তালিকায় রিসা, রিগনাই, পেঁড়া সহ ২৫ আইটেম,কুইন আনারসের জিআই ট্যাগ ব্যবহারের অনুমতি চাষিদের।।।

 তালিকায় রিসা, রিগনাই, পেঁড়া সহ ২৫ আইটেম,কুইন আনারসের জিআই ট্যাগ ব্যবহারের অনুমতি চাষিদের।।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি || রাজ্যের তিনশ আনারস চাষিকে কুইন আনারসের জি আই ট্যাগিং ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হলো।শুক্রবার রাজধানীর প্রজ্ঞা ভবনে ডোনার মন্ত্রকের অধীনস্থ নর্থ ইস্ট রিজিওন্যাল এগ্রিকালচারেল মার্কেটিং কর্পোরেশন (নেরাম্যাক) আয়োজিত সেমিনারে উপস্থিত কৃষকদের হাতে জিআই ট্যাগ ব্যবহারের সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়।সম্প্রতি উত্তর-পূর্বের তেরোটি পণ্যের জন্য জিআই ট্যাগ অর্থাৎ জিওগ্রাফিকেল ইণ্ডিকেশন মানে ভৌগোলিক নির্দেশক ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে ত্রিপুরার কুইন আনারস একটি।উল্লেখ্য, গোটা দেশে ৪৬২টি জিআই ট্যাগ অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী আছে।
ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই ট্যাগ হলো এমন একটি চিহ্ন যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান থেকে উদ্‌বৃত্ত বা তৈরি হওয়া পণ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন বা মনুষ্যসৃষ্ট যে পণ্যগুলোর খ্যাতি রয়েছে,সেগুলোকেই এই বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।প্রজ্ঞা ভবনে আয়োজিত এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথ,পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত আইজি এক্সপার্ট ডক্টর রজনীকান্ত দ্বিবেদী।এই প্রথম ডক্টর দ্বিবেদী ত্রিপুরায় এসেছেন।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন,নেরাম্যাকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজীব অশোক, রাজ্যের কৃষি সচিব অপূর্ব রায়, নাবার্ডের জেনারেল ম্যানেজার (ত্রিপুরা) লোকেন দাস সহ অন্য আধিকারিকরা।প্রজ্ঞা ভবনে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং জিআই বিশেষজ্ঞ পদ্মশ্রী ডক্টর রজনীকান্ত দ্বিবেদীর বক্তব্য থেকে জানা গেছে,শুধু কুইন আনারসই নয়।রাজ্য থেকে জিআই ট্যাগের তালিকায় আরও পঁচিশটি আইটেম আছে।যার শীঘ্রই অনুমোদন আসবে বলে তারা জানান।আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও তিনটি আইটেম জিআই ট্যাগিংয়ের স্বীকৃতি পাবে।সেগুলি হলো – জনজাতিদের হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী রিসা (উত্তরীয়), জনজাতিদের হাতে তৈরি রিগনাই (পাছড়া) এবং উদয়পুর মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের পেঁড়া।
তালিকায় আছে বিন্নি ধান, কালি খাসা চাল, গন্ধরাজ লেবু, সবরি কলা, কাঁঠাল, চিমরাই, আগর, লাঙ্গি,গোদক, চাকুই, সিঁদল, হজাগিরি নৃত্য, চংগ্রেং (বাদ্যযন্ত্র), বাঁশের তৈরি সামগ্রী সহ মোট পঁচিশটি সামগ্রী।কৃষিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদিত এবং তৈরি করা পণ্যের একাধিক দাবিদার থাকে। আমরা আধুনিক হবো,কিন্তু ঐতিহ্যকে যাতে না ভুলি।তাই উৎপাদিত এবং তৈরি করা পণ্যের প্রকৃত উৎস নিশ্চিত করা জরুরি।এই জন্যই ১৯৯৯ সালে দেশে ভৌগোলিক নির্দেশক আইন প্রনয়ণ করা হয়।কিন্তু দুর্ভাগের বিষয় হচ্ছে দেশে আইন প্রনয়ণ হলেও তার সঠিক ব্যবহার হয়নি।নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই এই ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষির দীর্ঘস্থায়িত্ব, কৃষকদের অধিকার রক্ষা এবং দেশের
কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ হিসাবেই এই জিআই ট্যাগের প্রক্রিয়া।এই প্রচেষ্টাকে রাজ্যের কৃষকরা বিশেষভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন,বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের ফসলের বিমার সুযোগ থেকে শুরু করে কৃষি রেল,কৃষির সরঞ্জাম প্রদান সহ নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজ্য সরকারও কাজ করে চলেছে।তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে কুইন আনারস ছাড়াও নানা রকম ফসল,খাবার, ঐতিহ্য রয়েছে,যেগুলোর জিআই ট্যাগ সম্ভব।এগুলো নিয়েও যাতে ভবিষ্যতে কিছু কাজ হয় তার জন্য রাজ্য সরকার প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট জিআই বিশেষজ্ঞ পদ্মশ্রী প্রাপক ডক্টর রজনীকান্ত দ্বিবেদী জিআই ট্যাগিং কেন প্রয়োজন,এটা হলে কৃষকদের লাভ হবে,এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি কুইন আনারসের গুণমান নিয়ে প্রশংসা করেন।অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে নেরাম্যাকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অবসরপ্রাপ্ত কোমোডর রাজীব অশোক জানান, জিআই ট্যাগিংয়ের ফলে ত্রিপুরার কুইন আনারসের অনন্য গুণমান ও খ্যাতির বিশেষ স্বীকৃতি আসবে।কীভাবে আনারস চাষিরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এই ট্যাগিং ব্যবহার করে উপার্জন ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করতে পারেন,তা নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।উল্লেখ্য প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে স্তব্ধ হয়ে থাকা নেরাম্যাক আবার সচল হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে তারা সাড়ে তেরো হাজার মেট্রিকটন কুইন আনারস ক্রয় করে দিল্লী, উত্তরপ্রদেশ এবং গুয়াহাটিতে পাঠিয়েছে।এছাড়াও নেরাম্যাক তাদের উৎপাদিত নানা সামগ্রী বিক্রির জন্য শহরের একটি শোরুম খুলছে শীঘ্রই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.