দুঃখ প্রকাশেই দায় এড়ালো ইসকন,উল্টোরথে স্বজনহারাদের পাশে বিপ্লব, ৪র্থ দিনে জয়শ্রীতে শান্তনা।

 দুঃখ প্রকাশেই দায় এড়ালো ইসকন,উল্টোরথে স্বজনহারাদের পাশে বিপ্লব, ৪র্থ দিনে জয়শ্রীতে শান্তনা।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-কুমারঘাটে উল্টোরথে ভয়াবহ ঘটনার আটচল্লিশ ঘন্টার পর শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে ইসকন কর্তৃপক্ষ। তেমনি ঘটনার চারদিন পরও সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধু সহায়তা ছাড়া আর তেমন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় থানা একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নিয়ে একটি তদন্ত শুরু করেছে বলা হলেও, সেই তদন্ত কতদিন ধরে চলবে? আদৌ তদন্তের কোনও ফল বেরোবে কিনা? তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা, এর আগেও নানা ঘটনায় বহু তদন্ত হয়েছে। কোনও তদন্তেরই শেষ পরিণতি কি হয়েছে, তা সাধারণ মানুষ জানতে পারেনি।এদিকে শনিবার কুমারঘাটে যান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব । তিনি নিহত এবং আহতদের বাড়িতে যান। শোকগ্রস্ত পরিবারের পরিজনদের সাথে কথা বলেন। তাদের প্রতি সমবেদনা জানান। সেই সাথে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। সাংসদ শ্রী দেব তার বেতন ভাতা থেকে নিহতদের পরিবারে পঞ্চাশ হাজার এবং আহতদের পরিবারের পনেরো হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন হারা পরিবারের সদস্যরা। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, এই ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক।কোনও সহায়তাই এই ক্ষতিপূরণ করা যাবে না। হৃদয়বান কুমারঘাট অঞ্চলের সাধারণ মানুষ প্রথম থেকেই যথাসাধ্য সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। স্থানীয় বিধায়ক ভগবান দাস নিজেও যথাসাধ্য সহায়তা করছেন। পাশ্ববর্তী এলাকার বিধায়ক মন্ত্রী সুধাংশু দাসও যথাসাধ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে সবাইকে শোকবিহল পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন বিধায়ক ভগবান দাস ও বিধায়ক সুধাংশু দাস সহ আরও অনেকে। কুমারঘাট উল্টোরথে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কাঞ্চনপুর মহকুমার জয়শ্রী এলাকার বাসিন্দা গরিব কাঠমিস্ত্রি রূপক দাস এবং তার নয় বছরের পুত্র রত্নদীপ দাসের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার চারদিনের মাথায় শনিবার শোকাহত পরিবারের বাড়িতে যান কারামন্ত্রী শান্তনা চাকমা। তার সাথে ছিলেন মাছমারা কেন্দ্রের জেলা পরিষদ সদস্যা স্বপ্না রাণী দাস ও প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য ললিত দেবনাথ। কিন্তু দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যের ঘটনা হলো, ঘটনার পর তিনদিন এই বিপন্ন পরিবারটির কোনও খবরাখবর নেয়নি উত্তর জেলার জেলা শাসক থেকে শুরু করে কাঞ্চনপুর মহকুমা প্রশাসন পর্যন্ত। পিতা পুত্রের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে এখনও কাঞ্চনপুর মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রাম জয়শ্রীতে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম।এলাকার ভালো মনের মানুষ হিসাবে পরিচিত রূপক দাস এবং তার শিশু সন্তান রত্নদ্বীপ দাসের মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছে না। ছেলেকে নিয়ে কুমারঘাট শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন রূপক। বুধবার উল্টোরথের গিয়ে বাবা ছেলে দুজনেই বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়। ফিরে আসে বাবা-ছেলের অর্ধ পোড়া নিথর দেহ দুটি। মৃত রূপক দাসের বৃদ্ধ বাবা শ্যামল দাস একজন সাধারণ কৃষক এবং মা অর্চনা দাস সাধারণ গৃহবধূ। শনিবার ছিলো প্রয়াতদের স্মরণে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। শ্রাদ্ধ বাড়িতে প্রবেশ করতেই প্রয়াত রূপক দাসের মা ও স্ত্রী বুকফাটা আর্তনাদে গ্রামের সবাই বাকরুদ্ধ। রূপকের স্ত্রী শ্রাদ্ধের মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারছে না এ এক মর্মান্তিক দৃশ্য। একসাথে স্বামী ও নয় বছরের পুত্রকে হারিয়েছেন ৩০ বছরের এই গৃহবধূ। রূপক দাসের বাবা জানান, তাদের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলে হারানোর পরিবারের অসহায়ত্বের কথা। প্রাণপ্রিয় নাতিটাও – চলে গেছে। এই শোক কীভাবে ভুলবে এই পরিবারটি? শুধু তাই নয়, পরিবারটি বাঁচবে কী করে? এই প্রশ্নের কোনও জবাব নেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.