আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গুরুতরঅভিযোগ মার্কিন সংস্থার, শেয়ারে ধস
এক সপ্তাহ আগেও তিনি ছিলেন বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি। তিনি আদানি সাম্রাজ্যের কর্ণধার গৌতম আদানি। ২০১৪ সালের
লোকসভা নির্বাচনের আগে যার চার্টার্ডবিমানে চড়ে দেশজুড়ে প্রচার
করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। গত ২৪ জানুয়ারী গৌতমকে টপকে ধনী- তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন জেফ বেজোস। এর মধ্যে আচমকাই ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে সামনে
এসেছে আমেরিকার লগ্নি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গরিসার্চের একটি বিস্ফোরক রিপোর্ট! যদিও আদানি গ্রুপের তরফে কড়া ভাষায় ওই রিপোর্টের বিরোধিতা করা হয়েছে। সংস্থার তরফে বৃহস্পতিবারই জানানো হয়, ক্ষতিকারক উদ্দেশ্য নিয়েই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গোষ্ঠীকে কালিমালিপ্ত করেছে। রিপোর্টটি প্রকাশের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদানিরা বলেছে, ‘আমরা ভারত ও আমেরিকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই
সময় বাজারে ফের শেয়ার (এফপিও)
বেচে ২০,০০০ কোটি টাকা তহবিল সংগ্রহের তোড়জোড় শুরু করেছে আদানি এন্টারপ্রাইজেস। ইস্যু খুলবে ২৭ জানুয়ারী, বন্ধ হবে ৩১ তারিখ। এই শেয়ার বিক্রির উদ্যোগকে বানচাল করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যে প্রচারের মাধ্যমে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হচ্ছে।’ রিপোর্টপ্রসঙ্গে
আদানিদের বক্তব্যের নির্যাস, এটি বিদ্বেষপরায়ণ, একতরফা এবং তাদের
বদনাম করার চেষ্টা। এর স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণ নেই। আদানিদের তরফে আরও বলা হয়েছে, এই রিপোর্টদেখে তারা হতবাক। তবে আদানিদের তরফে এমন সাফাই দেওয়া হলেও তা লগ্নিকারীদের ভরসা জোগাতে
পারেনি। কারণ রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই আদানি গ্রুপের ছাতার তলায় থাকা প্রতিটি সংস্থার শেয়ার দর শুক্রবার বাজার খুলতেই গোত্তা খেয়ে নিচে নামে। আদানি গ্রুপের শেয়ারের দর গড়ে ২০ শতাংশ ধসে যায়। বিএসই-র অন্তর্ভুক্ত আদানি
ট্রান্সমিশনের দর ৮.৮৭ শতাংশ পড়ে হয় ২৫১১.৭৫ টাকা। আদানি পোর্টস অ্যান্ড সেজ-র শেয়ারের দর নামে ৬.৩০ শতাংশ, আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারে ৫.৫৯ শতাংশ, আদানি উইলমার ও আদানি
পাওয়ারের দর পড়ে ৫ শতাংশ হারে। আদানি গ্রিন এনার্জির পড়ে ৩.০৪ শতাংশ ও আদানি এন্টারপ্রাইজ়েসের ১.৫৪ শতাংশ। সাম্প্রতিকতর সময়ে অম্বুজা সিমেন্ট, এসিসি এবং এনডিটিভি-কে কিনেছেন গৌতম আদানি। ধসের হাত থেকে তারাও রক্ষা পায়নি। সিমেন্ট সংস্থা দুটির দর ৭ শতাংশের বেশি পড়েছে। এনডিটিভি নেমেছে ৫ শতাংশ।
এই সূত্রে ভারতের শেয়ার বাজারেও নামে বড় ধস। ৭০০ পয়েন্ট গোত্তা খায় সেনসেক্স। ধুঁকতে শুরু করে নিফটিও। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই আদানি
গ্রুপের শেয়ারে মারাত্মক ধস নামে বলে বিশ্লেষকদের বক্তব্য। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানিদের সম্পর্কে রিপোর্টে কী বলেছে? এক কথায়, বিস্ফোরক অভিযোগ। বলা
হয়েছে, গত এক দশক ধরে (তথা মোদি জমানায়) আদানি গোষ্ঠী তাদের সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম কৃত্রিম ভাবে বাড়িয়ে চলেছে।
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গৌতম আদানির ১২,০০০ কোটি ডলার (প্রায় ৯,৭৯,৮০০ কোটি টাকা) নিট সম্পদের মধ্যে ১০,০০০ কোটি
ডলারই এসেছে গত তিন বছরে! দামে কারচুপির মাধ্যমে শেয়ার সম্পদ বাড়িয়ে-চড়িয়ে দেখানোর ফলেই এমন উল্কাসদৃশ বৃদ্ধি। গত দশ বছরে আদানিদের সম্পদে গড় বৃদ্ধির পরিমাণ ৮১৯ শতাংশ। এর পাশাপাশি
হিসাবে জালিয়াতির অভিযোগ এনে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ মরিশাস, আরব আমিরশাহীর মতো আয়কর ছাড়ের সুবিধা মেলে এমন কিছুদেশে আদানি পরিবারের মালিকানাধীন কিছু ভুয়ো সংস্থার কথা উল্লেখ করেছে। রিপোর্টে আমেরিকায় আদানিদের লগ্নি নিয়েও অভিযোগ তোলা হয়েছে। হিন্ডেনবার্গরিসার্চদাবি করেছে, দুই বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে তারা জেনেছে, আদানিরা ভারতীয় শিল্প গোষ্ঠী হিসাবেও জালিয়াতি
করেছে। তারা বলেছে, সেগুলির মাধ্যমে বেআইনি লেনদেন, কর ফাঁকি ও আইন ভেঙে নথিভুক্ত সংস্থা থেকে অন্যত্র টাকা সরানোয় লিপ্ত ছিল আদানি গোষ্ঠী। হিন্ডেনবার্গের
দাবি, গবেষণার স্বার্থে তারা কয়েক ডজন তথ্যাভিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। যাদের মধ্যে আদানি গোষ্ঠীর কয়েক জন প্রাক্তন উচ্চপদস্থকর্তাও আছেন। পর্যালোচনা করা হয়েছে কয়েক হাজার নথি। খতিয়ে
দেখা হয়েছে প্রায় আধ ডজন ভারতীয়
ওয়েবসাইট। বস্তুত বিস্ফোরণেই মতোই
মার্কিন সংস্থার প্রতিবেদন ভারতীয় শেয়ার বাজারে আছড়ে পড়েছে। শুক্রবার বাজার খোলার তিরিশ মিনিটের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের পকেট থেকে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা হাওয়ার মতো উবে যায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সত্যাসত্য পরের
ব্যাপার, আদানিদের সাদা পোশাকে যে ভাবে মার্কিন গবেষণা সংস্থা কালির দাগ লেপে দিয়েছে, সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বাজেটের আগে বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এদিন বাজার খোলার পর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ৩০ শেয়ারের বিএসসি সূচক তথা
সেনসেক্স ৮২১.৭০ (১.৩৬ শতাংশ) ৫৯,৩৬১.১৫-তে নেমে যায়। বাছাই করা ৫০ শেয়ারের সূচক নিফটি ১০৪ পয়েন্ট কমে ১৮,৮৭৮.৯৫-এ নেমে যায়। তবে মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ সূচকগুলি সামান্য বেড়েছে।