মোদির নয় বছর
নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের নয় বছর পূর্তি হলো।২০১৪ সালে ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি শপথ নিয়েছিলেন।সেই অর্থে গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির নয় বছর পূর্ণ হলো।এই নয় বছরে তার সরকারের এবং দেশের সমৃদ্ধি ও সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে ২০২৪-এর লোকসভা জয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে পদ্মশিবির।শুধু পরিকল্পনা নিয়েছে বললে ভুল হবে, বলা যায় দেশব্যাপী প্রচারের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।নয় বছরের যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং নয় বছরে সরকারের সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে একমাস ব্যাপী মেগা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পদ্মশিবির। আগামী ৩১ মে রাজস্থানের আজমিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশাল জনসভার মাধ্যমে এই কর্মসূচির সূচনা হবে। দেশব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।এই একমাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫১টি বড় জনসভা করার পরিকল্পনা নিয়েছে দল।যার মধ্যে কম করে আটটি জনসভায় ভাষণ দেবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি।এই মেগা কর্মসূচির সূচনার জন্য রাজস্থানকে বেছে নেওয়ার পিছনেও রয়েছে পদ্ম শিবিরের বিশেষ পরিকল্পনা। কেননা, আগামী মাস ছয়েকের মধ্যেই রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।তাই নয় বছর পূর্তির মেগা প্রচার কর্মসূচি রাজস্থানের মাটি থেকেই শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে দল। পুরো মাসব্যাপী যাবতীয় অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি থিম সং।রয়েছে একাধিক ভিডিও সিরিজ।এর মধ্যে রয়েছে, উজ্জ্বলা যোজনা থেকে শুরু করে আয়ুষ্মান ভারত যোজনা,কোভিড ভ্যাকসিন, ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন, নয় বছরে ৭৪টি বিমানবন্দর,৫৪ হাজার কিমি জাতীয় সড়ক নির্মাণ,১১১টি জলপথ, ১৫টি শহরে মেট্রোরেল,১৭টি বন্দে ভারত ট্রেন চালু, রাম মন্দির, কাশী বিশ্বনাথ করিডর, উজ্জয়নী মহাকাল লোক প্রকল্প, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার সহ একাধিক সাফল্যের খতিয়ান। রয়েছে বিশ্ব নেতৃত্বের সামনে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের কাহিনী। রয়েছে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ কিষান সম্মান নিধি, মহিলা ক্ষমতায়ন সহ একাধিক প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নয় বছরের শাসনকালে মোদি সরকার বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদি।যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘নোট বন্দি’, ‘কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার’ ‘তিন তালাক’ ইত্যাদি। এদিকে, পদ্মশিবির যখন মাসব্যাপী সাফল্যের প্রচার নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে তখন বসে নেই বিরোধীরাও। বিশেষ করে কংগ্রেস দল মোদির নয় বছরের শাসককালে ‘নয় বছর, নয় প্রশ্ন’ শীর্ষক পুস্তিকা প্রকাশ করে পাল্টা প্রচারে নেমেছে। অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে আদানি,সামাজিক অনৈক্য থেকে কোভিডের সময় অব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে নয়টি প্রশ্ন তুলে ধরেছে।রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি, ঘৃণা ও বেকারত্ব। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর জনতার দুর্দশার উপরে বিজেপি নয় বছরের ইমারত খাড়া করেছে বলে কংগ্রেসের দাবি।অন্যদিকে নয় বছরের রাজত্বকে ‘সেবা-সুশাসন ও গরিব কল্যাণ’-এর সময়কাল হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করছে বিজেপি। একদিকে নয় বছর, নয় সাফল্য’ অপরদিকে ‘নয় বছর, নয় প্রশ্ন’ নিয়ে জাতীয় রাজনীতি যখন তোলপাড় হচ্ছে, তখন সম্প্রতি প্রকাশিত জনমত সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, পঞ্চাশ শতাংশ মোদি বিরোধীরাও মনে করে নয় বছরের শাসনকালে মোদি অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেশের ১৮ বছরের যুবা থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ, প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন দেখা গেছে মোদির পক্ষে।ফলে মোদির নয় বছরের শাসনকালে সাফল্য যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে।সেটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।ব্যর্থতার মধ্যেই রয়েছে সাফল্যের জয়গান।এটাই বাস্তবতা। গণতন্ত্রে বিতর্ক ছিলো, আছে, আগামী দিনেও থাকবে।বিচার ও মূল্যায়নের দায়িত্ব শুধু মানুষের।