বৃষ্টিতে স্বস্তি মিললেও ক্ষতির মুখে বহু কৃষক

 বৃষ্টিতে স্বস্তি মিললেও ক্ষতির মুখে বহু কৃষক
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি || একটানা তীব্র তাপপ্রবাহ, কাঠফাটা রোদ এবং অস্বস্তিকর গরম থেকে অবশেষে স্বস্তি মিললো। তবে বহু স্থানে শিলাবৃষ্টিতে বহু কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। বহু ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকালে গোটা রাজ্যেই দমকা হাওয়ার সাথে বজ্রবিদ্যুৎ সহ শিলাবৃষ্টির দেখা মিলেছে। টানা অসহ্য গরমের পর বহুল প্রত্যাশিত এই স্বস্তির বৃষ্টিতে জনজীবনে প্রশান্তি এনেছে। কৃষকরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।

Crop wasted for Hail Storm - Anandabazar


রাজ্যের চা-বাগানগুলির অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছিল। বৃষ্টিতে বাগানগুলি প্রাণ ফিরে পাবে। বহু প্রত্যাশিত বৃষ্টিতে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে শিলা বৃষ্টির ছবি ও ভিডিও ভরে গেছে। বহু জায়গায় বৃষ্টিতে মানুষকে ভিজতেও দেখা গেছে। রাজধানী আগরতলাতেও বিকালে- বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে।এদিকে, শুক্রবার বিকালের বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এলেও কালবৈশাখী দমকা হাওয়ায় বিদ্যুৎ পরিষেবার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বহু
জায়গায় বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইনের উপর গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে ছিঁড়েছে পরিবাহী তার। বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, ঝড়ে অনেক জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ জেলায়।এছাড়াও খোয়াই জেলার একটি অংশ, ধর্মনগর, তেলিয়ামুড়া, আমবাসা, মোহনপুর, উদয়পুর, অমরপুর, নলছড়ে বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ছিঁড়ে গেছে। কর্মীরা সাথে সাথেই সংস্কার কাজে নেমেছেন। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে লাইন সারাইয়ের কাজ চলছে। রাতের মধ্যেই ওই সব জায়গায় পরিষেবা সচল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু বিদ্যুৎ পরিষেবাই নয়, শিলাবৃষ্টিতে রাজ্যের কিছু কিছু এলাকায় ফসলের এবং বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে।


বৈশাখ মাসের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন গোটা মহকুমার মানুষ। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, মোবাইল পরিষেবা থেকে শুরু করে সবকিছুই বিপর্যস্ত। কৃষকদের খেতের ফসল শতভাগ শিলা বৃষ্টিতে তছনছ হয়ে যায়। কালবৈশাখীর ঝড়ের চাইতেও সবচেয়ে আতঙ্কজনক ছিল বড় ধরনের শিলা বৃষ্টি। এক একটি শিলার ওজন প্রায় পাঁচশ গ্রাম । শিলাবৃষ্টিতে গোটা মহকুমার হাজার হাজার টিনের ছাউনির ঘর ফুটো হয়ে গেছে। ভয়ানক এই শিলাবৃষ্টিতে আহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে মারাত্মক আকারে নষ্ট হয়েছে কৃষকের খেতের ফসল, সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘর, রাস্তায় চলাচল করা বহু গাড়ি।শুক্রবার দুপুর ১.৩০টা থেকে হঠাৎ শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। শিলাবৃষ্টির শুরুতে প্রতিটি শিলা ছোট আকারে থাকলেও তা ধীরে ধীরে ১০০ গ্রাম ২০০ গ্রাম থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম ওজনের পর্যস্ত শিলা আছড়ে পড়তে থাকে গোটা খোয়াই জুড়ে। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে এমন কোনও স্থান নেই যে স্থানে বড় ধরনের শিলা বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই শিক্ষাবৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ে। পাঁচশ গ্রাম ওজনের শিলাবৃষ্টি হঠাৎ শুরু হতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিলাবৃষ্টি চলাকালীন সময়ে শহরের রাস্তাঘাটে যে সমস্ত যানবাহন ছিল সেগুলোরও মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়।কয়েকদিন ধরে তীব্র দাবদাহের পর শুক্রবার দুপুরের পর থেকে টানা মুষলধারে বৃষ্টির ফলে কাঞ্চনপুর মহকুমার বেশ কয়েক জায়গায় জলমগ্ন হয়ে গেছে। বেলা বারোটার পর দফায় দফায় কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়। এরপর সন্ধ্যার পর থেকে প্রতিবেদন পাঠানো পর্যন্ত বজ্রপাত সহ মুষলধারে বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টি থামার লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে বিকাল থেকেই গোটা এলাকায় লোডশেডিং চলছে। বৃষ্টি এবং লোডশেটিংয়ের জেরে জনজীবন ব্যাহত হয়। সন্ধ্যার পরই রাস্তাঘাট দোকানপাট শুনশান হয়ে গেছে। গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির জন্য কাতর হয়ে মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আজ মুষলধারে বৃষ্টির ফলে মানুষের মধ্যে তৃপ্তি দেখা দিলেও টানা বৃষ্টিতে জনজীবনের অস্বাভাবিক অবস্থা।

