সুখবর
অবশেষে সু-খবর এলো। এই সুখবর কোনও ব্যক্তিগত নয় ৷ এই সুখবর গোটা রাজ্যের, চল্লিশ লক্ষ মানুষের।এই সুখবর গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশের ‘চট্টগ্রাম’ ও ‘মংলা’ এই দুটি বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহণের বাণিজ্যিক অনুমতি পেয়েছে ভারত। এই নিয়ে গত মঙ্গলবার স্থায়ী ট্রানজিট আদেশ জারি করেছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (সংক্ষেপে এনবিআর)।এর ফলে ভারত এখন থেকে এই দুটি বন্দর ব্যবহার করে নিজের দেশের অর্থাৎ উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য পণ্য পরিবহণ করতে পারবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিলল এই ছাড়পত্র।
আর এই ছাড়পত্রে সব থেকে বেশি উপকৃত এবং লাভবান৷ হবে
ত্রিপুরা।কেননা, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ত্রিপুরা হচ্ছে
বাংলাদেশের ওই দুটি বন্দরের সবথেকে কাছের ভারতীয় ভূখণ্ড
(রাজ্য)।পণ্য পরিবহণে ত্রিপুরা হবে করিডর। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে দক্ষিণের সাক্রম মাত্র সত্তর কিলোমিটার দূরে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়ক পথে সাক্রমে পণ্য পরিবহণ করতে খুব বেশি হলে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। তাছাড়া আখাউড়া হয়েও পণ্য অনায়াসে আগরতলা প্রবেশ করতে পারবে। এতে ত্রিপুরার অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।
এই ব্যাপারে ২০১৮ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল।যার আওতায় ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে নিজের দেশে পণ্য পরিবহণের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ।২০১৯ সালে একটি আদর্শ কার্যপ্রণালী তৈরি হলে, পরের বছর পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আখাউড়া হয়ে একটি ভারতীয় পণ্যের চালান আগরতলা আসে। গত বছর মংলা বন্দর দিয়ে আরও দুটি রুটের পরীক্ষামূলক চালান আসে। যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে অবশেষে দুয়ার খুলে দেওয়া হলো।ছাড়পত্রের নির্দেশে বলা হয়েছে,পণ্য পরিবহণের জন্য চট্টগ্রাম-আখাউড়া-আগরতলা, মংলা-আখাউড়া-আগরতলা, তামাবিল-ডাউকি শেওলা-সুতারকান্দি এবং বিবির বাজার-শ্রীমন্তপুর রুটে ১৬টি ট্রানজিট রুট খোলা হয়েছে।সেই সঙ্গে আরও জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ এমন কোনও পণ্য পরিবহণ করা যাবে না বাংলাদেশের বন্দরে সাতদিনের বেশি পণ্য ফেলে রাখা যাবে না। বন্দরে পণ্য পৌঁছানোর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তা বাংলাদেশ শুল্ক দপ্তরে জানাতে হবে। এমন আরও বেশ কিছু বিষয় রয়েছে।কূটনৈতিক মহলের মতে, চিনের আগ্রাসন নীতি এবং বাণিজ্যি সম্পর্কের বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রক্তে সম্পর্কের কথা ভুলে যায়নি শেখ হাসিনা। বার বার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রমাণও দিয়েছেন। চিন বাণিজ্যিক সম্পর্কের আড়ালে মহাদেশে একের পর এক দেশকে
ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে কোণঠাসা করতে চাইছে। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। চিনের এই মতলব ও নীতি সম্পর্কে ঢাকা ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। তাই রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করে ড্রাগনের স্রোতে ভেসে যেতে চান না বাংলাদেশ ৷ দুই বন্দর ব্যবহারের স্থায়ী ছাড়পত্র দিয়ে বাংলাদেশ শুধু ভারতের পাশেই দাঁড়ায়নি, চিনকেও বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।