সাক্ষাৎ করলেন না মুখ্যমন্ত্রী, ফের রাজপথে বসলেন ১০,৩২৩

 সাক্ষাৎ করলেন না মুখ্যমন্ত্রী, ফের রাজপথে বসলেন ১০,৩২৩
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আবারও মহাকরণ থেকে শূন্য হাতে ফিরলেন ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকারা। কারণ মঙ্গলবার চাকরিচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে সাক্ষাৎ করলো না রাজ্য সরকার। যদিও এদিন পুনরায় সরকারী চাকরি ফিরিয়ে দেবার দাবিতে মহাকরণ অভিযানে যান শিক্ষক শিক্ষিকা সহ তাদের পরিবার পরিজনেরা। তাদের পূর্ব অনুমান ছিল হয়তো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাৎ করবেন। কিন্তু রাজ্য মন্ত্রিসভার একজন সদস্যও তাদের সাথে সাক্ষাৎ করলেন না। ফলে ১০৩২৩ শিক্ষক-শিক্ষিকারা পুনরায় সরকারী চাকরির দাবিতে রাজধানী আগরতলার সিটি সেন্টার সংলগ্নে অনির্দিষ্টকালের গণ অবস্থানে বসে যান। এদিন দুপুর বারোটা নাগাদ রবীন্দ্র ভবন সংলগ্ন থেকে ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের মহাকরণ অভিযান শুরু হয়। শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমার পর শিক্ষকদের সুবিশাল মিছিল সার্কিট হাউসে আটকে দেয় পুলিশ প্রশাসন। এরপর গান্ধীমূর্তির পাদদেশে শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিক্ষোভ বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে।
এদিকে এই স্থানে শিক্ষকনেতা কমল দেব, ডালিয়া দাস, বিজয় সাহা, অমূল্য দেববর্মা, অজয় দেববর্মা, বিপুল দেববর্মা, শ্যামল দে সাংবাদিকদের জানান,২০১৮ রাজ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন রাজ্যে বিজেপি সরকার হলে প্রয়োজনে য়েছে। সংবিধান সংশোধন করে ১০৩২৩ শিক্ষকাদের পুনরায় সরকারী চাকরি প্রদান করা হবে। এমনকী তৎকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীরাও রাজ্যে এসে ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের চাকরি ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। শুধু তাই নয়, বিজেপি দলের ভিশন ডকুমেন্টেও একই প্রতিশ্রুতি ছিল। যা এখন পর্যন্ত কার্যকর হয় নি। উল্টো প্রতিশ্রুতি খেলাপের দৌলতে এখন পর্যন্ত ১৪৯ জন শিক্ষক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তারা জানান, সম্প্রতি রাজ্য সরকার, শিক্ষা দপ্তর প্রচার করছে প্রায় ২ হাজার জন ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকা নাকি জেআরবিটি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, যা সম্পূর্ণ হাস্যকরণ।কারণ পরীক্ষার ফলাফলে ১৫ জন শিক্ষিকার নাম নেই। আরও অবাক করার বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত জেআরবিটি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তবে শিক্ষা দপ্তর কীভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নাম জানলো। উল্টো শিক্ষা দপ্তরের এই প্রচারের ফলে জেআরবিটি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা ও প্রশ্নের মুখে। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে যারা চাকরি পেয়েছেন তারা সবাই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে পুনরায় চাকরিতে যোগদান করেছেন। এরপরও উল্টো প্রচার হচ্ছে।শিক্ষক নেতারা আরও জানান, গত ২৮ সেপ্টেম্বর পুজোর পর ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের সমস্যা নিরসনে আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। কিন্তু এখন ৫ মাস হতে চললেও কোন পদক্ষেপ হয়নি। উল্টো পাঁচ মাসের মধ্যে আরও দশ জন শিক্ষক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তারা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল আইনগতভাবে পদক্ষেপ গৃহীত হবে।এ লক্ষ্যে বর্ধিত আকারে উচ্চপর্যায়ে আইনবিশেষজ্ঞদের সাথেও বৈঠক করা হয়। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিলোনীয়া, সিদ্ধার্থশঙ্কর দে এবং আইন সচিব বিশ্বজিৎ পালিত। কারণ ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা রয়েছে। তাই এখন যাই করা হবে,তা আইনগত দিক যাচাই করেই পদক্ষেপ হবে, যাতে পুনরায় সমস্যা না হয়। মহাকরণে ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলা করতে হয়েছিল।১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকারা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে আরটিআইর সম্পূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতের আরটিআইমূলেই প্রমাণিত মাত্র ৪৬২ জনই মামলায় পক্ষভুক্ত ছিলেন। কিন্তু রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের দায়সারা মনোভাবের জন্য ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেআইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়েছে। অন্যদিকে, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে অ্যাডহক পদের চাকরিও নেই। ফলে পরিবারগুলির আয় উপার্জন সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে এই পরিবারগুলি এখন রাজপথে। কিন্তু বিজেপি সরকার অমানবিক। তাই প্রশাসন জল কামান, কাঁদানে গ্যাস সহ লাঠিপেটা করেছে রাজপথে শিক্ষকদের। তবে এদিন শিক্ষক শিক্ষিকারা জানান মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাৎ না করা পর্যন্ত এই গণ অবস্থানে চলবে।এদিকে, শিক্ষকদের ক্ষুদ্র একটি অংশের আমরণ অনশন রাজধানীর ওরিয়েন্ট চৌমুহনিতে প্রায় তিন মাস হতে চললেও রাজ্য সরকারের কোন হেলদোল নেই। রাতের খবর লেখা পর্যন্ত জানা যায় ১০৩২৩ শিক্ষকদের সিটি সেন্টার স্থিত অস্থায়ী মঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল পুলিশ প্রশাসন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.