জমি না মেলায় ঝুলে রইল মাল্টিলেভেল কার পার্কিং

 জমি না মেলায় ঝুলে রইল মাল্টিলেভেল কার পার্কিং
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি || গত ৫ বছরেও রাজ্য সরকার আগরতালা এমবিবি বিমানবন্দরে মাল্টিলেভেল (উন্দেরগগ্রাউন্দ)কার পাকিংয়ের জন্য মাত্র দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে দিতে পারেনি। রাজ্য সরকার দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে না দেওয়ায় বিমানবন্দরে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্লেস নির্মাণ করা যাচ্ছে না। শুক্রবার এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তথা অধিকর্তা কেসি মিনাকে প্রশ্ন করা হয় মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্লেস নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েও কেন এখনও নির্মাণ করা হয়নি? সেই প্রশ্নের উত্তরে বিমানবন্দর অধিকর্তা স্পষ্টতই জানান, রাজ্য সরকার দুই একর জায়গা এখনও অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দর অথরিটির হাতে দেয়নি। দুই একর জায়গা রাজ্য সরকার দিলে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার টাকায় মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্লেস নির্মাণ করা হবে। বিমানবন্দর অধিকর্তাকে প্রশ্ন করা হয় কবে রাজ্য সরকার মাল্টিলেভেল কার পার্কিংয়ের জন্য জায়গা দেবে? সে বিষয়ে তিনি জানান, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা চলছে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্লেস নির্মাণ করার জন্য দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে দেওয়ার জন্য। কবে রাজ্য সরকার এই জায়গা দেবে সে বিষয়ে বিমানবন্দর অধিকর্তা কিছু জানাতে পারেননি। এদিকে, শুক্রবার রাজ্য সরকারের পরিবহণ দপ্তরের সচিব ইউকে চাকমাকে প্রশ্ন করা হয় মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্লেস নির্মাণে দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে কবে এয়ারপোর্ট অথরিটির হাতে দেওয়া হবে। সেই প্রশ্নের উত্তরে পরিবহণ দপ্তরের সচিব শুধু জানান সে বিষয়টি দেখছি। এর বাইরে কিছু বলতে পারেননি। পরিবহণ সচিবের কথা শুনে সহজেই . অনুমান করা যাচ্ছে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং নির্মাণে জায়গা অধিগ্রহণের কাজ এগোয়নি। প্রসঙ্গত গত ৫ বছরেও রাজ্য সরকার মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্লেস নির্মাণে জায়গা অধিগ্রহণ করে দেয়নি বিমানবন্দর অথরিটিকে। সে কারণে এমবিবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাল্টিলেভেল কার পার্কিংয়ের সুবিধা এখনও পাননি যানবাহন নিয়ে আসা বিমান যাত্রী, যাত্রীর আত্মীয়স্বজন, বিমান সংস্থার কর্মচারী, সাধারণ মানুষ সহ যারা বিমানবন্দরে নানা কাজে আসেন।প্রসঙ্গত, গত ২০১৬ সালের শেষ দিকে যখন দিল্লীতে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার প্রধান কার্যালয়ে আগরতলা বিমানবন্দরের জন্য আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় তখন মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্লেস নির্মাণের জন্যও দরপত্র আহ্বান করার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ সময়ে মাল্টিলেভেল করা পার্কিংয়ের জন্য দুই একর জায়গা না মেলায় মাল্টিলেভেল কার পার্কিংয়ের দরপত্র আপাতত বাতিল করা হয়। শুধু অত্যাধুনিক টার্মিনাল ৩০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মাণ করার জন্য দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়। সেই মতে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার তরফে ২০১৭ সালের জুন মাসে টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণে সাড়ে চারশো কোটির উপর টাকা ব্যয় করা হয়। কথা ছিল রাজ্য সরকার দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে দিলেই মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্লেস নির্মাণের কাজ শুরু হবে। সেই সময় বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল। বিমানবন্দরের নতুন জায়গায় নতুন অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের জন্য তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এয়ারপোর্ট অথরিটিকে ৭৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে দেয়। বিমানবন্দরের উন্নয়নে জায়গা অধিগ্রহণ করতে গিয়ে প্রচুর পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাদের জায়গা সহ সব ধরনের ক্ষতিপূরণও দেয় তৎকালীন সরকার। বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য ও অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের জন্য তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার অনেক পরিবারকে উঠিয়ে দিয়ে তাদের জন্য বিমানবন্দরের অদুরে বাড়িঘর নির্মাণ করে দিয়ে সব ধরনের পরিষেবামূলক কলোনি বানিয়ে দেয়। কিন্তু তখন তৎকালীন সরকার ৭৬ একর জায়গা বিমানবন্দরের জন্য অধিগ্রহণ করে দিলেও মাল্টিলেভেল কার পার্কিং নির্মাণের জন্য দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে দিতে পারেনি। যদিও মাল্টিলেভেল কার পার্কিং নির্মাণের জন্য জায়গা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ায় তা আটকে যায়। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার চলে গিয়ে বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিবহণ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল খুব শীঘ্রই মাল্টিলেভেল কার পার্কিংয়ের জন্য দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দর অথরিটিকে দেওয়া হবে। কিন্তু গত ৫ বছরে দুই একর দূরের কথা, এক গন্ডা জায়গাও রাজ্য সরকার ও তার পরিবহণ দপ্তর অধিগ্রহণ করে দিতে পারেনি বলে বিমানবন্দর আধিকারিক সূত্রে জানা গেছে। কবে রাজ্য সরকার মাল্টিলেভেল কার পার্কিংয়ের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করে দেবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে বলেও বিমানবন্দর সূত্র জানায়। এদিকে, বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের কার পার্কিংয়ের জায়গায় ঝড়ে বড় একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেঙে পার্কিংয়ে রাখা বাইক ও স্কুটির উপর পড়ায় অনেকগুলি বাইক ও স্কুটির ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়। কিন্তু মাল্টিলেভেল কার পার্কিং প্রেস থাকলে ঝড়ে এ ধরনের কোনও ক্ষতি হবে না। তাছাড়া যানবাহন মাল্টিলেভেল কার পার্কিংয়ে থাকলে সন্ত্রাসবাদীরা কারবোমা বা সাইকেল বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটালেও বিমানবন্দরের ক্ষতি হবে না— বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তা মনে করছে। তাছাড়া বিমানবন্দরটি হলো এখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তাই গুরুত্ব অনেক বেড়েছে।এদিকে, শুক্রবার বিমানবন্দর অধিকর্তা সহ বিমানবন্দরের আধিকারিক পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবারের কার পার্কিং প্লেসের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা পরিদর্শনে যান।সবকিছু খতিয়ে দেখেন। বিমানবন্দর অধিকর্তা এ বিষয়ে জানান বিপদ এড়াতে শনিবার কার পার্কিং প্লেস এরিয়ার রুগ্‌ণ গাছগুলি কেটে ফেলা হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.