পোস্টারে ভোট মেলে না !

 পোস্টারে ভোট মেলে না !
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কর্নাটকে পরাজয়ের পর পদ্মশিবিরে অনেকেই বেসুরো গাইছেন।এরমধ্যে অন্যতম কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ মন্রী নীতিন গড়করি।মোদি মন্ত্রিসভার সবথেকে সফল মন্ত্রী।এই নিয়ে গোটা দেশেই কোনও দ্বিমত নেই। মোদি জমানায় যে ক’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আন্তরিক প্রয়াসের কারণে দেশের পরিকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নীতিন গড়করি তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানে।বরাবরই সোজাসাপটা কথা বলেন।সেই গড়করি সোমবার ভোটমুখী রাজস্থানের শিকার জেলায় একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।তিনি বলেছেন,“পোস্টার-ব্যানার দেখিয়ে ভোট পাওয়া যায় না। মানুষের মন পেতে হলে জনসেবা করতে হয়।”গড়করির এই মন্তব্য ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে।শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক মহলেও গড়করির এই মন্তব্য ঘিরে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন,কাকে বা কাদের উদ্দেশে এই কথা বলতে চেয়েছেন মোদি মন্ত্রিসভার এই সদস্য?সদ্য কর্ণাটক বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে।গত আটত্রিশ বছরের ইতিহাস বলছে,দক্ষিণের এই রাজ্যে কোনও দলই পাঁচ বছরের বেশি টানা শাসন করার সুযোগ পায়নি। এবারও সেই ধারাবাহিকতাই বজায় থাকলো। গতবারের তুলনায় এবার ৩৮ আসন কম পেয়েছে বিজেপি। ফল প্রকাশের দুই দিনের মাথায় গড়করির এই মন্তব্যের নিশানায় কে? তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না কারোরই।রাজনীতিতে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলাতে বেশ নামডাক হয়েছে গড়করির।বিজেপির আরেক প্রাক্তন সভাপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর মতো গড়করিও রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ, আত্মপ্রচারের তীব্র বিরোধী। বরাবরই প্রচারের আলোর বাইরে থাকতে পছন্দ করেন।অকারণে কোনও মন্তব্য এবং বিতর্কে জড়ান না।এমনকী সুরও মেলান না। বলতে গেলে মোদি-শাহ জমানায় চলতি ঘরনার বিপরীতমুখী মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই তার এই মন্তব্য বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গড়করি সঙ্ঘ পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং সঙ্ঘের সদর দপ্তর
নাগপুরের সাংসদ। ঘটনাচক্রে মোদি মন্ত্রিসভার এই মন্ত্রী নিজেও নানা সময়ে দাবি করেছেন, তিনি সর্বদা কাজের বিনিময়ে ভোট চান। তার কথায়, ‘আমি যা কাজ করেছি, তাতে ভোট চাওয়ার অধিকার আমার আছে।’ এমনকী তিনি আগাম ঘোষণা করেছেন,আগামী লোকসভা নির্বাচনে তিনি সাড়ে তিন লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতবেন।এরজন্য তিনি ভোট ভিক্ষা করবেন না।পোস্টার, ব্যানার, সভা-সমিতি, রোড-শো কিছুই করবেন না।এমনকী কাউকে খাতির করে এক কাপ চাও খাওয়াবেন না। তার কথায়, ‘নিজের কেন্দ্র ও দেশের জন্য যে কাজ করেছি তাতে রেকর্ড মার্জিনে জয় নিশ্চিত।ধর্ম,বর্ম নির্বিশেষে মানুষ আমাকে ভোট দেবেন।’কর্ণাটকে এবার নানা কারণেই বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত ছিলো।এটা দলও বুঝতে পেরেছিলো। সরকারের ব্যর্থতা, দলের অন্দরে একাধিক উপদল, নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত কর্ণাটকের পরাজয়কে নিশ্চিত করেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেষসময়ে চোখ ধাঁধানো প্রচারে নেমেছিলেন। ভেবেছিলেন, হয়ত উতরে যাবেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চোখ ধাঁধানো প্রচারও মানুষ ভালোভাবে নেয়নি বলে নানা মহল থেকে কথা উঠেছে। বিশেষ করে বেঙ্গালুরুতে প্রধানমন্ত্রীর দু’দিন ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা আটকে রোড-শো নিয়ে তুমুল সমালোচনা হতে দেখা গেছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। নিন্দায় মুখর হন বহু মানুষ।
সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের নভেম্বরে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে রাজস্থানে।রাজ্যে বর্তমানে ক্ষমতায় কংগ্রেস। যদিও প্রচারের বহরে এখনই অনেকটা এগিয়ে পদ্মশিবির। পোস্টার, ব্যানার, কাটআউটে ছেয়ে গেছে। ভোটের ছয় মাস আগে থেকেই মোদিময় মরুরাজ্য। গেহলট-শচীন পাইলটের বিরোধের মতো পদ্মশিবিরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিছু কম নয়।শুধু প্রচারের জৌলুসে গোষ্ঠীবিবাদ ঢাকা পড়ে আছে। এসব দেখে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি নীতিন গড়করির রাজস্থানের মাটিতে দাঁড়িয়ে এমন মন্তব্য শুধু তাৎপর্যপূর্ণই নয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিও বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.