১০০ বাইসনের চারণভূমির মানুষেরা।

 ১০০ বাইসনের চারণভূমির মানুষেরা।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০২১ এর গণনা অনুযায়ী তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে বাইসনের সংখ্যা একশোর চেয়ে কিছু বেশি। ২০০৯ এর বাইসন ন্যাশনাল পার্কের ৩১ বর্গ কিলোমিটার জমির বাইরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের যে জমি তার মধ্যে রাজনগর ব্লকের অধীনে রয়েছে ১২১ বর্গ কিলোমিটার জমি। আর এই জমি ঘিরে রয়েছে পাঁচ থেকে সাত হাজার পরিবার যারা নিজ জমিতে থেকেও জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন বন আইনের কারণে।

Trishna Wild Life Sanctuary, Belonia//তৃষ্ণা অভয়ারণ্য, বিলোনিয়া, ত্রিপুরা  - YouTube


পৃথিবীর যেখানে যেখানে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বা ন্যাশনাল পার্ক গড়ে উঠেছে তার সবখানেই রয়েছে এই সংঘাত।এই সংঘাত কতটা তীব্র রাজনগরে? বিডিও সৈকত সাহা জানিয়েছেন,এই ব্লকে তার প্রায় এক বছরের কর্মকালে বন আইনের গ্যাড়ায় আবাসন প্রকল্পের ঘর পেয়ে ঘর তুলতে পারছেন না বা স্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে পারছেন না, এমন ঘটনা এসেছে চারটি। বসতির মানুষ জানেন জমি তাদেরই কিন্তু বন দপ্তরের জমির ম্যাপে জমির মালিক বন দপ্তর। সব কয়টি ঘটনারই নিষ্পত্তি হয়েছে বন দপ্তরের সহায়তায়। যেহেতু বনের জমিতে ঘর বানানো সম্ভব নয় তাই ঘরগুলি সব ক্ষেত্রেই ১৫ বা ২০ মিটার দূরে সরিয়ে নিতে হয়েছে।

Bartaman Patrika


অন্য দিকে বাইসনের কারণে মানুষের ক্ষতির পরিমাণ কেমন? আগরতলায় অরণ্য ভবনের সূত্রের খবর, গত দুই বছরে সাতটি ফসল নষ্টের লিখিত অভিযোগ তারা পেয়েছেন, সব ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বন দপ্তর। এর বেশি গত দুই বছরে যা ঘটেছে তাতে মোহনভোগ এলাকায় অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে আসা একটি বাইসনকে হত্যা করা হয়েছে। এলাকায় কথা বলে জানা গেছে বাইসন বা গবয়ের চোরা শিকারি কোনও কালেই ছিল না।সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার পর বাইসন অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছে। বন দপ্তরের ভাষায় কাঁটাতারের বেড়ার ফলে জন্তুগুলির স্বাভাবিক চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।তাহলে কি গবয় দেখতে যাওয়া পর্যটকদের শুধু নিরাশই হতে হয়?সাধারণ মানুষ জানেন তৃষ্ণায় গবয় রয়েছে। কিন্তু দেখেননি অনেকেই। এ যেন রামকৃষ্ণ আর নরেনের কথোপকথন। ‘ঈশ্বর দেখেছেন?’ এলাকার বিধায়ক স্বপ্না মজুমদারের জন্ম,বেড়ে ওঠা সবই রাজনগরে। গবয় দেখেছেন?জবাবে জানালেন ‘একবার দেখেছি। সন্ধ্যা বেলা পার্টি কাজ সেরে আমরা ফিরছিলাম।জ্যোৎস্না ছিল। পাঁচ ছয়টির দল দেখেছি। বাচ্চাও ছিল।’ তার জবাব বেশ আশাব্যঞ্জক।গবয়দের সন্তান সন্ততিও হচ্ছে।একই প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়েছিল বিডিও সৈকত
দেবনাথকে। তিনি জানালেন, আমার খুব বেশি যাওয়া হয় না। অমৃত সরোবর মিশনের কাজ দেখতে দুইবার গেছি। প্রথম দিন দেখিনি। দ্বিতীয় দিন দেখেছি। প্রায় কুড়িটির দল ছিল। তৃষ্ণার ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেনের দায়িত্বে রয়েছেন অমলেন্দু দেবনাথ।তিনি কোনও তথ্য দেওয়ার অধিকারী নন বলে তথ্য না দিলেও বাইসন দেখেছেন প্রশ্ন যারপরনাই বিরক্তি ও বিস্ময় প্রকাশ করলেন।জানালেন রোজ দেখি এমন নয়।দেখতে চাইলেই দেখতে পাই।পর্যটকদের দেখানো যাবে?অমলেন্দুবাবু পাল্টা জানতে চাইলেন,আপনি এক্ষণ দেখতে চান নাকি সকালে দেখতে চান? যখন দেখতে চাইবেন দেখানো যাবে। সাধারণ পর্যটক কীভাবে দেখবেন, কোনও ব্যবস্থা রয়েছ কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন,এই কথা ঠিক যে পর্যটনের পরিকাঠামো সেইভাবে এখনও হয়ে উঠেনি তবে হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে কিছুই রিকশা রয়েছে, যেগুলি পর্যটকেরা ভাড়া নিয়ে বাইসন দেখতে যেতে পারেন।রাজনগরে তৃষ্ণা আর বাইসনভিত্তিক যে পর্যটন সম্ভাবনা তাতে পর্যটক থাকার জন্য দুইটি ডাক বাংলার বাইরে বন দপ্তরের কয়েকটি কটেজ রয়েছে। বাকি ব্যবস্থাপনা সুচারুভাবে হয়ে উঠেনি বলে পর্যটকের ভিড় কখনওই মার মার,কাটকাট নয়। শিল্পের বিকাশে কাজ করার ভাবনার পাশাপাশি এই সময়ে বন্য জন্তুগুলির জন্যও অধিক ভাবনা দরকার।ন্যাশনাল পার্কের ৩১ বর্গ কিলোমিটার বাদ দিলে এদের চরে বেড়ানোর জমিতে কিন্তু মাথা তুলে রয়েছে রাবার বাগান । ধনপুর থেকে যে পথ রাজনগর যায়, সেই পথে দক্ষিণ জেলায় পথচারীকে স্বাগত জানানোর যে তোরণ তার আগেই বাইসন অভয়ারণ্যের তোরণ রয়েছে। একটু এগুলেই রাজপথটিও অভয়ারণ্যেরই জমিতে। দুই পাশেই রয়েছে বাইসনের জমি। আর দুই পাশেই হয় বন দপ্তরের লাগানো শাল, সেগুনের মনোকালচার না হয় বেসরকারী উদ্যোগের রাবার বাগান।

