ খেলিতে হইলে বয়সে আটকাইবে না। তবে এরপর আর না খেলিতে চাহিলে সে তো ভিন্ন কথা।মেসি, রোনাল্ডোর একই হাল।নেইমার তাহা হইলে আরও রঙ জুড়িয়া দিলেন কাতার বিশ্বকাপে। তবে নেইমারের যে বক্তব্য ফুটবলমোদীদের উজ্জীবিত করে সেই হইল,মেসিকে নাকি বলিয়া দিয়াছেন, কাপ জিতিবার জন্যই তাহার কাতারে আসা। যদি সত্য সত্যই ইহা সম্ভব হয় তাহা হইলে দুই দশকের খরা কাটিবে ব্রাজিলের,খরা কাটিবে লাতিন আমেরিকার । আর বাড়তি হিসাবে উচ্ছ্বসিত থাকিবেন এই উপমহাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা।