সবুজায়নে দুর্গম বাঘমারা ভিলেজ পেলো কেন্দ্রীয় পুরস্কার

 সবুজায়নে দুর্গম বাঘমারা ভিলেজ পেলো কেন্দ্রীয় পুরস্কার
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি || একটা সময়ে সাব্রুম মহকুমা প্রশাসনের কোনও অস্তিত্ব ছিল না স্বাভাবিকভাবে কোনও সরকারী আধিকারিক ভুলেও সেই দিকে তাকানোর কোনও কথাই নয়। এখানে শেষ কথা ছিল বৈরীদের গুলী আর তীব্র অত্যাচার। আজ সেই এডিসি ভিলেজ শুধু দেশে নয় সারা পৃথিবীতে তার জায়গা করে নিয়েছে। ভিলেজটি হচ্ছে সাব্রুম মনু বনকুল বিধানসভা কেন্দ্রের বাঘমারা এডিসি ভিলেজ। ইতিমধ্যে ভারত সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তরের কার্বন নিউট্রেশন মুক্ত বিশেষ পঞ্চায়েত এবং সবুজায়নের সারা দেশের মধ্যে প্রথম। ভারতবর্ষের এমন চারটি গ্রামকে কেন্দ্রীয় সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়।যদি বাঘমারা এডিসি ভিলেজ নিয়ে একটু পিছনে যাওয়া যায় তাহলে বলতে হয়, ২০০১ থেকে টানা দশ বছর পুরো বাঘমারা এডিসি ভিলেজ ছিল রাজ্যের এনএলএফটি বৈরীদের নিরাপদ আস্তানা। একদিকে জোলাইবাড়ি কোয়াইফাং দিয়ে সোজা শিলাছড়ি আইলমারা হয়ে বাংলাদেশ যেমন যাওয়া যায় তেমনি কোয়াইফাং দিয়ে ফাঁড়ি পথে করবুক হয়ে তেলিয়ামুড়া যাওয়া যায় তীব্র ভাবে বৈরীদের দাপটে সাব্রুম মহকুমা প্রশাসনের অস্তিত্বের কোনও চিহ্ন ছিল না। রূপাইছড়ি ব্লকের কোনও কর্মকর্তার বাঘমারাতো যাওয়ার প্রশ্ন ছিল না। আর যারা যেতো তাদের মোটা অংকের চাঁদা তৎকালীন সময়ে দিয়েই বাঘমারা যাওয়ার প্রবেশপত্র মিলতো। বাঘমারার গভীর পাহাডি ছড়াতে কত যে অপহৃত ব্যক্তিকে গুলী করে ফেলা হয়েছে তার হিসাব কত জনে জানে। সেই সময়ে রাজ্য প্রশাসনের কাছে বাঘমারাতে সরকারী সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তৎকালীন সময়ে দক্ষিণের বাইখোড়া ‘থানার ওসি দেবযান চাকমার সাথে এ প্রতিবেদক বিশাল সংখ্যায় টিএসআর বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ নয় কিমি গভীর জঙ্গল অপরদিকে উঁচু পাহাড় বয়ে বাঘমারাতে যায়। আসলে বনকুল- শিলাছড়ি সড়ক থেকে বৈরী দুই স্কুল ছাত্রকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘটনার বেশকিছু দিন পরে বাইখোড়া থানা আর সাব্রুম থানা যৌথভাবে বাঘমারাতে অপারেশনে নামে সঙ্গে পুলিশ আটককৃত এক বৈরীকে নিয়ে।কিন্তু দুই স্কুল ছাত্রের কোনও হদিস আজও মেলেনি। আটককৃত বৈরী সেই সময়ে বাঘমারা ছড়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল এদের হত্যা করে ছড়ার জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।অবিভক্ত দক্ষিণ জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার টিবি রায় বাঘমারাতে একটি টিএসআর ক্যাম্প স্থাপন করে। শুধু তা নয়, বৈরীদের সমস্ত রাস্তার মুখে টিএসআর ক্যাম্প বসিয়ে সাব্রুম মহকুমাতে বৈরী তৎপরতার লাগাম টানে। সেই থেকেই ধীরে ধীরে বাঘমারাতে প্রশাসনের লোকজন চলাচল শুরু করে। আজ বাঘমারা বিভিন্নভাবে সরকারী প্রকল্পের সুবিধা ‘পেয়ে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় তা দেখিয়ে দিল এলাকার একশত ভাগ সহজ সরল ভূমিপুত্ররা ।আজ বাঘমারার মতো দুর্গম অঞ্চলে পুরোপুরি প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ ৷ পুরো গ্রামে সেচ ব্যবস্থা সোলারে চলছে। এক সাক্ষাৎকারে রূপাইছড়ি ব্লকের বিডিও অভিজিৎ মজুমদার জানিয়েছেন যে, বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে ব্লক প্রশাসন সেখানে কাজ করছে। এমনিতেই পুরো এলাকা গ্রিণ এনার্জি। সুন্দরভাবে প্রকৃতির কোলে বাঘমারা এডিসি ভিলেজ। স্থানীয় ভিলেজের মাধ্যমে সব করা হয়। শিশু শিক্ষা থেকে শুরু করে নিজের চারিপাশে পরিষ্ককার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ভিলেজে কোনও শিশুর জন্ম হলে সেখানে একটি গাছ লাগানো হয়। বিষয়টি এখন সামাজিক হয়ে গিয়েছে বলে শ্রী মজুমদার মন্তব্য করেন। গ্রামে ই-রিকশা চলাচল করে। এখানে বাঁশের তৈরি সব সামগ্রী ব্যববার করা হয়।প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ইতিমধ্যে রূপাইছড়ি ব্লক এলাকার এমন আরও একাধিক এডিসি ভিলজকে হাতে নেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে তা সার্বিকভাবে সাহায্য করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে আজ বাঘমারার মতো মহকুমার দুর্গম একটি জনপদ এইভাবে দেশের মধ্যে বিশেষ সম্মানে ভূষিত হতে পারায় বেশ খুশি এলাকার বিধায়ক মাইলাফু মগ ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.