শিল্পবান্ধব পদক্ষেপ খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার দ্বার : মুখ্যমন্ত্রী
অনলাইন প্রতিনিধি || আগামী দুই দশকে রাজা হাঁটলে সুসংহত আয়নের পথে।যার লক্ষ্যে রূপরেখা তৈরি করে নিয়েছে রাজা। শনিবার নয়াদিল্লীতে নীতি আয়োগের বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের ভবিষ্যৎ দিশার কথা বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবগণসহ নীতি আয়োগের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা ‘লক্ষ্য ২০৪৭’ শীর্ষক রাজ্যের লক্ষ্যমাত্রার কথাও বৈঠকে মেলে ধরেছেন।তিনি বলেছেন, এমএসএমই ক্ষেত্রের উন্নয়ন বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কে অন্যমাত্রা যোগ করেছে।যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন এই অবস্থায় আরও উন্নয়ন ঘটাবে।খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রাবার, চা, বাঁশভিত্তিক শিল্প, হস্তশিল্প সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের সম্ভাবনার কথাও মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা মেলে ধরেছেন।তিনি বলেন, শিল্পের বিকাশে রাজ্য সরকার সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলেছে। যার সুফল মিলছে।টিআইআইপি আইএস এমএসএমই-গুলির জন্য স্কিমে মূলধনী ভর্তুকি, কম খরচে বিদ্যুৎ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগর নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের লক্ষ্যমাত্রার কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেশের মধ্যে আগর বাণিজ্যের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ত্রিপুরা আগরউড পলিসি ২০২১ প্রকাশ করেছে।২০২৫ সালের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের অর্থনীতির সুযোগ নেওয়ার
লক্ষ্যেই এই প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,রাজ্য সরকার বিনিয়োগ বাড়াতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে উন্নয়নমুখী প্রশাসন চালাতে অঙ্গীকারবদ্ধ।সরকার ইতিমধ্যে উৎপাদন নির্ভর শিল্পে বেসরকারী বিনিয়োগ টানতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।সেই উদ্দেশ্যেই ‘স্বাগত’ পোর্টালের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলিকে ‘সিঙ্গল উইণ্ডো সিস্টেমে’ অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই পোর্টালে ১৭টি দপ্তরের ৬০টি পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে যাতে ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুমোদন তাড়াতাড়ি দেওয়া যায়।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার তার মূলধনী ব্যয় ২০২০-২১ এর ৮৩৫.০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২২-২৩ বছরে ২২০০ কোটি টাকা করেছে অর্থাৎ বার্ষিক বৃদ্ধি হয়েছে ৬২ শতাংশ।নর্থ-ইস্ট গ্লোবাল ইনভেস্টস সামিট-২০২৩- এর প্রাক্কালে রাজ্য সরকার ডোনার মন্ত্রকের সাথে মিলে রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখতে একটি গোল টেবিল সম্মেলন করেছে।এই সম্মেলনের ফলে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সাথে ৩৩৮.০০কোটি টাকা মূল্যের মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে।শিল্পোন্নয়নের জন্য দুই হাজার একর জমি চিহ্নিতকরণ, পিপিপি প্রকল্প, বিশেষ আর্থিক জোন স্থাপন ইত্যাদি উদ্যোগও রাজ্য সরকার নিয়েছে এবং রাজ্যের ১৫টি শিল্প নগরীয় উন্নয়নের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কও ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।বিমান যাত্রীদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার এভিয়েশন টার্বাইন ফিউল-এ ১ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে দিয়েছে। নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলা-চট্টগ্রামের মধ্যে বিমান পরিষেবাকে উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকার বার্ষিক ১৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। বিজনেস রিফর্মস অ্যাকশন প্ল্যান (বিআরএপি) ২০২০-র রিপোর্টে ত্রিপুরাকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রগতিশীল শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ে রাখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় দক্ষতা এবং পরম্পরার বিকাশ ও সংরক্ষণে রাজ্য৷সরকার ব্যাপকভাবে ‘ভোক্যাল ফর লোক্যাল’ নীতি প্রচার করে চলেছে। স্থানীয় উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সম্পদকে ব্যবহার করে ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্যেই এই নীতির ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে যেসব কাজের বা পেশার চাহিদা রয়েছে সেগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য রাজ্যে একটি ‘স্কিল গ্যাপ স্ট্যাডি’ শীর্ষক সমীক্ষা করা এই সমীক্ষা করা হয়েছে রাজ্যের যে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া যায় সেগুলির উপর নির্ভরশীল শিল্পগুলিতে।বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটকদের কাছে রাজ্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাজ্য সরকার একটি সার্বিক পরিকল্পনা নিয়েছে। সে জন্য এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই লক্ষ্যে রাজ্যের সর্বত্র উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পর্যটকদের জন্য থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা, পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আয়ুর্বেদিক পার্ক, পঞ্চকর্ম কেন্দ্র, যোগ ব্যায়াম ও ওয়েলনেস কেন্দ্র,নেচারোপ্যাথি কেন্দ্রের মতো পরিকাঠামো গড়ে তুলে ত্রিপুরাকে একটি চিকিৎসাকেন্দ্রিক সুস্বাস্থ্যের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে রাজ্য সরকার ‘ত্রিপুরা মেডিকেল ট্যুরিজম পলিসি’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পিএম গতিশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজ্যকে ‘ফার্স্ট মুভার’রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।এই প্রকল্পে ১০৯.১৯ কোটি টাকা মূল্যের আটটি প্রকল্প চিহ্নিত করে অর্থ মঞ্জুরির জন্য ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ইণ্ডাস্ট্রি অ্যাণ্ড ইন্টারনেল ট্রেডের (ডিপিআইআইটি) কাছে পাঠানো হয়েছে।এর মধ্যে চারটি প্রকল্পের জন্য ৩৫ কোটি টাকা ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রকের অধীন ব্যয় দপ্তরের মঞ্জুরি পাওয়া গেছে।দ্য ত্রিপুরা ইন্টিগ্রেটেড লজিস্টিক পলিসি-২০২২ তৈরি করা হয়েছে এবং ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারী তা বিজ্ঞাপিত হয়েছে।