সংকল্পপত্র-২৩

 সংকল্পপত্র-২৩
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

তেইশের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে শুক্রবার ‘সংকল্পপত্র’ ঘুরিয়ে ইশতেহার প্রকাশ করল শাসক দল বিজেপি। এদিন রবীন্দ্রভবনে রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে এই সংকল্পপত্রের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। গত ২০১৮ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে দেওয়া বিজেপির ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা এখনও অব্যাহত আছে।এটাও সম্ভবত রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। কেননা, এর আগে কোনও রাজনৈতিক দলের ঘোষিত ইস্তাহার নিয়ে এতটা আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। যতটা চর্চার মধ্যে উঠে এসেছে পদ্মশিবিরের ২০১৮ সালের ভিশন ডকুমেন্ট।

এর আগে নির্বাচনে যত ইস্তাহার প্রকাশ হয়েছে, রাজ্যবাসীর স্মরণে – মননে কিছুই নেই। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই মানুষ ভুলে যেত ইস্তাহারের কথা। কিন্তু এই প্রথম দেখা গেল রাজ্যে কোনও রাজনৈতিক দলের দেওয়া ভিশন ডকুমেন্ট নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলতে। সম্ভবত গত পাঁচ বছর ধরে বামেরা প্রধান বিরোধী দল আছে বলে। তারাই গত পাঁচ বছর ধরে বারবার রাজ্যবাসীকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালিয়েছে,২০১৮ বিজেপির ভিশন ডকুমেন্টে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ২০১৮ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি সরকার গত পাঁচ বছরে কতটা পালন করেছে? বিরোধীরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে আমজনতার কাছে।

জনতা জনার্দনই এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী ইভিএমে মানুষ জবাব দেবেন। জবাবের ফলাফল জানা যাবে আগামী ২ মার্চ।পাঁচ বছর গড়িয়ে আবার ভোট আসন্ন। রাজনেতারা গণদেবতার দুয়ারে দুয়ারে হাতজোড় করে মাথা ঠেকাচ্ছেন আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য। সেই সাথে গণদেবতাকে আকৃষ্ট করতে যে যার মতো প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। প্রতিশ্রুতির নমুনা দেখে মানুষও হাঁপিয়ে উঠছেন। অনেকের কথা শুনে আবার আমজনতা হাসি চাপা রাখতে পারছে না। যেমন কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতা বলে বেড়াচ্ছেন,ক্ষমতায় এলে রাজ্যের আটটি জেলায় আটটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে দেবেন! অনুগামীরা শুনে আবার হাততালিও দিচ্ছেন।

সে যাই হোক, ২০২৩ ভোটকে সামনে রেখে শাসক দল তাদের ‘সংকল্পপত্র’ প্রকাশ করেছে। ২০১৮-এর মতো এবারও রয়েছে চমক। বর্তমান প্রজন্ম, মহিলা এবং জনজাতি ভোট – এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জনজাতিদের মন পেতে পাল্টা চমক দিয়েছে পদ্মশিবির। প্রস্তাবিত ১২৫তম সংবিধান সংশোধনী বিলের এক্তিয়ারের মধ্যে এডিসিকে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন এবং অতিরিক্ত আইনি, নির্বাহী, প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষমতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জনজাতি পরিবারে বছরে পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা, উপজাতীয় সংস্কৃতি ও অধ্যয়নের গবেষণা, প্রচার ও সংরক্ষণের জন্য গণ্ডাছড়ায় মহারাজা বীরবিক্রম মানিক্য উপজাতি বিশ্ববিদ্যালয়, জনজাতি সমাজের প্রধান সমাজপতিদের সাম্মানিক ভাতা প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

61OgrIEL7EL._SX679_

এছাড়াও রয়েছে একাধিক চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পদ্মশিবিরের এই ‘সংকল্পপত্র’ প্রকাশের পর পাহাড়ে আচমকাই হাওয়া থমকে গেছে।বেসুর শোনা যাচ্ছে।গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড স্লোগানের জনকের মুখেও আচমকা উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে। তিনি নিজে টুইট করে দাবি করেছেন, ‘দেরিতে হলেও বিজেপির ইস্তাহারে আমার অভিমত উঠে এসেছে…’। স্বঘোষিত রাজার এই টুইট বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজ্য রাজনৈতিক মহল। অনেকে আবার এই ইঙ্গিতপূর্ণ টুইটকে অন্যভাবে ব্যখ্যা করছেন। তাদের মতে, গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের ডাক দিয়ে তিনি যে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছিলেন, আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছিলেন – বেগতিক বুঝে এখন নিজেই পালাবার পথ খুঁজছেন। সংকল্পপত্রের মধ্য দিয়ে পদ্মশিবিরই সেই পথ করে দিলো না তো ?

QT-haryana-election
Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.