শহর জুড়ে স্বস্তির বৃষ্টি - স্যন্দন পত্রিকা


প্রবল বর্ষণে বেশ কয়েকটি জায়গায় জলমগ্ন হয়ে গেছে।এদিকে, মুষলধারে বৃষ্টির ফলে কাঞ্চনপুর – জম্পুই সড়কে ল্যাণ্ডস্লাইটে পাহাড়ের উপর থেকে রাস্তায় পাথর পড়ে জম্পুইয়ে যাওয়ার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে রাস্তা থেকে পাথর সরানোর কাজ চলছে।বৃহস্পতিবার রাতে খানিকের কালবৈশাখী হাওয়ায় উপড়ে পড়ে দীর্ঘ বছর পুরানো বিশাল আকৃতির বটবৃক্ষ। এ দিন রাত আনুমানিক ১১টা নাগাদ তেলিয়ামুড়া এলাকায় আচমকা ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। খানিকের ঝড়ো হাওয়ার দাপটে জনজীবন একপ্রকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে তেলিয়ামুড়া পুরো পরিষদ এলাকার ১২ নং ওয়ার্ডের অধীন গৌরাঙ্গটিলা এলাকায় প্রায় ১০০ বছর পুরানো বটবৃক্ষের একটা অংশ ভেঙে এই এলাকার একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দালানঘরে পড়ে। এতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির অধিকাংশ অংশ ভেঙে যায়। পরবর্তীতে শুক্রবার সকাল নাগাদ বটবৃক্ষের বাকি অংশ ভেঙে এলাকার একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির উপর এবং নিবারণ সরকার নামে এলাকায় বসবাসকারী এক ব্যক্তির ঘরের ছাউনির উপর পড়ে। এতে ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে যায় বিদ্যুতের খুঁটি। পরে এই ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদের চেয়ারম্যান রূপক সরকার এবং তেলিয়ামুড়া বনদপ্তরের কর্মীরা। তৎসঙ্গে ছুটে আসেন এলাকার অন্যান্য স্থানীয় লোকজনেরা। ছুটে এসে সকলের তৎপরতায় দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ভেঙে পড়া বিশাল আকৃতির গাছটিকে সরানো হয়। তবে শুক্রবার বিকালের বৃষ্টিতে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ নেই। শুক্রবার সন্ধ্যার ঝটিকা বৃষ্টিতে গোটা উদয়পুর মহকুমায় সামান্য স্বস্তি ফিরেছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ সন্ধ্যায় প্রথমে কালবৈশাখী ঝড় ও পরে এক পসলা বৃষ্টি হয়েছে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে গোটা মহকুমা অন্ধকারে নিমজ্জিত। এখন পর্যন্ত কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.