রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
রবিঠাকুর ও আমরা
সময় বদলায়। সময়ের নিয়মেই সময় বদলায়। আধুনিকতা থেকে উত্তর আধুনিকতায় যাত্রা করে সময়।এই যাত্রা অবিরত।এই যাত্রা থেমে যাওয়া,থেমে থাকার নয়।প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পেরিয়ে যায়, তার পরেও যার প্রাসঙ্গিকতা জীবনের অঙ্গ হয়ে থেকে যায় তিনিই রবীন্দ্রনাথ। দেড়শ বছর পরেও তিনি চিন্তায়, চেতনায়, চিরভাস্বর। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি আমাদের মননে, চিন্তনে, ভালোলাগা- ভালোবাসায়, সুখ-দুঃখে, আনন্দ-উল্লাসে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছেন। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেড়শ বছর পরেও তিনি আজকের কবি। এইভাবেই বছরের পর বছর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পেরিয়ে যাবে রবিঠাকুরকে আঁকড়ে ধরে।
বাংলা সাহিত্য এবং বাঙালি জাতির প্রধান ব্যক্তিত্ব আজও স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।সার্ধ-জন্মশতবর্ষ পার করেও এখনও সামগ্রিক বিচারে তিনিই আমাদের অভিভাবক। আমাদের পথপ্রদর্শক।আমাদের অস্তিত্ব। যাঁর প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব আজও অতুলনীয়,অকল্পনীয়। যাঁকে কোনও পরিমাপ দিয়ে মাপা যায় না। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি অঙ্গনে রবীন্দ্রনাথ আজও প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন। শিক্ষিত রুচি ও সুস্থ সংস্কৃতির প্রতীক হিসাবে বাঙালির মনন ও জীবনমানসের তিনিই পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ রূপকার।মঙ্গলবার ছিল পঁচিশে বৈশাখ।কবিগুরুর ১৬২ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। সকাল থেকে নানা কর্মসূচি, নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বকবিকে আমরা স্মরণ করেছি।গোটা বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ জুড়েই হয়তো আমরা মেতে থাকবো রবীন্দ্র স্মরণে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমরা কি রবিঠাকুরের দেখানো পথে চলতে পারছি?তার ভাবনায় নিজেদের ভাবিত করতে পারছি? একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে আজ এটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন। রবীন্দ্রনাথ মানুষকে বলেছিলেন ‘চিরযাত্রী’, মনুষ্যত্বের সারসত্তার দিকে তার নিয়ত অভিযাত্রা বলে। কিন্তু আজ আমরা কোথায় ? রবিঠাকুর বলেছেন, ‘দেশে দেশে কালে কালে মানুষ তার সাধনা দিয়ে এক অখন্ড মানবসত্তা গড়ে তোলে।সেই সত্তা তাকে আপন আত্মা অর্থাৎ আত্মস্বরূপের উপলব্ধিতে পৌঁছে দয়। সকল মানুষের মিলিত সাধনাতেই অন্তর্নিহিত সত্যের সন্ধান পাই আমরা।তা থেকে মানব-মূল্যবোধ তৈরি হয়ে সভ্যতার ভিত্তি পত্তন করে।’ কিন্তু কালের যাত্রায় আজ আমরা পৌঁছেছি অসহিষ্ণু হানাহানিতে।মূল্যবোধ আজ তলানিতে।পশুশক্তিই হয়ে উঠেছে আদ্যাশক্তি!তথাকথিত ধর্মের নামে,রাজনীতির নামে হত্যালীলা,বৈরিতাই হয়ে উঠেছে প্রধান।গোটা বিশ্বই আজ সংকটে জর্জরিত।মানবধর্ম, মূল্যবোধ আজ গভীর সংকটে। হিংসার অস্ত্রে সজ্জিত গোটা বিশ্ব আজ একে অপরের বিরুদ্ধে রক্ত ঝরিয়ে চলেছে। সর্বত্র শুধু ক্ষমতা দখলের লড়াই, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লড়াই। এর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ধ্বংস শুধু সময়ের অপেক্ষা।রবিঠাকুর বলেছেন, ‘শিল্পসাধনার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান আর কর্মের সাধনা মানুষের জগৎকে ক্রম প্রসারিত করে। সকল সাধনার ফসল মানবসম্পদ হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করে। যেমন উত্তরাধিকারী’। রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিসত্তাকে অহং আর ব্যক্তির ভিতরের অর্থাৎ অন্তর্গত সত্তাকে বলেছেন আত্মা।তুলনা দিয়ে বলেছেন, ‘এই ব্যক্তিসত্তাকে যদি প্রদীপ বলি,তো আত্মা হচ্ছে তার শিখা।সেই অন্তর সম্পদই মানুষকে মহৎ করে তুলে’।তাই প্রতি বছর ঘটা করে ২৫ বৈশাখ সকালে কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে, আর রবীন্দ্রগান, নৃত্য, আবৃত্তি করে রবিঠাকুরকে আঁকড়ে রাখা যাবে না। যতক্ষণ না তাঁকে অন্তর থেকে আশ্বস্ত, অনুভব করতে না পারি।আর তখনই সার্থক হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন।