জোটের মার্কেটিং

 জোটের মার্কেটিং
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কথায় আছে বিপদে পড়লে নাকি সাপে-নেউলেও বন্ধুত্ব হয়। বাঘে-গরুও একঘাটে জল খায়। রাজনীতির অঙ্গনে তো সাপে-নেউলের বন্ধুত্ব, অনেকটা শরীরের পোশাক পাল্টানোর মতো। আজ যে চিরশত্রু, কাল সে পরম বন্ধু। আবার পরম মিত্রও চরম শত্রুতে রূপান্তরিত হয়। রাজনীতিতে ক্ষমতাই আসল কথা। এই ক্ষমতা দখলের জন্যই কখনও বন্ধু হয় শত্রু। আবার শত্রু হয় পরম মিত্র। নীতি-আদর্শের ধার ধারে না কেউই। এই ক্ষেত্রে ডান- বাম-রাম সকলেই একই পথের পথিক। মুখে সকলে নীতি আদর্শের কথা বললেও ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে নীতি আদর্শ ইত্যাদি বিসর্জন দিতে কেউই বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না।

CPIM

গণতন্ত্রে জনতা জনার্দন হলেও, জনতার কথা কেউই ভাবে না। এটাই বর্তমান রাজনীতির কঠিন বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। তারপরও বামপন্থী রাজনীতি ছিলো একটু ভিন্ন। একটা সময় বামপন্থীরা নীতি আদর্শ বিচারধারা ইত্যাদিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে চলতো। সেইসব এখন অতীত। রাজনীতির মূল অ্যাজেণ্ডা ক্ষমতা দখল, এটাকেই প্রাধান্য দিয়ে বামেরাও গা ভাসিয়ে দিয়েছে। ফলে নীতি-আদর্শ-বিচারধারা ইত্যাদি তাত্ত্বিক শব্দগুলোর এখন আর খুব একটা গুরুত্ব নেই বামেদের কাছে। যে করেই হোক, ক্ষমতা দখলই এখন মূলমন্ত্র, মূল আদর্শ। ফলে পরম শত্রুকে মিত্র বানাতে এখন আর কোনও কুন্ঠাবোধ নেই।

জনতা জনার্দন কী ভাবলো, কী মনে করলো তাতে কী আসে যায়। বিপদে পড়লে সাপে-নেউলের বন্ধুত্বের কথা এই কারণেই উল্লেখ করা হয়েছে। বামেরা এই রাজ্যে কোনওদিন রাজার শাসন, রাজ পরিবার ও রাজাদের সম্মান মর্যাদা দেয়নি। রাজাদের কাজের স্বীকৃতি দেয়নি। বরাবরই রাজার শাসন ও রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে গেছে। রাজপরিবারের বিরুদ্ধে জনজাতিদের ক্ষেপিয়ে রাজনীতির ভিতকে শক্তিশালী করেছে। দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর ক্ষমতার মসনদে ছিলো। ক্ষমতা হারিয়ে আজ সেই বামেরাই এখন ক্ষমতা হাসিল করতে রাজ পরিবারের এক উত্তরসূরির শরণাপন্ন হচ্ছে। তাঁর জন্মদিনে রাজবাড়িতে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছে। শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন বাম নেতারা। যা রাজ্য রাজনীতিতে খুবই বিরল। বামেদের এমন ভূমিকা এর আগে কোনওদিন দেখা যায়নি।

FB_IMG_1670421591542

সময়ের পরিবর্তনে সেই রাজ পরিবারের উত্তরসূরি প্রদ্যোত কিশোর এখন পাহাড়ে রাজনীতির মূল মাথা। এ নিয়ে কারও দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না। যে পাহাড় একসময় বামরাজনীতির দুর্গ ছিলো, সেই পাহাড় এখন রাজপরিবারের এক উত্তরসূরির দখলে। ফলে ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে পুনরায় রাজ্যের ক্ষমতায় ফিরে আসতে হলে প্রদ্যোত কিশোরের হাত ধরা ছাড়া বামেদের বিকল্প কোনও রাস্তা নেই। কাজটা খুবই কঠিন। আবার প্রদ্যোতের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলতেও পারছে না। একপ্রকার উভয়সঙ্কটে বামেরা।

এমন একটি পরিস্থিতিতে রাজ্য থেকে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করতে কংগ্রেস-সিপিএম- তিপ্ৰা মথা সহ সকল বিরোধীরা একজোট হওয়ার কথা সকলে বললেও, আসলে কাজটি হওয়ার মতো এখনও তেমন কোনও ইঙ্গিত বা আভাস পাওয়া যায়নি। কারণ একটাই। ব্যাটন এখন প্রদ্যোতের হাতে। কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে জোটের সম্ভাবনা হাওয়ায় ভাসলেও শেষপর্যন্ত বাস্তবে ফলপ্রসু হবে কিনা সেটাও লাখ টাকার প্রশ্ন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যাকে নিয়ে এত আলোচনা সেই প্রদ্যোত কিশোর কিন্তু বুধবার দিল্লীতে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, কারোর সাথেই জোট করবেন না। বরং জোটের কথা প্রচার করে সিপিএম ও কংগ্রেস নিজেরাই নিজেদের মার্কেটিং করছে। শেষপর্যন্ত কী হয় এখন সেটাই দেখার।

IMG_20221207_193216
Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.