রাহুলের রাজনীতি

 রাহুলের রাজনীতি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাবণ বধের পর্বে রাবণ তখন ধরাশায়ী,শরীরে প্রাণ রয়ে গেছে। রামচন্দ্র তার অনুজকে নির্দেশ দিয়াছিলেন, যাও রাবণের কাছ হইতে রাজনীতির শিক্ষা লইয়া আইস। আমাদের সংস্কৃতিতে শত্রুর কাছ হইতে শিক্ষা লওয়ার রেওয়াজ অতি প্রাচীন। রাজনীতিতে শত্রু মিত্র বিভাজন কোনও কালেই স্পষ্ট নহে। আর গণতান্ত্রিক কাঠামোয় হার-জিত অতীব সাধারণ এক বিষয়। এইখানে যাহারা জিতিয়া থাকে তাহারাই রাম হন, পরাজিতরাই রাবণ। বর্তমানের এই পরিস্থিতিতে রাজনীতির যে আবর্ত তাহাতে রাম-রাবণ বিভাজন অমূলক। তবে রাহুল গান্ধী যে মতে বিজেপি এবং আরএসএসকে গুরু মানিয়া লইয়াছে তাহার প্রকাশ্য বক্তব্যে তাহাতে তাহার রাজনৈতিক পরিপক্কতা এবং শিষ্টাচার স্পষ্ট হয়।

বিজেপি একদা রাহুল গান্ধীকে পাপ্পু বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। আজ আর রাহুলকে পাপ্পু বলিতে শোনা যায় না বিশেষ। তবে অন্য সকল আগের মতনই রহিয়াছে।দীর্ঘ পথ ভারত জোড়ো যাত্রার পর রাহুল গান্ধী নয় দিনের ছুটি লইয়াছেন।এই ঘোষণায় বিজেপি রাহুলকে আক্রমণের ভঙ্গিতে বলিয়াছে, রাহুল এইবার বিদেশ মানুষের বেড়াইতে যাইবে। যাত্রার পরিসমাপ্তি। বস্তুত বিজেপির এই সকল বক্তব্য যে সঠিক নহে তাহার জানান দিতে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকিয়া বলিলেন, বিজেপির ব্যঙ্গ, ঠাট্টার জবাবে বলিলেন, আমি চাই তাঁহারা আমাকে আরও আক্রমণ করুক। যত আক্রমণ আসিবে আমাদিগের নীতি আদর্শ ততই জোরদার হইবে।

করোনার স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা লইয়া কংগ্রেস প্রথম হইতেই বলিতেছে, রাহুলের পদযাত্রা ঠেকাইবার জন্যই এই ধরনের সার্কুলার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর তরফেও বলা হইয়াছিল রাহুল গান্ধীর যাত্রায় করোনা বিধি মানা হইতেছে না ।এই প্রসঙ্গে রাহুল বলিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চাহিতেছে আমি বুলেট প্রুফ গাড়ি করিয়া পদযাত্রা করি।কিন্তু গাড়ি চড়িয়া তো পদযাত্রা সম্ভব নহে। প্রধানমন্ত্রী জনসংযোগে যখন পদযাত্রা বা রোড শো করেন তখন কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি লইয়া কোনও চিঠি যাইবে না। তাহাদের নেতারা খণ্ডগুলি বিধি ভাঙিলে অসুবিধা নাই। রাহুলের মতে ভারত জোড়ো যাত্রায় ভীত হইয়াছে বিজেপি।

তাঁহারা যাত্রা বন্ধের ফিকির খুঁজিতেছে। সেই লক্ষ্যে মামলা বা কেস ঠুকিবার কথা ভাবিতেছে।রাহুলের মতে তাহার ভারত জোড়ো যাত্রার উদ্দেশ্য অন্যরকম। বিকল্প ভাবধারা, আদর্শ, দৃষ্টিকোণ তুলিয়া ধরা দেশের সামনে, যাহাতে হৃত মূল্যবোধ ফিরাইয়া আনা যায়। মানুষ মানুষকে ভালোবাসুক এই কথা বলাই উদ্দেশ্য। রাহুলের মতে, ঘৃণার বদলে প্রেম, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ আর বাঁচিয়া থাকিবার এক অন্য লক্ষ্যের কথা বলা হইয়া থাকে এই ভারত জোড়ো যাত্রায়। নীতিগতভাবে সকল বিরোধীদল এই যাত্রায় কংগ্রেসের সঙ্গে রহিয়াছে তবে দলগত বাধ্যবাধকতার সবচেয়ে কারণে সকলেই এই যাত্রায় আসিতেছে না।

উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদব আর মায়াবতীও এই যাত্রার পক্ষে রহিয়াছে। তাহারাও প্রেম ভালোবাসার দেশ চাহেন।রাহুল তাহার ১০৮ দিনের যাত্রার বিরতিতে বলিলেন, পথ হাঁটিয়া তিনিই বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের মনে চোরাস্রোত দেখিয়াছেন। তাহার মতে বিরোধীরা যদি সুসমন্বয়ের মাধ্যমে ঘৃণা ও হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে সঠিক দিশা রাখিতে পারে তাহা হইলে বিজেপি কিছুতেই জিতিতে পারিবে না। ভারত জোড়ো যাত্রা সেই বিকল্পের রাহুল সন্ধান দিতে চাইছে। রাহুলের মতে দেশে এই সময়ে ঘৃণা, হিংসার বেসাতি চলিতেছে। কোনও দেশে এই রকম পরিস্থিতি চলিতে থাকিলে অন্য দেশ তখন সুযোগ লয় এই সরকার ভারতের পর রাষ্ট্রনীতিকে খারাপ করিয়াছে।

কংগ্রেসের আমলে দেশের পররাষ্ট্রনীতি কখনোই চিন এবং পাকিস্তানকে এক হইতে দেয় নাই।এই সরকারের নীতি দুই দেশকে এক করিয়া দিয়াছে। রাহুল বলিলেন, এই যাত্রা এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার চিনকে সামলাইতে পারে নাই। চিনকে সামলাইতে হইলে কেন নীতি দরকার তাহা বুঝিতেই পারে নাই। ফলত চিন প্রথমে ডোকলামে ঢুকিয়াছে তারপর ঢুকিল তাওয়াং। চিনের এই বাড়াবাড়ি লইয়া রাহুল সরকারকে পরামর্শ দিয়াছে, সীমান্তে যাহা হইতেছে তাহা লুকাইবেন না। রাজনৈতিক লাভালাভ আর বিদেশনীতি গুলাইয়া ফেলিবেন না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.