রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
দ্বিতীয় ইনিংস
গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড স্লোগান তুলে রাজ্য ভাগের কথা বলে সকল জনজাতিদের আবেগ উসকে দিয়ে এডিসির ক্ষমতা দখল করেছিলেন প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। তখন জনজাতিদের এমনভাবে মগজ ধোলাই করা হয়েছিলো, যেন এডিসি হাতে এলেই চ্যানেলগুলি গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের দাবি পূরণ হয়ে যাবে। জনজাতিদের ভাগ্য বদল হয়ে যাবে।জনজাতিদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। জনজাতিরা একেবারে আলাদিনের প্রদীপ হাতে পেয়ে যাবেন। বুবাগ্রার কথায় বিশ্বাস করে জনজাতিরা এডিসি নির্বাচনে মন খুলে ভোট দিলেন। ক্ষমতায় এলো বুবাগ্রার দল তিপ্রা মথা।
প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে, এডিসির ক্ষমতায় তিপ্ৰা মথা। কিন্তু জনজাতিদের অবস্থা যেখানে ছিলো, সেখানেই আছে।
এরপর আওয়াজ উঠলো, রাজ্যের ক্ষমতায় না এলে গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড হবে না। জনজাতিরা আবার বিশ্বাস করলো। স্পষ্ট করে বললে, এক অলিক স্বপ্নের মায়াজালে জনজাতিদের আবদ্ধ করে তাদের বিশ্বাস করানো হলো। উগ্র জাত্যাভিমানের সুরসুরি দিয়ে ফের জনজাতিদের আবেগ উস্কে ঘোলাজলে মাছ শিকার করতে নামলেন তথাকথিত বুবাগ্রা। গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের সাথে এবার খুবই চতুরতা ও কৌশলে যুক্ত করে দিলেন সাংবিধানিক অধিকারের দাবি। কারণ তিনি ভালো করেই জানেন গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড কোনও দিনই হবে না।
এটা অবাস্তব। এরপর আওয়াজ তুললেন, গত পঁচাত্তর বছরে কেউই রাজ্যের জনজাতিদের জন্য কিছুই করেনি। কিন্তু নিজের পিতা স্বর্গীয় কিরীট বিক্রম দেববর্মণ দীর্ঘদিন সাংসদ ছিলেন। মা বিভুকুমারী দেবী দীর্ঘদিন এই রাজ্যে মন্ত্রী ছিলেন। তারা তাহলে কী করলেন? এই প্রশ্নের জবাব সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেলেন বুবাগ্রা। ২০২৩ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই একেবারে বাঘের পিঠে চড়ে বসলেন তিনি।জনজাতিদের আবেগকে হাতিয়ার করে ল্যাজে খেলালেন সব রাজনৈতিক দলকে। সকালে এক কথা, বিকেলে এক কথা, রাতে আবার আরেক কথা এইভাবেই নিজেকে হালকা করে তুললেন। ভোটের আগে সুর চড়ালেন, যে দল লিখিত দেবে তাদের সাথেই জোট করবেন।
না, কেউ আর লিখিত দেয়নি। ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একাই নির্বাচনে লড়াই করলেন। ভেবেছিলেন, ভোটের পর তিনিই হবেন কিংমেকার। তার কাছেই আসতে হবে সরকার গড়তে। কিছুই হলো না। ভোট গণনার পর দেখা গেল, ৪২ আসনের মধ্যে জয় হয়েছে মাত্র ১৩ আসনে। কিংমেকার হয়ে উঠার স্বপ্ন নিমিষে ধুলিসাৎ হয়ে গেল। অপর দিকে বিজেপি-আইপিএফটি জোট জয়ী ৩৩ আসনে। সরকার গড়তে এই সংখ্যা যথেষ্ট।এদিকে বাঘের পিঠে চড়ে বসা বুবাগ্রার অবস্থা ততক্ষণে কাহিল হয়ে উঠেছে। ঘরেবাইরে চাপের মুখে ব্যতিব্যস্ত বুবাগ্রা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলো কখন শাহী ডাক আসে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা রাজ্যে এসে বলতে দেরি, অমনি সামাজিকমাধ্যমে বুবাগ্রা বার্তা দিলেন ‘আমরাও কথা বলতে চাই।’
সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে পুরো এপিসোড আগে থেকেই স্ক্রিপ্টেড ছিলো।রাজনৈতিক মহল অবশ্য অন্য কিছু বলছে। বাঘের পিঠে সাওয়ারি হওয়া বুবাগ্রাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা ৷বুধবার রাজ্য অতিথিশালায় শাহী বৈঠক থেকে বেড়িয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড ও সংবিধানের যাবতীয় অধিকারের দাবি মানার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা হবে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য। আর এতেই খুশিতে গদ গদ হয়ে বুবাগ্রার ইশারায় মথাকর্মীরা আতশবাজি পুড়িয়ে বিজয় উল্লাস করলেন।
পাহাড়ে সরল জনজাতিদের একটা বার্তা দেওয়া হলো, আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি। রাজনৈতিক মহলের মতে, শাহী চালেই কাবু হয়ে গেছে বুবাগ্রা। যে বুবাগ্রা এতদিন শুধু হুমকি দিয়ে বেড়িয়েছে, সকলকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুড়িয়েছে, চাণক্যের এক চালেই তিনি একেবারে কাবু হয়ে গেলেন কি করে ? মনে হচ্ছে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’ বুবাগ্ৰা কী সম্মানজনক পলায়নের পথ খুঁজলেন? এই প্রশ্ন কিন্তু এখন বড় হয়ে উঠেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কি হয়? সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা তো করতেই হবে।