বহুমাত্রিক প্রভাব
দেশের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তথা রাজধানী দিল্লীর শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব কার হাতে থাকবে এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দিল্লী সরকারের তুমুল বিরোধ চলছিল।এই নিয়ে আইনি বিবাদেও জড়াতে দেখা গেছে দুই সরকারকে।কেন্দ্রীয় সরকার ইতিপূর্বে ন্যাশনাল ক্যাপিটেল টেরিটোরি বা এনসিটি আইনের পরিবর্তন করায় দিল্লীর সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ও বিভ্রান্তির জন্ম নেয়।এই জটিল প্রশাসনিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্তিত্বের প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে দিল্লীর ক্ষমতাসীন কেজরিওয়াল সরকার দেশের সর্বোচ্চ আদালত মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচিত দিল্লী সরকার এই দুই সরকারের মধ্যে কাজের সীমারেখা এবং কাজের এক্তিয়ার কী হবে তার ব্যাখ্যা চেয়ে স্পষ্টীকরণ এবং প্রশাসনিক ধোঁয়াশার অবসান চেয়েছিল দিল্লীর আপ সরকার।গত জানুয়ারীতে এই মামলায় কেজরিওয়াল সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে রিট পিটিশনের উপর চারদিন শুনানি করে দেশের শীর্ষ আদালত। দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে এই মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছিল। জানুয়ারীতে চারদিন এই মামলার শুনানি হলেও রায় দান করেনি সাংবিধানিক বেঞ্চ। অবশেষে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যক সাংবিধানিক বেঞ্চ ঐতিহাসিক রায়ে দিল্লীর আপ সরকারের পক্ষেই রায় দেয়।দিল্লীর নির্বাচিত একটি সরকারের হাতে কেন দিল্লীর প্রশাসনিক ক্ষমতা ও এক্তিয়ার থাকবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ সদস্যক সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছেন – যেহেতু জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত একটি সরকারকে দিল্লী বিধানসভায় আইন প্রণয়নের অধিকার তুলে দেওয়া হয়েছে,
তাই দিল্লীর নির্বাচিত সরকারের হাতেই স্থানীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে। সর্বোচ্চ আদালত তাদের রায়ে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে জমি, পুলিশ এবং জননিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া বাদবাকি সমস্ত প্রশাসনিক কাজে শেষ কথা বলবে দিল্লী সরকার। পাশাপাশি দিল্লীর লেফটেন্যান্ট গভর্নর তথা উপরাজ্যপালকে দিল্লী সরকারের সমস্ত সিদ্ধান্ত মেনে চলতে বলা হয়েছে রায়ে ।
দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায় থেকে সাংবিধানিক বেঞ্চ যে বার্তা
দিতে চেয়েছেন তা হলো, গণতান্ত্রিক কাঠামোয় প্রকৃত প্রশাসনিক ক্ষমতা অবশ্যই নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকা উচিত। কিছুদিন আগে দিল্লী সরকারের আবগারি নীতি সহ একাধিক বিষয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নর প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করছিলেন বলে দিল্লী সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করেছিল। সাংবিধানিক বেঞ্চের এই রায়ের পর প্রশাসনের উপর দিল্লীর কেজরিওয়াল সরকারের নিয়ন্ত্রণ যে অনেকটাই বেড়ে গেল সেটাও স্পষ্ট।কারণ রায়ে একথাও বলা হয়েছে,সরকারের অফিসাররা যদি মন্ত্রীদের কাছে রিপোর্ট করা বন্ধ করে দেন, তাদের নির্দেশ অমান্য করেন তাতে সামগ্রিকভাবে যৌথ দায়বদ্ধতার নীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের এই রায়কে বিভিন্ন আঙ্গিকে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটা দিল্লীর কেজরিওয়াল সরকারের বড় জয়।তার চেয়েও বড় কথা দিল্লীতে কেন্দ্র এবং দিল্লী সরকারের মধ্যে গত আট বছর ধরে এই ইস্যুতে যে দীর্ঘ বিতর্ক ও বিভ্রান্তি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে এক রায়ে তার নিষ্পত্তি করে দিলেন।পাশাপাশি বিরোধী দল পরিচালিত সরকারকে বাগে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যপাল বা উপরাজ্যপালকে দিয়ে বিভিন্ন সময়ে হস্তক্ষেপ ঘটিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে বরাবরই কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলে থাকেন বিরোধীরা।দিল্লীর লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে এই ক্ষেত্রে তার এক্তিয়ার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো,এই রায়ের ফলে দেশে কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের বিতর্কের প্রশ্নে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।