আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয়ে করোনায় মৃত স্ত্রীর সিলিকনের মূর্তি বানালেন স্বামী

 আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয়ে করোনায় মৃত স্ত্রীর সিলিকনের মূর্তি বানালেন স্বামী
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সম্রাট শাহজাহান নিজের ‘ভালোবাসা’ মুমতাজের মৃত্যুর পর তাঁর জন্য তাজমহল গড়ে তুলেছিলেন। সেখানেই মুমতাজের
দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এমনকী, সেই নিদর্শন যাতে অন্যত্র গড়ে উঠতে না-পারে, সেজন্য সেই সময় কারিগরদের হাতও কেটে নেওয়া হয়। আজ আগ্রা’র সেই তাজমহল
ভারতের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তো পড়েই, তাছাড়া সেটিকে ভালোবাসার প্রতীক হিসাবেও গণ্য করা হয় । এবার এমনই এক নজিরবিহীন ভালোবাসার সাক্ষী থাকল কলকাতা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন স্ত্রী। স্বামীর কাছে তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, যাতে মৃত্যুর পর তাঁর মূর্তি গড়ে দেন তিনি। অবশেষে নিজের প্রয়াত স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন প্রৌঢ় স্বামী। আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্ত্রীর পূর্ণাবয়ব সিলিকন
মূর্তি তৈরি করলেন ৬৫ বছর বয়সী তাপস সান্ডিল্য। কলকাতাতেই বাড়ি তার। বর্তমানে তাপসবাবু একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী । এপ্রসঙ্গে তাপসবাবু জানিয়েছেন, ১০ বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে মায়াপুর ঘুরতে
গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ইসকন মন্দিরে তাদের চোখে পড়ে প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিবেদান্ত স্বামীর পূর্ণাবয়ব মূর্তি। তাপসবাবুর স্ত্রী ইন্দ্রানীদেবীর সেই মূর্তিদেখে অত্যন্ত পছন্দ হয়েছিল। সেই সময় নিজের শেষ ইচ্ছের
কথা তিনি স্বামীকে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তাপসবাবুর আগে যদি তাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হয়, তাহলে তারও যেন ঠিক একইরকম পূর্নাবয়ব মূর্তিগড়ে দেন স্বামী। অবশ্য এত দ্রুত যে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যাবেন, সেটা ঘুণাক্ষরেও
বুঝতে পারেননি তাপসবাবু। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ইন্দ্রানীদেবীর। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে উদ্যোগী হন তাপসবাবু। তিনি এমন শিল্পী
খুঁজতে শুরু করেন, যারা জাদুঘরের জন্য মোমের মূর্তি তৈরি করেন। অবশেষে শিল্পী সুবিমল দাসের খোঁজ পান তাপসবাবু। স্ত্রীর মূর্তি তৈরি করে দেওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ
করেন তাপসবাবু। এরপরই আড়াই লক্ষ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময় ইন্দ্রানীদেবীর সিলিকনের মূর্তি তৈরি করতে রাজি হন সুবিমলবাবু। এবিষয় শিল্পী সুবিমল দাস
জানিয়েছেন, মোমের মূর্তি বেশি বাস্তবিক দেখতে হলেও সিলিকনের মূর্তি তার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হয়। তাছাড়া সিলিকন
মূর্তির রক্ষণাবেক্ষণও অত্যন্ত সহজ। এই দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি দীর্ঘ ৬ মাস ধরে একটু একটু করে ইন্দ্রানীদেবীর সিলিকনের মূর্তি গড়ে ফেলেন। প্রয়াত ইন্দ্রানীদেবীর
চেহারা, চাউনি, হাসি অবিকল ফুটিয়ে তোলেন শিল্পী। ৩০ কেজি ওজনের সেই মূর্তির পরনে রয়েছে একটি সিল্কের শাড়ি, যেটি ছেলের বিয়ের বধূবরণ অনুষ্ঠানের সময় পরেছিলেন ইন্দ্রানীদেবী। এছাড়া স্ত্রীর পছন্দের সোনার হার ও কানের দুল দিয়ে নিজে হাতে তাঁর মূর্তিকে সাজিয়ে তুলেছেন
তাপসবাবু। ইন্দ্রাণীদেবীর সেই মূর্তি এখন ঠাঁই পেয়েছে তাপসবাবুর বাড়ির একটি সোফায়।বহুবছর আগে ভালোবেসে একে অপরের
হাত ধরেছিলেন সান্ডিল্য দম্পতি। এতদিনের হাজার ঝড়- ঝাপটাতেও অটুট ছিল সেই বন্ধন। কিন্তু করোনা অতিমারী ওলট-পালট করে দিয়েছিল তাপসবাবুর জীবন। দীর্ঘদিনের সঙ্গিনীকে কেড়ে নিয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.