লাশের রাজনীতি!

 লাশের রাজনীতি!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গণতান্ত্রিক ভারতের দেশীয় রাজনীতিতে অনেক ধরনের রাজনীতির প্রচলন রয়েছে।এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লাশের রাজনীতি’। কথাটা বলতে এবং লিখতে সঙ্কোচবোধ হলেও এটাই বাস্তব। রাজনৈতিক সন্ত্রাসে মৃত্যু, তারপর সেই মৃত্যুকে নিয়ে এবং মৃতব্যক্তির দেহ নিয়ে বাজার গরম করা।এটা ভারতীয় রাজনীতিরই একটা অঙ্গ বলে মনে করেন রাজনৈতিক পন্ডিতেরা।এই ধরনের রাজনীতির একটাই উদ্দেশ্য, প্রতিপক্ষকে হেয় করে জনতার আবেগ, হাওয়া যা-ই বলি না কেন, সেটাকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার প্রয়াস। এই ধরনের রাজনীতি ত্রিপুরাবাসী বহু দেখেছেন। বলতে গেলে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলিকে সাধারণ মানুষ একধরনের বিশেষ পাখি জাতীয় প্রাণীর সাথেও তুলনা করেন। সম্ভবত ওই বিশেষ পাখি জাতীয় প্রাণীর আচার আচরণ বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির সাথে অনেকাংশে রাজনৈতিক দলগুলির আচার-আচরণ বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির মিল খুঁজে পাওয়া যায় বলেই হয়ত এমন ধারণার জন্ম হয়েছে।এ প্রসঙ্গ উত্থাপনের একটাই কারণ, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিদিন যে সমস্ত ঘটনা ঘটে চলেছে, ওইসব ঘটনাই কি রাজনৈতিক? নাকি প্রতিটি ঘটনাকে রাজনৈতিক রূপ, রাজনৈতিক রং দেওয়া হয়? উত্তরটা সকলেরই জানা আছে।

এ নিয়ে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সদ্য রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন শেষ হয়েছে।ভোটের গণনা এখনও অনেকটা সময় বাকি আছে। এরই মধ্যে গোটা রাজ্যে একটা অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভোট শেষ হতেই রাজ্যের কলঙ্কিত সংস্কৃতির প্রয়োগ জায়গায় জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। এর মধ্যে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই যে রাজনৈতিক, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। সুযোগসন্ধানী যারা,তারা বরাবরই সুযোগের জন্য উপেক্ষা করে থাকে।প্রচলিত কথায় ঝোপ বুঝে কোপ মারার’ মতো। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলি এবং নেতা নেত্রীরা তো সুযোগসন্ধানীর তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছেন।

পরিবারে দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য, সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মান অভিমানের বিরোধ, বাড়ির সীমানা নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে বিরোধ, পাওনা ও লেনদেন সংক্রান্ত ঝামেলাকেও কীভাবে রাজনৈতিক রূপ, রং দেওয়া যেতে পারে ত্রিপুরাবাসী এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।ভোট শেষ হওয়ার পর, এমনই এক অবাঞ্ছিত হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে শনিবার রাতে কল্যাণপুরে। এই ঘটনায় আহত এক ব্যক্তির জিবিতে মৃত্যু হয়েছে শনিবার ভোররাতে অর্থাৎ রবিবার সকালে। খোয়াই জেলা পুলিশ এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করে জানিয়েছেন এই ঘটনা রাজনৈতিক নয়। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া থেকে দুই প্রতিবেশী পরিবারের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনার পেছনে মূল কারণ হলো, বর্তমানে সরকারের পাঁচ বছরে মৃত ব্যক্তি কোনও সুযোগসুবিধা পাননি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর পাননি ইত্যাদি। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়রাও একই কথা বলেছেন। আত্মীয়দের দাবি, মৃত ব্যক্তি প্রায়ই নেশাগ্রস্ত হয়ে সরকারী সুযোগসুবিধা না পাওয়ার ক্ষোভ মেটাতেন গালিগালাজ করে। শনিবার রাতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। কিন্তু সেদিন পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নেয়। সুযোগ বুঝে প্রধানের বাড়িতে ঢুকেই হামলা চালিয়ে বসে। এমনটাই অভিযোগ। পাল্টা হামলায় ওই ব্যক্তির মাথায় চোট লাগে। গুরুতর আহত ওই ব্যক্তিকে সাথে সাথে খোয়াই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে জিবি হাসপাতালে।

কিন্তু ভোররাতে তার মৃত্যু ঘটে।এর পরেই শুরু হয় অন্য খেলা। স্পষ্ট করে বললে শুরু হয়ে যায় লাশের রাজনীতি। যার জেরে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। রাজধানীর অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম সড়ক ঘন্টার পর ঘন্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। দুপুর থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত মঞ্চস্থ হয় রাজনৈতিক ড্রামা। প্রশ্ন হচ্ছে, এই রাজনীতি আর কতদিন চলতে থাকবে? জীবিত থাকতে যে মানুষটির খোঁজ রাখেনি কেউ, অবাঞ্ছিত ঘটনায় মৃত্যুর পর সেই মানুষটিকে নিয়ে প্রায় দিনভর চললো রাজনৈতিক ড্রামা। হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে এটা কীসের রাজনীতি? চিরতরে বন্ধ হোক লাশের রাজনীতি। বন্ধ হোক সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি। এটাই একমাত্র কাম্য।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.