আয়করে বিপুল ছাড় মধ্যবিত্তের
অবশেষে এলো সুখবর। বিগত নয় বছর ধরেই মধ্যবিত্ত অধীর প্রত্যাশায় প্রতিটি বাজেটের প্রাক্কালে প্রার্থনা করেছে আয়করে যাতে একটু ছাড় পাওয়া যায়। বহু জল্পনাকল্পনা হলেও আদতে সেই আশা পূরণ হয়নি। কৃষক পেয়েছে। গরিব পেয়েছে। কর্পোরেট পেয়েছে। ব্যবসায়ী পেয়েছে। একমাত্র চাকুরিজীবী মধ্যবিত্ত সেভাবে কোনও উপহার পায়নি। অবশেষে দ্বিতীয় মোদি সরকারের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে উপহার পাওয়া গেল। তবে নতুন যে উপহারগুলি দেওয়া হলো, তার সবই নতুন তিন বছর আগে চালু হওয়া করব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে একটি শর্তের ধোঁয়াশা রয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ভারতের ব্যক্তিগত আয়কর কাঠামোয় দুটি সমান্তরাল ব্যবস্থা চালু রয়েছে। একটি পুরনো প্রথা। অর্থাৎ স্ট্যাণ্ডার্ড ডিডাকশন, করছাড়, দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করা হলে করছাড় পাওয়ার সুযোগ ইত্যাদি। কিন্তু ২০২০ সালের বাজেট থেকে শুরু হয়েছে একটি নয়া করব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় পুরনো কর কাঠামোর তুলনায় কিছু আয়কর হার কম। কিন্তু সমস্যা হলো, এই কর কাঠামোয় কোনওরকম করছাড় নেই। অর্থাৎ দীর্ঘকাল থেকে মধ্যবিত্তের যে অভ্যাস, সেই করছাড় পেতে কখনও ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প, কখনও এলআইসি, কখনও গৃহঋণ, স্বাস্থ্যবিমা এবং সাম্প্রতিকালের যে ন্যাশনাল পেনশন স্কিম ইত্যাদিতে লগ্নি তথা সঞ্চয় করার প্রথা বন্ধ হয়ে যাবে এই নয়া ব্যবস্থায়। নয়া কর কাঠামো সম্ভবত সেই কারণেই সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়নি। নগণ্য সংখ্যক করদাতা এই ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছেন কর প্রদানের ক্ষেত্রে। সিংহভাগ মানুষই রয়ে গিয়েছেন পুরনো কর প্রদান ও করছাড় প্রথায়। সম্ভবত সেই কারণেই অর্থমন্ত্রী এবার একঝাঁক করছাড়ের উপহার তথা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বেশি করে নয়া করকাঠামোয় আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। আর পক্ষান্তরে কোনও রকম করছাড় পুরনো প্রথায় দেওয়া হয়নি। এই মনোভাব থেকেই বার্তা পাওয়া যায়। যে, আগামীদিনে দুটি করব্যবস্থা আর থাকবে না। পুরনো কাঠামোটি বন্ধই করে দেওয়া হবে ধীরে ধীরে। কী কী আয়কর ছাড় দেওয়া হয়েছে আজ বাজেটে ? নতুন কর ব্যবস্থাকে যদি করদাতারা গ্রহণ করেন, তাহলে তারা সরাসরি সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে করছাড়ের সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ কোনও কর দিতে হবে না বার্ষিক সাত লক্ষ টাকা আয়ের উপর। পাশাপাশি কর সংক্রান্ত যে ধাপগুলি ধার্য করা হয়েছিল ২০২০ সালে, সেই স্তরের নববিন্যাস ঘটানো হয়েছে। এখন এই নয়া ব্যবস্থায় রয়েছে ছয়টি করের ধাপ। এবার সেটি হলো পাঁচটি ধাপ। তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে কোনও কর দিতে হবে না।
৩ লক্ষ ১ টাকা থেকে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে কর প্রযুক্ত হবে ৫ শতাংশ। ৬ লক্ষ ১ টাকা থেকে ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রযুক্ত কর হবে ১০ শতাংশ। ৯ লক্ষ ১ টাকা থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে কর প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ। ১২ লক্ষ ১ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করের হার হবে ২0 শতাংশ। ৫ লক্ষ টাকার বেশি বার্ষিক আয় হলে কর ধার্য হবে যথারীতি ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ যা এখনও আছে। এসবের সঙ্গেই নয়া সুখবর হলো, নতুন কর ব্যবস্থায় আগে যে স্ট্যাণ্ডার্ড ডিডাকশন ছিল না, এবার সেই স্ট্যাণ্ডার্ড ডিডাকশন চালু হবে। ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের করদাতারা যেহেতু কোনও করছাড় পাচ্ছেন না, তাই।।তাদের সামান্য উপহার
হিসেবে স্ট্যাণ্ডার্ড ডিডাকশন দেওয়া হচ্ছে ৫২ হাজার টাকা। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, এই আয়কর ছাড়ের জন্য সরকারের বছরে করসংগ্রহ বাবদ রাজস্ব ক্ষতি হল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, আগামী আর্থিক বছর থেকে আয়কর প্রদানের ক্ষেত্রে সকলকেই নতুন কর ব্যবস্থায় নিয়ে আসা হবে। যদি কেউ পুরনো ব্যবস্থায় থাকতে চান, তাহলে সেটা আগাম জানাতে হবে।