ভূস্বর্গে জি-২০
গোটা বিশ্বের নজর এখন কাশমীরে। সোমবার থেকে কাশমীরে শুরু হয়েছে জি -২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির তৃতীয় ট্যুরিজম ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। তিনদিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সফলভাবে আয়োজন ও সম্পন্ন করতে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।আকাশ, জল, স্থল কোথাও মাছি গলারও সুযোগ নেই। এককথায় জি-২০ বৈঠকের দৌলতে ভোলবদল গোটা উপত্যকার। এই বৈঠকের মুখ্য কোঅর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন,এখনও অবধি দেশে মোট ১৮টি জি-২০ গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে,নানা ইস্যুতে। এর মধ্যে কাশ্মীরের শ্রীনগরে আয়োজিত বৈঠকেই সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। ডাল লেকের তীরে অবস্থিত শেরি কাশ্মীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারকেই জি-২০ বৈঠকের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর, এই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভূস্বর্গে। জি-২০ সদস্য দেশগুলি থেকে ৬০ জন সহ বিশ্বের ১৮০ টিরও বেশি প্রতিনিধি দল এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার ।এদিকে, কাশ্মীর ভারতের অংশ নয়, এটা প্রমাণ করতে জন্ম থেকেই কান্নাকাটি করে চলেছে পাকিস্তান।এটি নতুন কিছু নয়। এবার কাশ্মীরে জি-২০ বৈঠক আয়োজন করা নিয়ে সরব হয় পাকিস্তান। পাকিস্তানের সুরে সুর মিলিয়েছে চিন ও তুরস্ক। তারা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে। চিন বিবৃতিতে বলেছে, কাশ্মীরের মতো বিতর্কিত জায়গায় কোনও বৈঠক হলে তারা যোগ দেবে না। এর আগে অরুণাচলে আয়োজিত বৈঠকেও চিন যোগ দেয়নি। কাশ্মীরে জি-২০ বৈঠক আয়োজনের বিরোধিতা করে পাকিস্তান আগেই ওআইসি তথা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কর্পোরেশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলো।তারা যাতে কাশ্মীরের জি-২০ বৈঠক উপেক্ষা করে এবং বয়কট করে।এই অনুরোধে ওআইসির সদস্য না হয়েও চিন সাড়া দিলেও, আরব আমিরাত সহ আরও কয়েকটি ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশ কিন্তু সায় দেয়নি।যা বেশ তাৎপর্য বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের মতে পাকিস্তানের সেন্টিমেন্টের ফাঁদে পা দিয়ে চিন উল্টো ভারতের হাতে মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার যদি পাল্টা কোনওদিন চিনও তিব্বতের মতো কোনও বিতর্কিত এলাকায় কোনও সামিট বা বৈঠক আয়োজন করে, সেখানে ভারতের হাতে পুরো সুযোগ থাকবে বিরোধিতা করার। ভারতও সেই সামিট বা বৈঠকে অংশ না নিতে পারে।অস্ত্রটা কিন্তু নিজের হাতে তুলে দিল ড্রাগনের দেশ।সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, জি-২০ সদস্যভুক্ত দেশগুলি থেকে যদি তিন থেকে চারটি দেশও বয়কট করে,তাহলেও আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। কারণ বাকি ১৬ বা ১৭ দেশ মনে করে কাশ্মীর ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।কূটনৈতিক মহলের মতে,কাশ্মীরে এত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈঠক আয়োজনের নেপথ্যে রয়েছে ভারতের কৌশলী চাল।এই কৌশল শুধু পাকিস্তানকে খোঁচানোই নয়, বরং ভারতের আধিপত্যকে আরও মজবুত করা।কাশ্মীরের মতো জায়গায় গোটা বিশ্বের প্রতিনিধিরা আসবেন।তারা দেখবেন কাশ্মীরের পরিকাঠামো। আন্তর্জাতিক স্তরে যখন খবর হবে যে, আমেরিকা, রাশিয়া সহ বিশ্বের তাবড় শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা কাশ্মীরে বৈঠক করছেন।তখন অনেকেই বুঝবে কাশ্মীরের অবস্থা একেবারেই তেমন নয়, যেমনটা পাকিস্তান দুনিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করে। আর এটাকেই ভারতের বড়সড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।