Beautiful road-TO Kokrajhar Assam on fz25 - YouTube


যার কোনটাই বন্য জন্তুর চারণভূমি হতে পারে না।শালসেগুনে শেয়াল,বানর চরলেও রাবার বাগানে পাখিও ডাকে না। রাবার বাগানগুলির উৎপাদন তিন চার পাঁচ বছর আগে থেকেই চলছে। তাহলে এই বাগনের বয়স অন্তত দশ থেকে বারো বা আরও বেশি।
কি করে সম্ভব হলো?এই প্রশ্নের জবাব কেউ জানে না। আর অরণ্য ভবন তো স্বীকারই করে না যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বেসরকারী রাবার আছে। বিডিও সৈকত দেবনাথ জানালেন রাবার বাগান উচ্ছেদে বন বিভাগ খুব কড়া ভূমিকা নিচ্ছে।নিয়মিত রাবার বাগান নষ্ট করা হচ্ছে। অর্থাৎ এখনও নতুন বাগান করার চেষ্টা চলছে। রাজনগরে শাসক দলের কিষান মোর্চার সভাপতি শ্যামল পাল জানালেন সিপিএমের আমলের সব বাগান। তখন তারা কী করে বাগান করেছে জানি না।এখন করতে দিচ্ছে না বন দপ্তর।মণ্ডল সভাপতি রঞ্জিত সরকার জানালেন এক একটি বাগানের আয়তন ৫০ থেকে ৭০ কানি হবে। এমন চৌদ্দ পনেরোটি বাগান রয়েছে। সবই সিপিএমের আমলে হয়েছে।বন দপ্তরের জমিতে ভোগ দখল চলছে।শাসক দলের নেতারা মনে করেন,এক জনের ভাগে ৭০ কানি ভোগ দখল না হয়ে সাত জনের নামে হলেও কিছু মানুষের কর্ম সংস্থান হতে পারে।বিজেপি নেতাদের এই ভাবনাকে সিপিএম নেতারা হয়তো নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের ভাবনায় ভাবিত বলবেন, ভাববেন। কিন্তু বন্য জন্তুগুলি? এরা তো কোনও দলেই পড়বে না! রাবারের পাতা, ফল, স্ক্র্যাপ খেয়ে এদের সংখ্যা দ্রুত কমছে না তো!

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.