রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
রাজনীতি ও বাঙালি!
ত্রিপুরা বিধানসভার ত্রয়োদশ নির্বাচন শেষ হয়েছে। এখন ফলাফল ঘোষণার জন্য গোটা রাজ্যবাসী আধীর আগ করছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ২ মার্চ ভোটগণনা হবে। এদিন দুপুর বারোটার মধ্যে মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যাবে প্রত্যাবর্তন না পরিবর্তন। কিন্তু ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পর গণনা পর্যন্ত দীর্ঘ সময়। প্রায় অর্ধমাস। এই সময়টা অনেকের কাছেই দীর্ঘ এক বছর বলে মনে হচ্ছে।বিধানসভা নির্বাচন মানেই হাই ভোল্টেজ রাজনৈতিক লড়াই। এই নির্বাচনে রাজ্যে সরকার প্রত্যাবর্তন ও পরিবর্তনের বিষয় জড়িয়ে থাকে। ক্ষমতার এই লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক চাপানউতোর সবথেকে বেশি।
আর এই চাপানউতোর থেকেই রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সেই পরম্পরা আজও অব্যাহত। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলি এবং দলের নেতা-নেত্রীরা মানুষকে সম্ভবত বোকা ভাবেন বলেই হয়তো তারা নিজের মুখটা আয়নায় দেখতে পান না। দেখতে পেলেও নির্লজ্জের মতো সেটা এড়িয়ে যেতে পারেন, কারণ তাদের লজ্জা শরম, নীতি-আদর্শ-নৈতিকতা বলতে কিছুই নেই। তাই তারা অনর্গল অসত্য বলতে পারেন। কালোকে সাদা আর সাদাকে কালো বলতে পারেন। অনর্গল অসত্য বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেন। তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে সত্যকে চাপা দিতে পারেন। পরিস্থিতির নিরিখে এরা খুব সহজেই নিজেদের অবস্থান বদল করে নিতে পারেন।
আচমকাই এরা নিজেদের স্বভাব-চরিত্র এবং ভোলবদল করে নিতে পারেন। শরীরের পোশাক পাল্টানোর মতো এরাও দল পরিবর্তন করে নিতে পারেন। সকালে একদলের ঝাণ্ডা, বিকালে আরেক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে নিয়ে হাঁটতে পারেন। সময়ে তারা সাধু সাজেন, যেন ভাজা মাছটি খুঁটে খেতে পারবেন না। তারা মুখে বলেন এক কথা, অথচ মনে থাকে অন্যটা। বর্তমান সময়ে এ সবই রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্য। এই নিয়ে কোনও দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না।কথায় বলে রাজনীতি নাকি বাঙালির রক্তে। জল ছাড়া মাছের যে অবস্থা। ঠিক তেমনি রাজনীতি ছাড়া বাঙালি কিছু ভাবতেই পারে না। সেই কারণেই হয়তো দেশের দুই বাঙালি প্রধান রাজ্যে রাজনীতি নিয়ে এত আগ্রহ।
রাজনীতি নিয়ে এত হানাহানি, রেষারেষি, মারামারি, খুন, সন্ত্রাস। হ্যাঁ, এই কথা বলতে কোনও দ্বিধা নেই, গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা এই দুটি রাজ্য ছাড়া দেশের আর কোনও রাজ্যে রাজনীতি নিয়ে এতোটা সন্ত্রাস, খুনোখুনি নেই। এই দুটি রাজ্যে রাজনীতির এক অদ্ভুত বাতাবরণ। যেখানে দুই ভাইয়ের মধ্যেও বিভেদ তৈরি করেছে। পরিবারে বিভেদ, সমাজে বিভেদ, সর্বত্র বিভাজনের রেখা টেনে দিয়েছে রাজনীতি। পরিবারের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখের আলোচনাতেও ঢুকে পড়ছে রাজনীতি। এটা বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, এই দুটি রাজ্যে সবকিছুকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, বিবেচনা করা হয়। মনে হয় প্রত্যেকের চোখে রাজনৈতিক চশমা রয়েছে।
মগজটাও রাজনীতির পাকে আবদ্ধ।এর মধ্যে সবথেকে বিস্ময়কর হচ্ছে, রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা কিন্তু সকলেই আছে দুধে-ভাতে। প্রতিপক্ষ দল হলেও তারা একে অপরের শুভানুধ্যায়ী। একে অপরের ভালো-মন্দে জড়িয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা দেখার মতো। একে অপরের আপদে-বিপদে ছুটে যান। তাদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই। যতসব সমস্যা, বিরোধ সবই কেবল নীচু স্তরে। নীচু স্তরের সাধারণ কর্মী, সমর্থকরা একে অপরের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। এরা নিজেরাই মারামারি করছে। একে অপরের রক্ত ঝরাচ্ছে।অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করছে। চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে।ভাই ভাইকে খুন করছে। আর নেতারা শুধু সেজেগুজে ক্যামেরার সামনে ফটোসেশন করে চলেছে। এই দমবন্ধকর পরিস্থিতি ও বদনাম থেকে বাঙালি কবে মুক্তি পাবে? সেটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন। তবে একটা আবেদন অবশ্যই করবো – বন্ধ হোক এই ঘৃণ্য রাজনীতি।