কেন্দ্রের সতর্ক

 কেন্দ্রের সতর্ক
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রতি বছরই ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে একাধিক রোগের প্রকোপ বাড়ে দেশে। মাত্র কিছুদিন আগেই গোটা দেশ তথা দুনিয়া জুড়ে কোভিডের মারণ ধাক্কা মানবসভ্যতাকে বড়সড় নাড়া দিয়ে গেছে। তাই কোভিড পরবর্তী সময়ে শ্বাসকষ্ট, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের প্রকোপ একটু বেশিই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বছরও দেশের নানা স্থানে জ্বর, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ এবং এর সাথে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ও সংক্রমণজনিত ব্যাধির বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগ ছড়িয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিগত কয়েকমাস সমানে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে।

শুধু একা পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের বেশকিছু রাজ্যে গত কয়েকমাস ধরে শিশু ও বয়স্কদের জ্বর এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এই নিয়ে সাধারণ্যের মধ্যে একটা চাপা উদ্বেগ কাজ করছিল। অন্তত সেই উদ্বেগ ঘিরে কিছুটা দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসল কেন্দ্র। আসলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে হু হু করে বেড়ে চলা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এই নতুন রোগের প্রকোপ ঘিরে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক দেশের সব কটি রাজ্যকে সতর্ক করল। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকেরা, কেন্দ্রীয় নীতি আয়োগ এবং আইসিএসআর প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন গত কয়েকমাস ধরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শিশু ও বয়স্কদের জ্বর এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়ছে।

যার মধ্যে রয়েছে এইচ ওয়ান এন ওয়ান, এইচ থ্রি এন টু এবং অ্যাডিনো ভাইরাস।সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার সাব টাইপ এই নতুন ভাইরাসগুলো দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা। এর পরই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সবগুলো রাজ্যকে চিঠি লিখে এই ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে দ্রুত এই বিষয়টির সমাধান করা জরুরি। তাই স্বাস্থ্যবিধি এবং নজরদারি হিসাবে কেন্দ্র সবগুলো রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলোকে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা বা গুরুতর কিংবা তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্তদের উপর বিশেষ নজরদারি রাখতে বলেছে।

আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কী কী নির্দেশিকা মানতে হবে এবং কী কী বিষয় অনুসরণ করতে হবে এই সম্পর্কিত একটি গাইডলাইনও স্থির করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কোভিড-১০ এর স্মৃতিকে মাথায় রেখে রাজ্যগুলো যেন ওষুধ এবং মেডিকেল সরঞ্জাম সহ অক্সিজেনের প্রাপ্যতার দিকটি নিশ্চিত রাখতে পারে সেই জন্য হাসপাতালগুলোকে নির্দেশের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে কোভিড- ১৯ পরীক্ষা ধীরে ধীরে বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছে।কোভিড প্রভাব সবে মাত্র কাটিয়ে উঠেছে দেশ। এই অবস্থায় জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়া শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন যে সমস্ত মানুষ তাদেরকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিকাঠামোর মাধ্যমে পরিষেবা যাতে দেওয়া যায় সেদিকে সর্বাগ্রে যত্নবান হতে হবে রাজ্যগুলোকে কেন্দ্রীয় – স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সচিব রাজ্যগুলোকে পাঠানো চিঠিতে এই পরামর্শই দিয়েছেন।

তাই শারীরিক উপসর্গ এবং কো-মবিডিটি যুক্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট বিষয়ক সমস্যার ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতির যে সুযোগ নেই সেকথা মনে রেখে দ্রুত সংশ্লিষ্ট সমস্ত পরীক্ষা কার্য সম্পন্ন করতে হবে। সম্প্রতি গবেষণা সংস্থা নাইসেড দাবি করেছে এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যাডিনো সংক্রমণ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এই সংক্রমণের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের মতোই দক্ষিণের কয়েকটি রাজ্য যেমন, কেরল, তামিলনাড়ুতেও এই ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ বেড়েছে। কিন্তু সেটা পশ্চিমবঙ্গের মতো এতোটা উদ্বেগজনক জায়গায় যায়নি। আবার পশ্চিমবঙ্গের মতোই মহারাষ্ট্র এবং দিল্লীতেও অ্যাডিনো ভাইরাসের বেশকিছু সংক্রমণের খবর আসে।

কিন্তু সেটা বিপজ্জনক চেহারায় যায়নি। মোদ্দা কথা, একসময় আমরা যাকে সর্দি কাশি বলে উড়িয়ে দিতাম, সেটা আগে নিরীহ হলেও এখন প্রাণঘাতী। আসলে ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে আমাদের সচেতনতা কম। এই ভাইরাস নতুন কিছু নয়। এই ভাইরাস আমাদের মধ্যেই ছিল। কোভিড-১৯ আমাদের সেটা শিক্ষা দিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কেন যেন সেটা ভুলে যেতে বসেছি। জীবাণু দিন দিন রূপ বদলে ভয়ানক হচ্ছে। কিন্তু আমরা সচেতনতা হারাচ্ছি। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, মাস্ক পরা, হাঁচি, কাশি হলে সাবধান হওয়া জরুরি। এটাই আপাতত সুরক্ষামন্ত্র ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.