সিলিকন ডিসপ্লে বোর্ড লাগিয়ে নজিরবিহীন দুর্নীতি রাজ্যে।

 সিলিকন ডিসপ্লে বোর্ড লাগিয়ে নজিরবিহীন দুর্নীতি রাজ্যে।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি || পানীয় জলের ব্যবহার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে রাজ্যের আটটি জেলার ডিডব্লিউএস ডিভিশনগুলিতে চব্বিশটি সিলিকন ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো নিয়ে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি এবং আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, জল জীবন মিশনের কেন্দ্রীয় অর্থ লোপাট যে সিস্টেমে করা হয়েছে তাও রাজ্যে নজিরবিহীন ঘটনা।তথ্য অনুযায়ী এই ডিসপ্লে বোর্ড বাবদ খরচ হয়েছে তিন কোটি ছয়ত্রিশ হাজার টাকা। অর্থাৎ একেকটি সিলিকন ডিসপ্লে বোর্ডের পেমেন্ট করা হয়েছে ১২,৫১,৫০০ (বার লক্ষ একান্ন হাজার পাঁচশ) টাকা। একটি ডিসপ্লে বোর্ডের দাম বারো লক্ষ টাকার উপর কল্পনাও করা যায় না। কেননা বারো লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ছোটখাটো পাকাবাড়ি নির্মাণ করা যায়।প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় একটি ঘর তৈরির জন্য সরকারীভাবে মোট এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেখানে একটি সিলিকন বোর্ড তৈরি করার জন্য বারো লক্ষ একান্ন হাজার পাঁচশ টাকা খরচ করার উদ্দেশ্যই বা কী? এ নিয়ে জল জীবন মিশনের সৎ আধিকারিকদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় অর্থ লুটের লক্ষ্যেই পুরো বিষয়টি গোপনীয়ভাবে করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জল জীবন মিশন নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে গোটা রাজ্যের আট জেলায় সিলিকন ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো হয়েছে জল জীবন মিশনের অর্থেই।দেখা যাচ্ছে গত নভেম্বর মাসে নিয়ম ভেঙে ডিডব্লিউএসের বিভিন্ন ডিভিশনকে ডিঙিয়ে রাজ্যের সব সাবডিভিশনের একসঙ্গে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সাধারণত দপ্তরের কোনও উন্নয়নমূলক নির্মাণকাজ করার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন ডিভিশনে আলাদাভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু রাজ্যের সব কয়টি ডিভিশনকে এড়িয়ে রাজ্যের ডিডব্লিউএস ডিভিশনগুলিতে সিলিকন ডিসপ্লে বোর্ড লাগানোর জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে টেণ্ডার আহ্বান করা হয়েছিল রহস্যজনকভাবে। অনলাইনে DNIET NO 113/CE/PWD (DWS) /2022-23 সেহামূলে নোটিশ বের হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। চব্বিশটি ডিসপ্লে বোর্ডের এস্টিমেন্ট ১,৭৯,০৪,৬২৪ টাকা (এক কোটি ঊনআশি লক্ষ চার হাজার ছয়শ চব্বিশ টাকা)। আর্নেস্ট মানি ৩,৫৮,১৭২ টাকা (তিন লক্ষ আটান্ন হাজার একশ বাহাত্তর টাকা)। নব্বই দিনের মধ্যে ডিসপ্লে বোর্ডগুলি সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ এবং দরপত্র খোলার তারিখ দেখানো হয় ১০ডিসেম্বর ২০২২ইং।দেখা যাচ্ছে ১০ নভেম্বর ২০২২ সালে পূর্ত দপ্তরের নির্বাহী বাস্তুকারের রিগ ডিভিশন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ডিসপ্লে বোর্ড লাগানোর জন্য 07/EE/RIG/ 2022-23 সেহামূলে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এদিকে, আরও নজিরবিহীন ঘটনা হলো যে, দরপত্র আহ্বান করেছে পূর্ত দপ্তরের রিগ ডিভিশন। কিন্তু পরবর্তীতে নিয়মবহির্ভূতভাবে দরপত্র আহ্বান করার এই তথ্য প্রকাশ হতেই তৎক্ষণাৎ এই দরপত্রটি বাতিল করে দপ্তর। কিন্তু দরপত্রটি বাতিল হলেও নজিরবিহীনভাবে হঠাৎ করে গোপনীয়ভাবে ওয়ার্ক অর্ডার করেছে আরেকটি দপ্তর। দেখা যাচ্ছে জল জীবন মিশনের অর্থে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস F.05(77) -ICA/Advt. / 2022 Dated Agartala the 13.01.2023 সেহামূলে ‘আমার গ্রাফিকস’ নামে একটি সংস্থাকে Subject :- work order for providing and commissioning of 24 nos. single sided Backlit fabric frame with Aluminium extrus silicon edge graphics Display board under Jal Jeevan Mission (JJM) worth of Rs. 3,00, 36000 ( Rupees Three Crore Thirty six Thousand) inclusive of all types of tax. সেহামূলে ওয়ার্কঅর্ডার দেয়। যার দরপত্রের রেফারেন্স হিসাবে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা দেখিয়েছেন No. F.05 (77) -ICA / Advt. / 2022 dated 14th December, 2022।