বিশ্বের ক্ষুদ্রতম অ্যান্টেনা তৈরিতে নাসার স্বীকৃতি বাঙালি বিজ্ঞানীকে

 বিশ্বের ক্ষুদ্রতম অ্যান্টেনা তৈরিতে নাসার স্বীকৃতি বাঙালি বিজ্ঞানীকে
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ওয়্যারলেস অর্থাৎ বেতার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দিগন্ত খুলে দিয়েছে এই মুহূর্তে! প্রথমে টেলিফোন তারপরে টেলিগ্রাফ সেখান থেকে তারহীন শব্দ প্রেরণের যন্ত্র হল বেতার। তারপর এল দূরদর্শন, আর এখন ব্লুটুথ, মোবাইল। কিন্তু কলেবরে সেই বৃহৎ আয়তন ক্রমশ যেন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে কালের নিয়মে। আর এবার বাঙালি বিজ্ঞানী অধ্যাপক শ্রীকান্ত পালের হাত ধরে মাত্র ১১
মিলিমিটারের অ্যান্টেনাকে স্বীকৃতি দিল নাসা। রাঁচির মেসরার ‘বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র অধ্যাপক, বাঁকুড়ার বিজ্ঞানী শ্রীকান্ত। তার সহযোগী গবেষক মৃন্ময় চক্রবর্তীকে নিয়ে এই ‘অ্যান্টেনা’ তৈরি করেন ২০১৩ সালে। তারপর পেটেন্টের জন্য আবেদন। কিছুদিন আগে ভারত সরকার এর
পেটেন্ট দিয়েছে। আর তারপর থেকেই প্রযুক্তি বিজ্ঞান জগতের প্রস্তুতকারকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই অ্যান্টেনাকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার জন্য কোরিয়া থেকে চিন ভারতের একাধিক সংস্থা ইতিমধ্যেই কোটি কোটি টাকায় সেই অ্যান্টেনাকে বাণিজ্যিক উৎপাদন করতে শ্রীকান্তের দ্বারস্থ। প্রসঙ্গত অন্তত দু’যুগ আগে
বেতার প্রযুক্তিতে ‘ব্লু টুথ’-এর উদ্ভাবন হয়েছিল। তারপর সেই প্রযুক্তিকে আরও উন্নতির জন্য চলে নিরন্তর গবেষণা। এই নিয়ে গবেষণায় ছাত্র মৃন্ময় চক্রবর্তীকে
সঙ্গে নিয়ে শ্রীকান্তবাবু বিড়লা সংস্থার গবেষণাগারে তৈরি করেন এই ‘ মাইক্রো অ্যান্টেনা’। শ্রীকান্তবাবুর দাবি, আকারে
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট হলেও গতির ক্ষেত্রে ‘ব্লু
টুথ’-এর থেকে প্রায় একশো গুণ বেশি শক্তি ধরে এটি। বরাবরই লেখাপড়া তুখোড় শ্রীকান্তের প্রিয় বিষয় ছিল গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞান। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত নেপাল কৃষ্ণ পালের চতুর্থসন্তান শ্রীকান্ত যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে
ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে স্বর্ণপদক পেয়ে স্নাতক হন। তারপর সেখান থেকে অক্সফোর্ড এবং বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা। বাঁকুড়া জিলা স্কুল থেকে অক্সফোর্ডেপৌঁছোন মেধা ও জেদকে সম্বল করে। বিশ্বের বৃহত্তম টেলিস্কোপ হিসেবে পরিচিত নাসার ‘গ্রিন ব্যান্ড টেলিস্কোপ’এ সংকেত গ্রহণের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করেও নজর কাড়েন তিনি। পশ্চিম
ভার্জিনিয়ায় ১১০ মিটার ব্যাসের ওই অ্যান্টেনাটির সমস্যা ছিল একটি নির্দিষ্ট কৌণিক দূরত্বে সংকেত গ্রহণ করতে পারছিল না সেটি। কারণ পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি থাকা কয়েকটি উপগ্রহ থেকে প্রেরিত সংকেত বাধা সৃষ্টি করছিল তাকে।
তাই সেখানে ‘সুপার কন্ডাক্টিং ব্যান্ড টপ ফিল্টার’ লাগিয়ে ত্রুটি মেরামত করে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক মহলের নজরে চলে আসেন তিনি। এরপর জডরোলে ৭৬ মিটার
ব্যাসের বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অ্যান্টেনাটিরও মেরামত করলেন তিনি। এবার বৃহত্তম নয় ক্ষুদ্রতম অ্যান্টেনা তৈরিতে মন দিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাচির বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে চাকরি পাওয়ার পর তার চোখ ছিল ওই ক্ষুদ্রতম অ্যান্টেনা তৈরি করার
দিকে। শ্রীকান্তবাবু জানালেন, ‘এই অ্যান্টেনা ওয়্যারলেস প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দিগন্ত খুলে দেবে। নতুন এই অ্যান্টেনার ফ্রিকোয়েন্সি ১.৮ গিগাহার্জ থেকে ১৮ গিগাহার্জ পর্যন্ত । তথ্য
আদানপ্রদানের জন্য ১০:১ ব্যান্ডউইথ
ব্যবহার করে।’ তিনি আরও জানান, ছোট হওয়ায় অনায়াসেই এই ‘অ্যান্টেনা’ সংযুক্ত করা যাবে মোবাইল ফোনের সঙ্গেও। ১০০
মিটারের মধ্যে দুটি বা তার বেশি এই অ্যান্টেনা যুক্ত যন্ত্র ইন্টারনেট সংযোগ
ছাড়াই চোখের নিমেষে আদানপ্রদান করতে পারবে বড় আকারের তথ্য সমৃদ্ধ ফাইল ও ফোল্ডার। দেখতে অনেকটা বোতামের মতো। উৎপাদন খরচও অত্যন্ত কম। অ্যান্টেনাটির পেটেন্ট পাওয়ার পর বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার তরফে বাণিজ্যিকভাবে এবার তা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীকান্তবাবু। তার আক্ষেপ বিদেশ নয়, দেশিয়
প্রযুক্তিতে বিপ্লব আনুক দেশ। আর সেই জন্য বিদেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানের চাকরি, গবেষণা ছেড়ে এখন দেশের মাটিতেই গবেষণায় মন দিয়েছেন তিনি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.