দরজায় ভোট

 দরজায় ভোট
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভোট ঘনাইয়া আসিয়াছে। প্রায় সকল কিছুই সারা হইতেছে স্বাভাবিকতায়। এইবার বুঝি কেবল ঘোষণা বাকি। ভোট ঘোষণার আগে যে সমস্ত বিষয় বিধি আচার করিতে হয় সকল কিছুই হইতেছে। কমিশনের আধিকারিকদল এক দফায় রাজ্য ঘুরিয়া গিয়াছে। তাঁহারা আসিয়াছিল মূলত প্রস্তুতি প্রয়োজন দেখিতে। যথাসময়ে ভোট করা যাইবে কিনা, কোনও অসুবিধা রহিয়াছে কিনা,ভোট করাইতে কী কী প্রয়োজন হইতে পারে, সকল দিক নিয়া কথা বলিয়া গিয়াছেন রাজ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সহিত। এইবার সেই সকল আধিকারিক আসিতেছেন ১০ জানুয়ারীতে।

218834-ecigujaratpolldate

আর এর পরদিনেই অর্থাৎ ১১ই আসিবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ দল। নির্বাচন কমিশনের এই সফরকে নিয়মমাফিক বলিয়াই জানা যায় । তাঁহারা রাজ্য সফর করিয়া দিল্লী ফিরিয়া গেলে শুরু হইবে ভোট নির্ঘন্ট ঘোষণার কাল গোনা। অর্থাৎ যে কোনও সময়ে ভোট ঘোষণা হইতে পারে। যেইহেতু নির্বাচন কমিশন একসঙ্গে পাঁচ রাজ্যের ভোট করাইতেছে তাই এক সঙ্গে দিল্লী হইতে তারিখ ঘোষণা হইবে। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চলে রহিয়াছে তিন রাজ্য। মুখ্য নির্বাচন কমিশনের ১৬ সদস্যের দল ১১ এবং ১২ রাজ্যে কাটাইয়া ১২ই রওনা হইয়া যাইবে মেঘালয়ের উদ্দেশে।

সেই সূচি মতন ১৩ এবং ১৪ তাঁহারা নাগাল্যাণ্ডে কাটাইবেন। ওই রাজ্যেও ভোট হইবে একই সঙ্গে। ১৪ জানুয়ারী দিল্লী ফিরিয়া যাইবার পর আসিবে ভোট ঘোষণার পর্যায়।রাজ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর এইবার সর্বদলীয় বৈঠক করিল নির্বাচন দপ্তর।এইগুলিও সকলই নিয়মমাফিক বিষয়। নিয়মের বাহিরে অতিরিক্ত বিষয় যাহা নির্বাচন দপ্তর করিতেছে সে হইলো হিংসামুক্ত ভোট এবং সর্বাধিক সংখ্যায় ভোটদানের মিশন। নির্বাচন দপ্তর নির্বাচনে হিংসা লইয়া ব্যগ্রতা দেখাইতেছে। এমনকি এই আমলে উপনির্বাচনে যে হিংসাশ্রয়ী নানা ঘটনা ঘটিয়াছিল তাহা স্বীকার করিয়া লইয়াছেন।

রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে যাহাতে আগেকার সেই সকল রণকৌশল কোনও রাজনৈতিক দল লইতে না পারে তার জন্য নির্বাচন দপ্তরও সতর্কতা অবলম্বন করিয়াছে বলিয়া সাধারণ ভোটারদের আশ্বস্ত করিতেছে। ইহা সত্য যে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক দলের প্রথম পর্বের রাজ্য সফরের পর হইতে রাজ্যে ভোটের জন্য অতিরিক্ত আধাসামরিক বাহিনী আসা শুরু হইয়াছে। নির্বাচন দপ্তর যে হিসাব দিয়াছে তাহাতে এই অবধি ১০০ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী রাজ্যের সীমানায় ঢুকিয়াছে। স্পর্শকাতর চিহ্নিত কিছু কিছু এলাকায় বাহিনী রোড মার্চ করিতেছে।

দপ্তরের হিংসামুক্ত নির্বাচনের আয়োজনে আলোচনা, সেমিনারের বাহিরে আলোচনা যাহাতে ঘরে ঘরে পৌঁছায় সেই উপলক্ষে পৌষ পরবে আলপনা প্রতিযোগিতায় সকল বিধানসভা এলাকায় পুরস্কারের আয়োজন করিয়াছে। উদ্দেশ্য ঘর হইতেই শুরু হউক কাহারো ছেলে যাহাতে ভোট সংক্রান্ত হিংসায় না জড়ায়। রাজ্যে বিশাল হারে ভোটদানের ঐতিহ্য রহিয়াছে। মানুষ ভোটদানের অনুকূল পরিবেশ পাইলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করিতে ভালোবাসেন। নির্বাচন কমিশন নিজেও চাহিতেছে যেন সর্বাধিক সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ হয়। সেই হার কত ? কমিশন বলিতেছে মিশন ৯২ শতাংশ।

full

বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের সহিত সাধারণ মানুষের মনেও আজ প্রশ্ন রহিয়াছে ভোট বাধাহীন, নির্বিঘ্ন হইবেতো। নাকি নিয়মমাফিক সকল বিধিব্যবস্থা শেষ মুহূর্তে মুখ থুবড়াইয়া পড়িবে ? অবাধ ভোট, সুষ্ঠু এবং হিংসাহীন ভোটের দাবি বিরোধী সকল দলের। সিপিএম, কংগ্রেস, মথা সকলেই একবাক্যে এই দাবি তুলিতেছে। ইহাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতবাদ এবং অবস্থানগত দূরত্ব ঘুচিয়া গিয়াছে এক অবাধ ভোটের ইস্যুতে। এই ইস্যু লইয়াই আজ কংগ্রেস সি পি এম যেমন নৈকট্য ধরিয়া রাখিতেছে তেমনি পাহাড়ে একই জমির ভাগীদার হইয়াও মথা ও সিপিএমের মধ্যে কথা হইতেছে। যৌথ বিবৃতি হইতেছে বিরোধী দলগুলির।

এই বিষয়খানা নির্বাচন দপ্তর তথা নির্বাচন কমিশনের জন্য কম চাপের নহে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবাধ ভোটের পরিবেশ চাহিতেছে এই খবর আজ দেশজুড়িয়া রাষ্ট্র হইয়া গিয়াছে। বিষয়টি জাতীয় স্তরের খবর হিসাবে বহুল প্রচারিত, প্রকাশিত। সিপিএম, কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেমন ত্রিপুরা প্রসঙ্গ লইয়া দিল্লীতে সরব হইতেছেন তেমনি আঞ্চলিক দল মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ দিল্লীর যন্তরমন্তরে বসিয়া জাতীয় স্তরের রাজনীতিকদের হুঁশিয়ারি দিয়াছেন। সকল কিছু মিলিয়া ভোট এক্ষণে দরজায় কড়া নাড়িতেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বৃহৎ পার্বণ এই ভোটে সকল দলের সজাগ উপস্থিতি সাধারণ ভোটারকে উজ্জীবিত করিয়া থাকে। সকল মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে গণতন্ত্রের মহিমা মহিমান্বিত হয়। ত্রিপুরা সেই রকম আরও একটি ভোটের নজির তৈরি করুক সম্পূর্ণ হিংসাহীন পরিবেশে, যাহা হইতে পারে অন্য রাজ্যের জন্য নজির।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.