সিপিএম এর অন্দরে জোটদ্বন্দ্ব
এবার সিপিএমের অন্দরে দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব । ত্রিপুরার আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে বস্তুত প্রায় সব দলের মধ্যে এরকম অতি সক্রিয়তা এর আগে কখনও দেখা গিয়েছে বলে মনে হয় না। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন আগামী নির্বাচনে সরকার ধরে রাখা নিয়ে। কর্ণাটক ও ত্রিপুরা দুই রাজ্যের রাজনতিক ভবিষ্যৎ বিপেজি নেতৃত্বের কাছে বিশেষ চিন্তার কারণ হয়েছে। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এই দুই রাজ্যের রণকৌশল কী হওয়া উচিত সেই রাজনৈতিক অ্যাজেণ্ডাগুলি নিয়েই বেশি জোর দেওয়া হবে। একইভাবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ত্রিপুরায় প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ত্রিপুরায় প্রথমবার সরকার গঠন করেও পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ মুখ্যমন্ত্রীকে সম্পূর্ণ করতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই দলীয় দ্বন্দ্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করেন। এই একই ফরমুলা নেওয়া হয়েছিল উত্তরাখণ্ড, গুজরাটেও। অর্থাৎ ভোটের এক বছর আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে অন্য কোনও মুখ সামনে নিয়েআসা। ত্রিপুরাতেও সেই একই মডেল নিয়ে ভোটের প্রস্তুতিতে নেমেছে বিজেপি। আবার গুজরাট মডেলেই স্থির হয়েছে, প্রয়োজনে বিধায়কদের সকলকে প্রার্থী করা হবে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও নতুন মুখ আনার ভাবনা চিন্তা রয়েছে। যাতে মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভ কম হয়। এই ফরমুলা গ্রহণ করে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি সুফল পেয়েছে। বিজেপি কোনওভাবেই চেষ্টার কসুর করছে না সরকার টিকিয়ে রাখার। আর এই প্রেক্ষিতেই সক্রিয় হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএমও ।
কংগ্রেস আভাস দিয়েছে তারা বাংলার মতোই ত্রিপুরাতেও সিপিএমের সঙ্গে জোট গড়তে আগ্রহী। কারণ, সর্বাগ্রে বিজেপিকে ঠেকাতে হবে বলেই কংগ্রেস হাইকমাণ্ডের বার্তা। এহেন অবস্থায় এবার সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্যের প্রস্তাব দেওয়ায় এবং বিজেপি প্রধান প্রতিপক্ষ অর্থাৎ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার পক্ষে সওয়াল করায় দলের অন্দরে জোরদার দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। কারণ, প্রকাশ কারাত শিবির এই কংগ্রেস সখ্যে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, এভাবে একের পর এক রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে যদি অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে জোট করতে হয়, তাহলে সর্বভারতীয় ও রাজ্যস্তরে সিপিএমের কোনও গুরুত্ব থাকবে না। কলকাতায় এই মাসের শেষ সপ্তাহে হতে চলেছে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকে সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট প্রস্তাব নিয়ে ঝড় উঠবে। কারাত শিবিরের যুক্তি হলো, বাংলায় ২০১৬ সাল থেকেই একাধিকবার জোট করা হয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে। কোনও লাভ হয়নি। বরং দল শূন্য হয়েছে। যা চরম এক লজ্জার। আবার ত্রিপুরাতেও সেই একই ভুল করা হবে কেন? সুতরাং জোটপন্থী এবং জোটবিরোধীদের লড়াইয়ে উত্তপ্ত হতে চলেছে সিপিএমের অন্দরমহল।