দুই পুরুষ ইঁদুরের গর্ভ থেকে জন্মাল সন্তান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে তোলপাড়!

 দুই পুরুষ ইঁদুরের গর্ভ থেকে জন্মাল সন্তান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে তোলপাড়!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সৃষ্টির যাবতীয় নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখাতে চলেছে বিজ্ঞান। যা ভাবনা চিন্তারও বাইরে, সেই অসম্ভবই সম্ভব হতে চলেছে। এমন এক গবেষণার পথে এগোচ্ছে জাপান যা গোটা পৃথিবীকেই নাড়িয়ে দেবে একটা
সময়! নীতিগতভাবে এই গবেষণা সঠিক না বেঠিক তা বিচার করার সময় অবশ্য এখনও আসেনি, তবে সে গবেষণা পদ্ধতিতে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। দুই
পুরুষ ইঁদুরের সন্তানের জন্ম দিয়েছে।
হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। মাতৃত্বের সজ্ঞা বদল হতে এখন আর মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধান।একেবারে বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেল;
দুই পুরুষ ইঁদুরের বায়োলজিক্যাল সন্তানের জন্ম হয়েছে ৭ মার্চ, ২০২৩ সালে। এক কথায় একজন মায়ের শরীর থেকে যেমন সন্তানের জন্ম হয়, এক্ষত্রেও ঠিক তেমনই পুরুদেরই
শরীরের অংশ থেকে জন্ম নিল সন্তান। এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। প্রাথমিকভাবে এই গবেষণায় সাফল্য আসার পরেই আকারে বড়ো অন্য সন্ত্যপায়ীর ওপর পরীক্ষার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জাপানি বিজ্ঞানীদের দাবি, ‘মানুষের উপর পরীক্ষা
করার সময় এসেছে। মানুষের ক্ষেত্রেও যদি এই গবেষণা সফল হয়, তাহলে মাইলফলক তৈরি হবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসেও।
সমকামী যুগলরাও তাদের অপত্যের জন্ম দিতে পারবেন। দুই পুরুষও জন্ম দিতে পারবে সন্তানের।’ বিজ্ঞানের যুগে এই অসম্ভব সম্ভভ
হয়েছে শুধুমাত্র জিনথেরাপির জন্য। এর পেছনে রয়েছে ক্রোমোজোম আর স্টেম কোষের কারসাজি। তার সঙ্গে আছে জিনোম এডিটিং । মানুষের শরীরের মূলতত্ত্বই হল ডিএনএ। যার পুরো নাম, ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। এই জিনের বিন্যাসকে
কাটা-ছেঁড়া করে উল্টে-পাল্টে সবই করা সম্ভব। আর সেটাই করে দেখিয়েছে জিন এডিটিং। বিজ্ঞানের এই নতুন শাখা অসাধ্যসাধন করতে এখন মুখিয়ে রয়েছে। এই শাখার কল্যানে একদিকে দুরারোগ্য ব্যধি
যেমন এইচআইভি বা ক্যানসার নির্মূল
সম্ভব, তেমনই নিত্য নতুন গবেষণায় চমক ঘটাতে পারে। কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হো জিন শিন বিষয়টি সম্পর্কে
বলেছেন, ‘আমাদের দেহ কয়েক কোটি কোষ নিয়ে তৈরি। তার সূচনা হয় মূলত জাইগোট নামক একটি মাত্র ভ্রূণকোষ থেকে। বাবা-মায়ের থেকে প্রাপ্ত শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর
মিলনে তৈরি হয় জাইগোট। ধীরে ধীরে এই জাইগোট কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ব্লাস্টোসিস্টে পরিণত হয়। এই ব্লাস্টোসিস্টের ভেতরে থাকে একধরনের স্টেম কোষ । মূলত এই স্টেম কোষকেই বলা হয় শরীরের
অন্যতম আধার। স্টেম কোষ থেকেই
পরবর্তীতে দেহের যে কোনও কোষ তৈরি হতে পারে। একসময় ব্লাস্টোসিস্ট এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম, এন্ডোডার্ম নামে তিন স্তরে ভাগ
হয়ে ত্বক, পেশি-কলা, কঙ্কালতন্ত্র, পৌষ্টিকতন্ত্র সহ পূর্ণাঙ্গ মানবদেহের নানা অংশ তৈরি করে।’ এই স্টেম কোষ কৃত্রিমভাবে তৈরির এক অনন্য পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন জাপানের বিজ্ঞানী শিনইয়া ইয়ামানাকা। কৃত্রিম এই স্টেম কোষের নাম প্লুরিপোটে ন্ট
স্টেম কোষ। জাপানের কিউশু
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই প্লুরিপোটে ন্ট স্টেম কোষ নিয়েই কাজ করে চলেছেন। বিজ্ঞানীরা দুই পুরুষ ইঁদুরের থেকেই এক্স-ওয়াই ক্রোমোজোম নিয়েছেন। এই দুই
জোড়ার এক্স-ওয়াই ক্রোমোজোম মধ্যে একটিকে বদলে দিয়েছেন সেই প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ পদ্ধতিতে। মানে ওয়াই ক্রোমোজোমকে বদলে এক্স ক্রোমোজোম করে দিয়েছেন। ঠিক যেমন নারী-পুরুষের মিলনের সময় হয়। এখানেই শেষ নয়। এই এক্স ক্রোমোজোমকে বিশেষ উপায়
রূপান্তরিত করে সংখ্যাতেও বাড়িয়েছেন। তারপর নিষেক ঘটিয়ে ভ্রূণ তৈরি করে অন্য ইঁদুরের গর্ভে প্রতিস্থাপন করেছেন। সন্তানের জন্ম হবে সারোগেসিতে। মানে অন্য গর্ভে,
সন্তান হবে দুই পুরুষের শরীরজাতই। তার মধ্যে দুই বাবার বৈশিষ্ট্য নিয়েই জন্মাবে সে। বিজ্ঞানীরা এইভাবে ৬টি ইঁদুর ছানা তৈরি করেছেন। এই পদ্ধতি এবার মানুষের উপরেও
প্রয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে ইঁদুরের পরে কখনোই সরাসরি এই পদ্ধতি মানুষের দেহে
প্রয়োগ করা যায় না। এর মাঝখানে আরও ১৭ টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে জিনকোডিং প্রয়োগ করা হবে। তারপর আসবে মানুষের দেহে। আর এতে অন্ততপক্ষে পাঁচ বছর সময়
লাগতে পারে বলে মত গবেষকদের।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.