উৎপাদন বন্ধ হয়ে থাকা জুটমিলকে শীঘ্রই চাঙ্গা করা হবে : শান্তনা
দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি || হাপানিয়াস্থিত রাজ্যের একমাত্র শিল্পভ প্রতিষ্ঠান জুটমিলের করুণ দশার কোনও পরিবর্তন নেই। বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরও জুটমিলকে চাঙ্গা করা হয়নি। অভিযোগ, বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়ই জুটমিলের পরিচালনাগত ত্রুটি ও দুর্নীতির কারণে অন্তর্জলি যাত্রার পথে নেওয়া হয় রাজ্যের একমাত্র জুটমিলটিকে।
যেখানে ১৯৮০ সালে জুটমিলের শুরুতে প্রতিদিন ৩০-৩৫ টন উৎপাদন হতো সেখানে যখন বামফ্রন্ট সরকার ২০১৮ সালে বিদায় নেয় মারাত্মকভাবে উৎপাদন কমে গিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩ টনে গিয়ে দাঁড়ায়। বামফ্রন্ট সরকারের বিদায়ের পর আসে ২০১৮ সালে বিজেপি জোট সরকার । এই সরকার আসার দুই বছর পরই জুটমিলের উৎপাদন আচমকাই বন্ধ হয়ে যায়। গত তিন বছর ধরে জুটমিলে কোনও উৎপাদন নেই। ৫০টি রানিং তাঁত মেশিন তিন বছর ধরে বন্ধ হয়ে থেকে মেশিনগুলি নষ্ট হচ্ছে। জুটমিলে এখন ১৩০ জনের মতো শ্রমিক কর্মচারী অফিসার রয়েছেন। জুটমিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে থাকায় শ্রমিক-কর্মচারী-অফিসার সকলেই কাজ হারিয়ে জুটমিলে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বসে থাকেন। কেউ কেউ আবার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে ধীরে ধীরে জুটমিল থেকে সরে পড়েন। তবে জুটমিলের শ্রমিক-কর্মচারী-অফিসারের কোনও কাজ না থাকলেও প্রতি মাসে কিন্তু নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। এদিকে সোমবার জুটমিলের এই বেহাল দশা ও জুটমিলকে চাঙ্গা করা নিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শান্তনা চাকমাকে প্রশ্ন করা হলে জানান, জুটমিলকে চাঙ্গা করা হবে। দ্বিতীয় বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত মার্চ মাসে জুটমিলকে কীভাবে চাঙ্গা করে পুনরায় চালু করা যায় সে বিষয়ে শিল্প দপ্তরের
অধিকর্তার অফিসে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক হয়। শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সহ দপ্তরের সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সিদ্ধান্ত হয় ৫০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি মতামত জানাবে কীভাবে জুটমিলকে পুনরায় চাঙ্গা করে চালু করা যায়। শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শান্তনা চাকমা আরও জানান, তিনি আশাবাদী আগামী ১৫- ২০ দিনের মধ্যে এক্সপার্টদের মতামতের উপর ভিত্তি করে যে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে তা তিনি পেয়ে যাবেন। শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আরও জানান, জুটমিলকে চাঙ্গা করার বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য গত ডিসেম্বর মাসে জুটমিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল। তিনি কলকাতার কয়েকটি জুটমিলে গিয়ে জুটমিলের পরিচালনা স্বচক্ষে দেখে ও খোঁজখবর নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে আসেন। শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আরও জানান, জুটমিলকে চাঙ্গা করে পুনরায় চালু করার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী না হয়েও মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার নির্দেশে গত নভেম্বর মাসে একদিন শান্তনা চাকমা জুটমিলের হালহকিকত দেখতে জুটমিলে এসে ঘুরে খোঁজখবর নিয়ে গিয়েছিলেন। এদিকে জুটমিল সূত্রের খবর হলো, জুটমিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে বেহাল দশায় জুটমিলটি ধুঁকলেও ভাগ্যবান দু’জন কর্মচারীকে অবসরের পরও রহস্যজনকভাবেই চাকরিতে এক্সটেনশন দিয়েই চলেছে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর। জুটমিলের পার্সোনাল ও স্টোর অফিসার রামপ্রসাদ দত্তকে চাকরিতে গত ছয় বছর ধরে এক্সটেনশন দিয়েই চলেছে।
অপর অফিসার স্বপন কুমার পালকে গত তিন বছর ধরেই চাকরিতে এক্সটেনশন দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক বছর করে করে তাদের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এক্সটেনশন দেওয়ার জন্য খেটে চলেছে বলেও অভিযোগ। এই দুই কর্মচারীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এভাবে এক্সটেনশন দেওয়ায় জুটমিলের সাধারণ কর্মচারীরা বেকুব বনে যাচ্ছেন। তবে সোমবার এই বিষয়ে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জানান তিনি এই বিষয়টি জানেন না। খোঁজ নিয়ে দেখবেন কী করে ভাগ্যবান দুই কর্মচারী বছরের পর বছর এভাবে এক্সটেনশন পেয়ে যাচ্ছেন। এদিকে জুটমিল শ্রমিক কর্মচারীদের অভিযোগ, বর্তমান বিজেপি সরকার প্রথমে ৫ শতাংশ ও নির্বাচনের আগে আরও ১২ শতাংশ মহার্ঘভাতা কর্মচারীদের জন্য ঘোষণা করলেও জুটমিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা কোনও মহার্ঘভাতা পাননি।এ বিষয়ে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শান্তনা চাকমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি দেখবেন। ৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা জুটমিল সেই সময় পেয়েছে বলে দাবি করলেও পরে মন্ত্রী জানান,কেন ৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা পাননি কর্মচারীরা এরও খোঁজ নেবেন ।