প্রশ্নের মুখে অ্যাক্ট ইস্ট
প্রথমে ছিলো ‘লুক ইস্ট’ (পুবে তাকাও) নীতি।১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন।এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলা।একই সাথে দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সার্বিক পরিকাঠামোর বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা।এই নীতি গ্রহণের পর থেকে বহু সময় অতিবাহিত হয়েছে।বহু জল গড়িয়েছে।বাস্তব হচ্ছে, নীতি গ্রহণ করা হয়েছে ঠিকই, নীতির সঠিক প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নে বিগত দিনে কোনও উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রয়াস সেইভাবে লক্ষ্য করা যায়নি।এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।যে প্রকল্প এক বছরে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো, সেই প্রকল্প পড়ে থেকেছে বছরের পর বছর।দেশ স্বাধীন হলেও, দেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে দীর্ঘ বছর এক প্রকার বিচ্ছিন্নই ছিলো উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো। যাবতীয় উন্নয়ন থেকে উত্তরপূর্বা ছিলো বঞ্চিত।ফের ফলশ্রুতিতে উত্তর পূর্বে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সন্ত্রাসবাদ।যে এক লম্বা ইতিহাস।
২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, ‘লুক ইস্ট’ নীতির নাম বদল করে রাখে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’।এই পরিবর্তনের পিছনে যথেষ্ট যুক্তিও ছিলো। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের মতে ‘পুবে তাকাও’ নীতি গ্রহণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে পুবে ফিরেও তাকায়নি কেউ।উত্তরপূর্ব ব্রাত্যই থেকে গেছে।তাই এখন আর তাকানোর সময় নেই।এখন নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।মোদির ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসিতে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির সাথে অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নত করার সাথে সাথে ওই অঞ্চলের দেশগুলির সাথে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলা। ওই অঞ্চলের দেশগুলির সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলা।একই সাথে উত্তরপূর্বে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যকে ‘অষ্টলক্ষ্মী’ আখ্যা দিয়ে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।এই ব্যাপারে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।এটা ঠিক যে মোদি
জমানায় উত্তরপূর্বে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।কিন্তু সম্প্রতি ভারত সরকারের কন্ট্রোলার জেনারেল জেনারেল অব অ্যাকাউন্টসের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে,তা কিন্তু গোটা উত্তরপূর্বের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের ও চিন্তার বিষয়।প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসির অন্তর্গত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নয়ন প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল তার সিংহভাগ অর্থই খরচ করা যায়নি। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বরাদ্দ অর্থের মাত্র পঁয়ত্রিশ শতাংশ খরচ করা হয়েছে।অর্ধেকের বেশি অর্থ পড়ে রয়েছে উত্তরপূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রকে। এই রিপোর্ট শুধু উদ্বেগেরই নয়, হতাশাজনকও বটে।উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, উত্তরপূর্বের আটটি রাজ্যের মধ্যে অধিকাংশ রাজ্যেই ডবল ইঞ্জিনের (বিজেপি) সরকার চলছে। তা সত্ত্বেও প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করতে পারেনি রাজ্যগুলো। খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী মোদির অ্যাক্ট ইস্ট নীতির অন্তর্গত উত্তরপূর্বের উন্নয়ন সংক্রান্ত মন্ত্রকের (ডোনার) এই অর্থব্যয় করতে না পারা নিয়ে অর্থমন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। জানা গেছে, নয়া অর্থবছর শুরুর সাথে সাথেই কড়া নির্দেশিকা জারি হয়েছে, প্রথম থেকেই বরাদ্দকৃত অর্থ খরচের পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য,বিগত অর্থবছরে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি যখন প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার।