রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
আগরতলা স্টেশনে ঠাঁই নাই অবস্থা, সুরক্ষা সঙ্কটে
দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি || অন্তহীন সমস্যার আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে আগরতলা রেল স্টেশন। ফলে স্টেশনের যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে উঠেছে বড়োসড়ো প্রশ্ন। সৃষ্টি হয়ে চলছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। রাজ্যের সর্বাধিক ব্যস্ত ও প্রধান স্টেশনটিতে যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে মারাত্মক অঘটন। নিয়মিত আশঙ্কাকে সঙ্গী করেই স্টেশনে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে যাত্রীদের।নানা সঙ্কটে জর্জরিত স্টেশনটিতে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে যাত্রী দুর্ভোগ।ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলার নামে নামাঙ্কিত স্টেশনটির সঙ্কটজনিত চাপ গিয়ে পড়ছে অন্য স্টেশনে।পরিকাঠামোগত নানা ঘাটতি দূর করা ছাড়া আগরতলা থেকে সব ধরনের চাপ অন্যত্র চালান করাও সম্ভব নয়।এমতাবস্থায় চরম যাত্রী দুর্ভোগ ও সুরক্ষাজনিত আশঙ্কা একমাত্র সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে স্টেশনটির।আগরতলা রেল স্টেশনের কোন সমস্যাটি যে প্রধান ও প্রথম তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।কেন না স্টেশনটির অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘সর্ব অঙ্গে ব্যথা,ওষুধ দেব কোথা’র মতো। নিত্য যাত্রী ও রেলের সঙ্গে যুক্তদের বক্তব্য এমনই।ভুক্তভোগীদের অভিমত যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে প্রাথমিকভাবে দুইটি কাজ করতে হবে।তার একটি হলো আগরতলা স্টেশনের অভ্যন্তরে পায়ে চলার সেতু ফুট ওভার ব্রিজের সংখ্যা বৃদ্ধি।আর অন্যটি হলো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বৃদ্ধি।যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অন্তত একটি পায়ে চলার সেতু এবং প্ল্যাটফর্মের একটি ভিত্তি তৈরি করা দরকার।তা হলে সুরক্ষাজনিত সমস্যাও অনেকটা লাঘব হবে বলে রেল সূত্রের খবর।আর প্ল্যাটফর্মের একটি ভিত্তি তৈরি হলে দুইটি প্ল্যাটফর্মে কাজ চলবে। এছাড়া স্টেশনটির অভ্যন্তরে রেলপথ তথা ইয়ার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধসহ আনুষঙ্গিক বহু কাজ করতে হবে।গড়ে আগরতলা স্টেশনে প্রতিদিন প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করে।।
দৈনিক ৫ জোড়া ডেমু এবং এক জোড়া স্বল্প দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন সহ গড়ে ১০ জোড়ার বেশি যাত্রী ট্রেন আগরতলা স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে।এর মধ্যে সাব্রুম-আগরতলা, আগরতলা- আগরতলার সঙ্গে কলকাতা, ভোপালের হাবিবগঞ্জ সহ রাণী কমলাপতি,সেকেন্দ্রাবাদ ইত্যাদি স্টেশনের দূরপাল্লার সাপ্তাহিক ট্রেনের সংযোগ রয়েছে।এসব ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে আগরতলা স্টেশনে।সেই সঙ্গে যাত্রীদের বিদায় সংবর্ধনা এবং অভ্যর্থনা জানাতে আসা লোকজন রয়েছে।