আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয়ে করোনায় মৃত স্ত্রীর সিলিকনের মূর্তি বানালেন স্বামী

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে তার কৃত অপরাধের জন্য সাক্ষ্য প্রমাণশেষে আদালত যখন দণ্ড বা সাজা দিয়ে থাকে,তখন তাকে শাস্তি বলে। আদালত কর্তৃক অপরাধীকে দেওয়া এই শাস্তি বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কখনও শারীরিক, কখনও মানসিক, আবার কখনও আর্থিক দণ্ড হিসাবেও শাস্তি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।সাধারণত একটি দেশ তার সমাজব্যবস্থায় কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দুষ্টের দমন করে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই কিছু অভিযুক্ত অপরাধীকে শাস্তি বা দণ্ড প্রদান করে থাকে। সুতরাং শাস্তি হচ্ছে এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া যার দ্বারা আইন ভঙ্গকারীকে নির্দিষ্ট আইনি ধারা ও পদ্ধতিতে দণ্ডিত করা হয়। অর্থাৎ মানুষ যখন নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে কোন কাজ করে, তখনই তাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। কিংবা মানুষ তার নৈতিক স্খলন থেকে যা ঘটায় সেটাই হলো অপরাধ।এই অপরাধ গুরতর কিংবা লঘু দুইই হতে পারে। অপরাধের দায়ে কারাদণ্ড, মৃত্যুদণ্ড, জরিমানার মতো নানা ধরনের শাস্তি রয়েছে। কিন্তু সামান্য অপরাধের দায়ে জেল খাটার মাস মতো ঘটনা আমরা প্রায়শই প্রত্যক্ষ করি। এতে সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে গিয়ে,অনেক ক্ষেত্রেই শাস্তির মাত্রাটা বেশি হয়ে যায় যা অপরাধীকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার পরিবর্তে আরও বেশি অনুশোচনা দগ্ধ করে দেওয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। তাছাড়া ছোটখাটো অপরাধের জন্য অভিযুক্তকে জেল খাটানোর একটি প্রতিহিংসামূলক মানসিকতা কখনও কারও কারও মধ্যে কাজ করে।এতে আদালতগুলোতে যেমন মামলা মোকদ্দমার পাহাড় বাড়ছে, তেমনি আইনি প্রক্রিয়ায় লঘু অপরাধের শাস্তির জন্য সময় অতিরিক্ত নষ্ট হওয়ায় প্রকৃত অপরাধীদের সঠিক সময়ে বিচার হচ্ছে না। এই সমস্ত বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে এবং ক্রমবর্ধমান জটিলতার প্রেক্ষিতে আইনি সাহায্য গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে অনীহা বাড়ছে। সার্বিক উঠে অভি বিএন বলে এই প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি দেশের ৪২টি আইনে সংশোধন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভার অধিবেশনে এই লক্ষ্যে পেশ হয়েছে ‘জন বিশ্বাস বিল’। সরকার চাইছে বর্তমানে যে সমস্ত আইনে ছোটখাটো অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো সংশোধন করে সামান্য অপরাধে জেল খাটার শাস্তি তুলে দিয়ে শুধুমাত্র জরিমানার শাস্তি বজায় থাকুক। আপাতত ঃ এই বিলটি লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে পর্যালোচনার জন্য। কেন্দ্রীয় সরকার এই লক্ষ্যে বর্তমানে ৪২টি আইনের ১৮৩টি ধারায় সংশোধন চাইছে। যেমন ধরা যাক, ব্রিটিশ শাসন আমলে ডাকঘর আইনে বলা ছিল, কোনও পিওন মত্ত অবস্থায় চিঠিপত্র বিলি করলে তাকে ৫০ টাকা জরিমানা করা হবে। কিংবা রেজিস্ট্রি চিঠি বিলি না করে সই জাল করে চিঠি বিলি হয়েছে দেখিয়ে অসত্য তথ্য পরিবেশন করলে সেই পিওনকে ৬মাসের জেলে যেতে হবে। অথবা কারও চিঠি খুলে ফেললে ২ বছর জেল, আবার চিঠি নষ্ট করার প্রমাণ পাওয়া গেলে সেই ডাকপিওনের ৭ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। বর্তমানের প্রস্তাবিত আইন সংশোধিত আইনে কেন্দ্রীয় সরকার পুরো ব্যবস্থটাই তুলে দেওয়ার পক্ষে। যুক্তি হিসাবে কেন্দ্রের বক্তব্য, একজন পিওনের অপরাধমূলক কাজের জন্য আইন আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং এর জন্য ডাক বিভাগের প্রশাসনিক শাস্তি ও বিধি ব্যবস্থাই যথেষ্ট। আবার এটাও দেখা যাচ্ছে, রাস্তার বা ফুটপাথের কোন খাবারের দোকানের খাদ্যের গুণমান যদি পরীক্ষার মাধ্যমে নিম্নমানের প্রামানিত হয় তাহলে ১ লক্ষ টাকা জরিমানার সঙ্গে ৬ মাস পর্যন্ত জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে বর্তমান আইনে। কেন্দ্রীয় সরকার সংশোধিত আইনে এক্ষেত্রে জেল খাটার শাস্তি তুলে দিয়ে জরিমানার পরিমাণ ৩ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা করার পক্ষপাতী। এছাড়া এতকাল ট্রেনে কিংবা রেল স্টেশনে ভিক্ষা করলে আইন অনুযায়ী পুলিশ ডেকে ভিক্ষুকের শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এবার নতুন আইনে বলা হবে, ভিক্ষা করার অনুমতি নেই-এতটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু কেউ যদি ভিক্ষা করতে আসে তাহলে পুলিশকে ডাকার প্রয়োজন নেই। ঠিক এই ধরনেরই মোট ৪২ টি আইনের ১৮৩টি ক্ষেত্রে সংশোধন চাইছে সরকার। এর পরিবর্তে সরকার বলতে চাইছে কম অপরাধের দায়ে জেল খাটার আর প্রয়োজন নেই। বরং শাস্তি হিসাবে জরিমানার পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করলেই হবে। এখানেই কেন্দ্রীয় সরকারের পেশ করা জন বিশ্বাস বিলের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের তরফে মনে করা হচ্ছে কর্পোরেটদের সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই নতুন সংশোধনী আইন আনতে চাইছে সরকার। কারণ সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের অজুহাতে অপরাধকে লঘু হিসাবে দেখিয়ে জেলা বা কারবাসারে পরিবর্তে জরিমানার সুযোগ বৃদ্ধি করে বড় বড় বাণিজ্যিক সংস্থাকে মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার কৌশল নিতেই এই সংশোধনী করলে আইন। তাছাড়া কারাবাসের যাওয়ার ভয় না থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই বিবে অপরাধীরা সামান্য জরিমানাকে পরোয়া না করে বড় ধরনের অন্যায় করলে করতে সাহস পাবে। খাদ্যপণ্যে ভেজাল, ভারতীয় পেটেন্ট আইনের মতো ব্যস্থপনায় এই ধরনের ছাড় মারাত্মক হতে পারে। প্রশ্ন হলো, একজন অপরাধীকে কি অর্থ জরিমানার ভয় দেখিয়ে প্রকৃত অর্থেই অপরাধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.