এখানে দেখা যাচ্ছে, অনলাইনে DNIET NO 113/CE / PWD (DWS) / 2022- 23 সেহামুলে নোটিশ বের হয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। আর অন্য একটি ভিন্ন রেফারেন্স দেখিয়ে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর তিন কোটি টাকার উপর ওয়ার্কঅর্ডার দিলেন একটি সংস্থাকে।প্রশ্ন উঠেছে, জল জীবন মিশন প্রকল্পের অর্থ কোন্ উদ্দেশ্য নিয়ম ভেঙে ফাও স্থানান্তরিত (ডায়ভার্ট) করে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরে দেওয়া হলো?তাছাড়া দরপত্র আহ্বান করেছিল পূর্ত দপ্তরের আগরতলার রিগ ডিভিশন। কিন্তু কেনইবা দরপত্রটি বাতিল করে একই আইটেমে ওয়ার্কঅর্ডার এবং পেমেন্ট দিলেন তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা।ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো হয়ে গেছে।খবর নিয়ে জানা গেছে, যে মানের ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো হয়েছে তার একেকটির দাম বাজারমূল্য সর্বমোট দেড় লক্ষ টাকাও হবে না। বেআইনি আইটেমের টিএস কেন স্বাক্ষর করা হলো! প্রশ্ন উঠছে বাস্তুকার মহলেই। অভিযোগ উঠেছে, দপ্তরের প্রধান কর্তা পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের বাস্তুকারদের চাপ দেওয়া হয় এই আইটেম এনালাইসিস তৈরি করার জন্য।কিন্তু আইটেম এনালাইসিস তৈরি হলেও কোনও বাস্তুকারই টিএস স্বাক্ষর করতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ট টেণ্ডার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ডিডব্লিউএস দপ্তরের এক সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনীয়ার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাওয়ায় টিএস স্বাক্ষর করেছে।“কিন্তু কোনও নির্মাণ কাজের জন্য পূর্ত দপ্তর বা অন্যান্য দপ্তর দরপত্র আহ্বান করার আগে দপ্তরে সিডিউল থেকে আইটেম নিয়ে কাজের এস্টিমেট করা হয়। সাধারণত বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পূর্ত দপ্তরের আর অ্যাণ্ড বি শাখা নির্দিষ্ট সময়ে সময়ে নির্মাণ কাজের সিডিউল আইটেমগুলি দপ্তরের অনুমোদন ক্রমে বই আকারে প্রকাশ করে। কোনও দপ্তর প্রয়োজনে অনুমোদিত আইটেম থেকে রেইট সংগ্রহ করেই দরপত্র আহ্বান করার নিয়ম। দেখা যাচ্ছে, সিলিকন ডিসপ্লে বোর্ডের আইটেমটি রাজ্যে কোনও দপ্তরেই অনুমোদিত আইটেম নয়। তবে ননসিডিউল আইটেমের ক্ষেত্রে বাজারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈধ কোম্পানির কোটেশন মিলিয়ে অ্যানালাইসিস করে আইটেম করে দরপত্রের আহ্বান করার নিয়ম। কিন্তু এক্ষেত্রে যে দরপত্র আহ্বান কার হয়েছে তার সঙ্গে বাজারমূল্যের ফারাক হাজার গুণেরও বেশি।তাহলে প্রশ্ন উঠেছে, কোন বাস্তুকার এই আইটেম অ্যানালাইসিস তৈরি করেছেন।কিসের ভিত্তিতে এই আইটেম এনালাইসিসি করা হয়েছে। তবে সব কিছুই গোঁজামিল দিয়ে সম্পূর্ণ আইন ভঙে কোটি কোটি টাকা ঘোটালা উদ্দেশ্য নিয়েই সংঘটিত হয়েছে বলে পরিষ্কার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটনা রাজ্যের মধ্যে নজিরবিহীন। বিশেষ করে মানিক সাহার মতো সজ্জন ব্যক্তি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব আসার পর এ ধরনের সরকারী অর্থ লুটপাটের ঘটনা রাজ্যবাসীকে স্তম্ভিত করবে।ওই সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যিনি মন্ত্রী ছিলেন বর্তমানে বিজেপি আইপিএফটি জোট সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সেই দপ্তরের মন্ত্রীর ও দপ্তর পরিবর্তন হয়েছে।জানা গেছে মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি ঘুমে। আরও জানা গেছে, কোটি কোটি টাকা সিলিকন ডিসপ্লে বোর্ডের নামে সরকারী অর্থ লোপাট হয়েছে এবং আর পেছনে বড় মাপের রাঘববোয়াল জড়িত আছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.