রয়েছে সংরক্ষিত এবং অসংরক্ষিত টিকিট কাটতে আসা মানুষ, রয়েছে অটো এবং বিভিন্ন যানবাহনের সঙ্গে যুক্তরা।বিপুল সংখ্যক মানুষের চাপ সামলানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে আগরতলা স্টেশনে থাকা পরিকাঠামোর পক্ষে।এর মধ্যে যাত্রীদের উপর সরাসরি প্রভাব পড়ছে পায়ে হাঁটা সেতু এবং পর্যাপ্ত প্ল্যাটফর্মের অভাব। বিশেষ সপ্তাহের প্রতি মঙ্গল ও শনিবার পরিস্থিতি কাহিল হয়ে পড়ে।নাজেহাল অবস্থা হয় যাত্রীদের।এই দুই দিন বিপাকে পড়তে হয় স্টেশন কর্তৃপক্ষকেও। কেন না দূরপাল্লা, স্বল্প দূরপাল্লা ও স্থানীয় পর্যায়ের ট্রেন মিলিয়ে সপ্তাহে এই দুই দিন আগরতলা স্টেশনে সবচেয়ে বেশি যাত্রীট্রেন থাকে।এর মধ্যে শনিবার থাকে সবচেয়ে বেশি যাত্রীট্রেন।বিশেষত শনিবার সহ মঙ্গলবার সকালে আগরতলা স্টেশনে প্রায় তিল ধারণের স্থান থাকে না।এই অবস্থায় স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে দুই ও তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসা- যাওয়া অথবা উল্টোটা করতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা হয় যাত্রীদের।জোগাড় হয় চিঁড়ে চ্যাপ্টা হওয়ার মতো পরিস্থিতি।ফলে শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সহ মহিলা যাত্রীদের নাকাল হতে হয়।অনেকেই হয়ে পড়ে অল্প-বিস্তর অসুস্থ।তার উপর একমাত্র ফুট ওভারব্রিজটির ভেঙে পড়ার উপক্রম হয় মাঝে মধ্যে।তাছাড়া শনিবার ভোর সোয়া পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত স্টেশনের তিনটি প্ল্যাটফর্ম থেকে পাঁচটি ট্রেন ছাড়ে। ফলে এক প্ল্যাটফর্মে একের বেশি ট্রেন ছাড়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।এসব কারণে বাড়ছে যাত্রী দুর্ভোগ ও সুরক্ষাজনিত ঝুঁকি।প্রায় প্রতিদিন ঘটছে মোবাইল,স্বর্ণালঙ্কার,নগদ অর্থ চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা। সর্বশান্ত হচ্ছেন বহু যাত্রী। বাড়ছে আগরতলা স্টেশনের উপর চাপ।
এই পরিস্থিতিতে আগরতলা স্টেশনে চলমান সিঁড়ি বসানোর কাজ চলছে এই সিড়ি তথা এক্সালেটর বসানোর কাজ শেষের পথে।তবে উল্লেখিত সমস্যার নিরসন না করে চলমান সিঁড়ি বসিয়ে মূল সঙ্কটের সুরাহা হবে না বলে খবর।কারণ এই সিঁড়ি বসছে স্টেশনের একদিকে, এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ফলে এই সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাত্রীদের নির্ভর করতে হবে সেই ফুট ওভার ব্রিজের উপরই। আবার ফুট ওভার ব্রিজের উপর নির্ভর করেই এই সিঁড়ি বেঁয়ে আসতে হবে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে। তাছাড়া আগরতলা স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী প্রচুর দূরপাল্লার ট্রেন চলাচলের প্রশ্নে মাত্র ১৭টি রেলপথ তথা ইয়ার্ড কম পড়ে যাচ্ছে।এই কারণে স্টেশনে বিভিন্ন ট্রেনের কোচ তথা রেলের পরিভাষায় রেক রাখা হয়ে পড়ছে মুশকিল।এই সমস্যা লাঘবে বিশালগড় সহ অন্য স্টেশনে এসব রাখতে হচ্ছে। তাতে আবার তৈরি হচ্ছে ভিন্নতর সমস্যা। সব মিলিয়ে ঠাঁই নাই, ঠাই নাই’ অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে আগরতলা স্টেশনে। বাড়ছে যাত্রী দুর্ভোগ ও সুরক্ষাজনিত আশঙ্কা।