ইউরোপায় জলের খোঁজে বছর দুয়েকের মধ্যেই রকেট পাঠাচ্ছে ‘নাসা’।
দৈনিক সংবাদ অনলাইন।। এবার প্রাণের সন্ধানে সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপায় অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে দিল নাসা । বৃহস্পতির ‘ চাঁদ ‘ বলে পরিচিত ইউরোপায় প্রাণের উপস্থিতির উপযুক্ত স্থান বলে বহু দিন ধরে মনে করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা । সেই ধারণাকেই বাস্তব রূপ দিতে এবার ইউরোপায় অভিযান । ২০২০ সালেই ইউরোপা অভিযানের খসড়া তৈরি করে ফেলেছিল নাসা । কিন্তু করোনার কারণে যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
ইউরোপায় এই অভিযানের জন্য ৩১ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজনের কথা ২০২০ সালে জানিয়েছিল নাসা । দু’বছরের জন্য পরিকল্পনা পিছিয়ে যাওয়ায় সেই খরচ আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে । করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে । যদিও মাঝেমধ্যে চিনের সংক্রমণ ভাবিয়ে তুলছে বিশ্বকে । এই পরিস্থিতিতেও ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যেই ইউরোপায় অভিযান শুরু করবে নাসা ।
করোনার পরবর্তী পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটেও মহাকাশ গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে । সেইজন্যই নাসাকে এখন বেসরকারি সংস্থাগুলির উপরেই নির্ভর করে চলতে হচ্ছে । ২০২০ সালে যখন ইউরোপা অভিযান প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল তখন ৩১ কোটি টাকা খরচের কথা জানিয়েছিল নাসা । কিন্তু সেইসময় হোয়াইট হাউসের ডোনাল্ড ট্রাম্প আর নতুন করে কোনও অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্তের কথা জানাননি । ফলে গত প্রায় দু’বছর ধরে ইউরোপা অভিযান বন্ধ হয়ে রয়েছে ।
নাসার এই আর্থিক দুরাবস্থার মুহূর্তে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ইলন মাস্ক । তিনি ইউরোপা অভিযানের জন্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা নাসাকে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । এই অভিযানে মাছের মতো কিছু ‘ সফট রোবট ’ ইউরোপার সমুদ্রে পাঠাতে চান বিজ্ঞানীরা । প্রাণের অনুসন্ধানের জন্য ইউরোপার বুকে জলস্তর জুড়ে এরা সাঁতার কাটবে । ইউরোপায় কোনও মহাকাশ যান অবতরণের পরিকল্পনা নেই নাসার । শুধুমাত্র প্রাণের সন্ধানের জন্য যেসমস্ত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হবে সেইগুলিকে রকেটের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে । বৃহস্পতির কক্ষপথ ধরে চক্কর কাটতে থাকবে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ । সেটি বৃহস্পতির কক্ষপথ বরাবর থাকায় তার দায়িত্ব থাকবে শুধুমাত্র ইউরোপার পৃষ্ঠের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করার উপর ।
ইউরোপায় জলস্তর নিয়ে উৎসাহ জুগিয়েছে দক্ষিণ মেরুর গ্রিনল্যান্ডের পরিবেশ । গ্রিনল্যান্ডে যেভাবে বরফের পাহাড় অবস্থান করছে ঠিক সেইভাবেই রয়েছে ইউরোপাতে বরফের পাহাড় । এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ‘ নেচার কমিউনিকেশন জার্নাল ‘ নামের সাময়িকীতে নাসার বিজ্ঞানীরা লিখেছেন , ‘ গ্রিনল্যান্ডে বরফের পাহাড় যেমন এম আকারের মতো , ঠিক তেমনই ইউরোপায় বরফের পাহাড়কেও এম অক্ষরের মতো দেখতে । ‘ এই একটা ব্যাপারে মিল পেয়েই মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নজরে ইউরোপা , এমনটা নয় । ১৯৯০ সালে যখন বৃহস্পতির একেবারে গা ঘেঁষে নাসার পাঠানো মহাকাশযান গ্যালেলিও উড়ে গিয়েছিল তখনই যে ছবি নাসার বিজ্ঞানীদের হাতে এসেছে তার তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত , হিমশৈলের পাদদেশ থেকে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার নিচে জলস্তর আছে । গ্রিনল্যান্ডেও ঠিক একইভাবে জলস্তর রয়েছে ।
এই দুই মানচিত্রের হুবহু মিল পাওয়ার পরেই ইউরোপাকে পাখির চোখে দেখছেন এখন নাসার বিজ্ঞানীরা । জলের সন্ধান যদি ইউরোপায় মেলে তাহলে আগামী দিনে সেইখানে জীবনের সন্ধানও মিলতে পারে । আগামী দু’বছরের মধ্যে ইউরোপায় যে রকেটটি যাবে সেখানে গ্রিনল্যান্ডে যেমন বরফভেদী র্যাডার ব্যবহার করা হয়েছিল সেইরকমের র্যাডার বৃহস্পতির উপগ্রহটিতে পাঠানো হবে । এই র্যাডারগুলির কাজ থাকবে ভূপৃষ্ঠের কত নিচ পর্যন্ত জলের স্তর রয়েছে তার নির্দিষ্ট ছবিকে প্রকাশ করা ।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার’এ এক বিজ্ঞানী জানিয়েছেন , বরফ পৃষ্ঠের অক্সিজেনের ৮৬ শতাংশ রয়েছে ইউরোপার মহাসাগরগুলিতে । সুতরাং তারা এই মুহূর্তে প্রাণের অস্তিত্বকে পুরোপুরি অস্বীকার করছেন না । ওই গবেষণাপত্রে অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী তথা ২০২৪ সালে ইউরোপার অভিযানে নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক মার্ক হেসি বলেছেন , বৃহস্পতির মধ্যে যে অভিকর্ষের শক্তি রয়েছে তাতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার পক্ষে যথেষ্ট । ভিতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন রয়েছে , তা কখনওই কনকনে ঠান্ডা নয় ।