প্রশ্নের মুখে স্মার্ট সিটি প্রকল্প, ভিআইপি রোড, নির্মাণ সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি।

 প্রশ্নের মুখে স্মার্ট সিটি প্রকল্প, ভিআইপি রোড, নির্মাণ সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি || আগরতলা এয়ারপোর্ট রোডের নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এবং দুই দফা খবর প্রকাশের পর বিভিন্ন মহল থেকে আরও যেসব তথ্য এবং ভুকি ভুরি অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট হায়দ্রাবাদস্থিত একটি প্রতারক ঠিকাদার সংস্থার খপ্পরে পড়েছে আগরতলা স্মার্ট সিটি মিশন কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, এই সংস্থার খপ্পরে পড়ে পথে বসতে চলেছে রাজ্যের একাধিক নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহকারী এজেন্সি এবং ঠিকাদার।সামগ্রী সরবরাহের পনেরো দিনের মধ্যে অর্থ প্রদান করা হবে।এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজ্যের একাধিক এজেন্সি ও ঠিকাদারের কাছ থেকে বালু, পাথর, সিমেন্ট, রড এনেছে এই সংস্থাটি।পনেরো দিনের জায়গায় বছর ঘুরে গেলেও সাপ্লায়ারদের টাকা দেওয়া হয়নি।অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন সাপ্লায়াররা পাওনা।ফলে সাপ্লায়ারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকেই এখন ওই ঠিকাদার সংস্থাকে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকী গাড়ি ভাড়া নিয়েও গাড়ি ভাড়ার টাকা প্রদান করছে না। খবর নিয়ে জানা গেছে, উদয়পুরের এক ব্যক্তি এই ঠিকেদার সংস্থার কাছে শুধু গাড়ি ভাড়া বাবদ সত্তর থেকে আশি লক্ষ টাকা পাওনা।যে সাপ্লায়ার পাঁচ লক্ষ টাকা পাবে, তাকে হয়তো দেওয়া হয়েছে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা। সব থেকে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, কোনও একজন সাপ্লায়ার হয়তো বালু সরবরাহ করেছে। কয়েকদফা এই সাপ্লায়ার থেকে বালু নিয়ে টাকা না দিয়ে, নতুন করে অন্য একজনের কাছ থেকে বালু নেওয়া হয়। দ্বিতীয় জনের কাছ থেকে কয়েকদফা নিয়ে, তাকেও টাকা না দিয়ে তৃতীয় একজনের কাছ থেকে নেওয়া হয়। শুধু বালু নয়, পাথর, সিমেন্ট, রড, গাড়ি সব ক্ষেত্রেই এই সংস্থাটি এমন ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চলছে বলে অভিযোগ।এমন অনেকেই ওই নির্মাণ সংস্থার এই প্রতারণা ধরে ফেলেছে।ফলে সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে।যে কারণে কাজের গতি কচ্ছপকেও হার মানিয়েছে। বাকিতে এমন কেউই নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করছে না। ঠিকাদার সংস্থাটির নাম শুনলেই সবাই পিছিয়ে যায়।শুধু সাপ্লায়াররাই নয়, শ্রমিকরা পর্যন্ত সংস্থাটির নাম শুনলে কাজ করতে রাজি হয় না। শ্রমিকদের মজুরি পর্যন্ত দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে বহু শ্রমিক কাজ ছেড়ে চলে গেছে। নতুন করে শ্রমিকও পাচ্ছে না বলে অভিযোগ।এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে, আগরতলা থেকে এই সংস্থাটিকে কেউ পেট্রোল-ডিজেল পর্যন্ত দেয় না। কৈলাসহর থেকে পেট্রোল ডিজেল আনতে হয় বলে খবর। এর থেকেই স্পষ্ট,যে কাজ আঠারো মাসে সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা, সে কাজ কেন আড়াই বছরে মাত্র কুড়ি শতাংশ এগিয়েছে।যে নির্মাণ সংস্থার নাম শুনলে সাধারণ শ্রমিক পর্যন্ত পালিয়ে যায়, সে নির্মাণ সংস্থা
সম্পর্কে স্মার্ট সিটি কর্তৃপক্ষ কি কোনও খোঁজখবর নেয়নি?যে সংস্থার এখন কুখ্যাতি রয়েছে সে সংস্থার উপরে এমন ভরসা করলো কী করে? অভিযোগ, বহিঃরাজ্যের এই নির্মাণ সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার পাওনাদারদের ফোনই ধরেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিতিবিরক্ত সাপ্লায়াররা যে কোনও সময় ওই নির্মাণ সংস্থার অফিস, প্ল্যান্ট ঘেরাও করতে পারে।পরিস্থিতি সেই দিকেই যাচ্ছে।রাজ্য নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং নিজেও ব্যক্তিগতভাবে এয়ারপোর্ট রোডের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন।কিন্তু হায়দ্রাবাদের ওই ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়াই পাচ্ছেন না। বহিঃরাজ্যের ওই ঠিকাদার সংস্থার খপ্পরে পড়ে এখন আগরতলা স্মার্ট সিটির গোটা প্রকল্পটিই মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে।কেননা,এই নির্মাণ সংস্থাকেই আগরতলা পুর নিগম এলাকার সতেরোটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়নের বরাত দেওয়া হয়েছে।যার অর্থরাশি ৪৩০ কোটি টাকা।এই সড়কগুলির মধ্যে রয়েছে বটতলা থেকে ফায়ার ব্রিগেড চৌমুহনী-দুর্গা চৌমুহনী হয়ে বড়জলা সড়ক, জিবি থেকে অভয়নগর হয়ে একেবারে রামঠাকুর সংঘ পর্যন্ত, বটতলা-কামান চৌমুহনী-মোটরস্ট্যাণ্ড সড়ক, আখাউড়া রোড।এমন মোট সতেরোটি সড়ক রয়েছে। একবছর হয়ে গেছে, সড়কগুলির কাজ কতটুকু হয়েছে?মাত্র ৯১ কোটি টাকার এয়ারপোর্ট রোড যে নির্মাণ সংস্থা সময়মতো সম্পন্ন করতে পারছে না, বাকি কাজ কত বছরে করবে? স্বাভাবিকভাবেই ওই নির্মাণ সংস্থাটিকে এখুনি কালো তালিকাভুক্ত করে অন্য কোনও ভালো নির্মাণ সংস্থাকে দিয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.