ফুসফুস প্রতিস্থাপনের সাক্ষী রইল কলকাতা, এখন চ্যালেঞ্জ সংক্রমণকে আটকানো
ফুসফুস প্রতিস্থাপনের দ্বিতীয় ঘটনা ঘটলো কলকাতায়। ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সালে প্রথম বার পশ্চিমবঙ্গে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের সাক্ষী থেকেছিল কলকাতা। তবে সেবার সেই রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আর এবার দ্বিতীয় পদক্ষেপ। ৭২ ঘণ্টা না গেলে এখনই চিকিৎসকরা কোন আশার বাণী শোনাতে পারছেন। না। তবে এবার চিকিৎসকদের কাছে চ্যালেঞ্জ রোগীকে বাঁচাতেই হবে; তাকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।শনিবার গভীর রাতে কলকাতার দশটা এক বেসরকারি হাসপাতালে ১৬ বছরের এক কিশোরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন ঘটল। ওই হাসপাতালের পর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ডাক্তার এখন কুনাল সরকার বলেছেন, “রোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সফল প্রয়ে হয়েছে তবে ৭২ ঘণ্টার না গেলে এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে আশা করছি এবার সংক্রমণকে রোধ করতে পারলেই আমরা সফল হবো।’ এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ বছ সালে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ৪৬ বছর বয়সি দীপক হালদারের ফুসফুস প্রতিস্থাপন হয়েছিল। দীপকের বাঁদিকের ফুসফুসটি পুরোপুরি বিকল শুরু হয়ে গিয়েছিল করোনা সংক্রমণে। ডান দিনের ফুসফুস দিয়ে কাজ চালানো সম্ভব ছিল না। ফলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা ছাড়া চিকিৎসকদের ও কাছে আর কোনও উপায় ছিল না। সুরাটের ব্রেন ডেথ হওয়া ৫৬ বছরের এক ব্যক্তির ফুসফুসটি প্রতিস্থাপন হয়েছিল সেবার। কিন্তু ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই সেফটিসেমিয়া আক্রান্ত হয়েছিলেন দীপকবাবু।আর ফুস তারপরে বহু চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা নষ্ট তাকে আর ফেরাতে পারেননি। ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার। সেটা ছিল পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব এব ভারতের প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ইতিহাস। সেই ইতিহাস ব্যর্থ হয়েছে; কিন্তু পিছনের থেকে ফিরে তাকাতে রাজি নন চিকিৎসকরা। তাদের আশা প্রথমবারে ব্যর্থতা থেকেই অনেক কিছু শিখেছেন তাই এবার সাফল্য আসবেই। শনিবার মধ্যরাত থেকে যে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারটি চলছিল সেই অস্ত্রোপচারের কাজটি শেষ হয়েছিল রবিবার প্রায় সকাল দশটা নাগাদ। হাসপাতালে মেডিসিন – বিশেষজ্ঞ ডা. সুস্মিতা রায়চৌধুরীর স্বীকার করে নিয়েছেন অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণকে ঠেকিয়ে রাখায় এখন সবথেকে কঠিন কাজ। কিন্তু ১৬ বছরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন কেন প্রয়োজন হয়ে পড়ল তাও জানিয়েছেন সুস্মিতা দেবী। পারক্লোরেট ডাই ক্লোরাইড মধ্যর নামে আগাছা নির্মূলকারী ভয়ংকর বেসর বিষ পান করে ফেলেছিল ওই ১৬ বছরের কিশোর। তার পরিবারের লোকেদের দাবি, কোলড্রিংক্স ভেবেই ছবি ওই ভয়ংকর বিষ পান করে কিশোর আর তারপরে সারা গলা-বুক জ্বলতে শুরু করে। তখনই তাকে স্থানীয় কিনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু ভিত অবস্থার ক্রমশ অবনতি হওয়ায় তাকে সাত দিন পরে কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি পর করা হয়। ওই আগাছা নির্মূলকারী বিষ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক অজয় চক্রবর্তী বলেছেন, ‘এই বিষ এতটাই ভয়ংকর যে কিডনি, ফুসফুস কিংবা চোখ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিতে পারে। আর এক্ষেত্রে ছেলেটির ফুসফুস নষ্ট করেছে।’টানা ৩৩ দিন হাসপাতালের সা একমো সাপোর্টে রাখা হয়েছিল প্র ওই কিশোরকে। ডাক্তাররা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন অবিলম্বে ফুসফুস চ প্রতিস্থাপন করতে হবে। আর সেই ফুসফুস খোঁজার আশায় ভারতের সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজকে সূচিত করে রেখেছিলেন ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সৌভাগ্যক্রমে খোঁজ মেলে ওড়িশায় পথদুর্ঘটনায় এক প্রৌঢ়ের। সেই প্রৌঢ়ের ফুসফুস রক্তের গ্রুপ এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্যাথোলজিকাল রিপোর্টের সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি ওই কিশোরের মিল থাকায় কলকাতা থেকে দ্রুত চিকিৎসক বাহিনী চলে যান ওড়িশায়। সেখান থেকে বিমানে কলকাতায় পৌঁছে সেই ফুসফুস। তারপর গ্রিন-করিডর করে শনিবার মধ্যরাত্রে তা পৌঁছে যায় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে। তারপর দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার।
কুণালবাবু বললেন, ‘ফুসফুসের ছবি যদি আপনি দেখেন তাহলে মনে হবে যেন কেউ অ্যাসিড দিয়ে তাকে পুড়িয়ে দিয়েছে। এমন বিষাক্ত ওই কিশোর পান করেছিল যে ফুসফুসের ভিতরের সমস্ত রক্তচালিকা পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল।’ কৃত্রিম পদ্ধতিতে এই ধরনের রোগীকে একটা নির্দিষ্ট দিন পর্যন্তই বাঁচিয়ে রাখা যায়। তারপর তাকে বিকল্প পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা ছাড়া চিকিৎসকদের কাছে আর কোন পথ খোলা থাকে না। সেই জন্যই প্রতিস্থাপন অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল চিকিৎসকদের কাছে। ফুসফুস প্রতিস্থাপনে সাফল্য এসেছে এটা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসকরা। কিশোরের পরিবারের সদস্যরাও জানিয়েছেন ফুসফুস প্রতিস্থাপন ১০০ শতাংশ সফল হয়েছে। কিন্তু এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ সংক্রমণকে ঠেকানো। আর সংক্রমণকে যদি রোধ করতে পারেন কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা তাহলে কলকাতা তথা পূর্ব ভারতের মধ্যে ফুসফুস প্রতিস্থাপনে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে চলেছে নিঃসন্দেহে বলা যায়।