অপারেশন লোটাস।
এক বছর আগে মহারাষ্ট্রে অপারেশন লোটাসের ধাক্কায় উদ্ধব ঠাকরে সরকার ভেঙে খান খান হয়ে গেছিল।এর সুমধুর বদলা নীতীশ কুমার নিয়েছিলেন বিহারে। এনডিএ-কে জোর ঝটকা দিয়ে। বছর ফিরতে সেই মহারাষ্ট্র ফের সংবাদ শিরোনামে।ফের অপারেশন লোটাসের কবলে পড়ে এনসিপিতে এহি ত্রাহি রব ওঠেছে। ভাইপোকে দিয়ে এনসিপির ভেতর অপারেশন লোটাস আপাতত সেরে নিলো বিজেপি। কাকা মারাঠা স্ট্রংম্যান শারদ পাওয়ার বুঝতেই পারলো না। মারাঠা স্ট্রংম্যানের বিশ্বস্ত প্রফুল প্যাটেল যিনি পাটনায় বিরোধীদের বৈঠকে এনসিপির হয়ে যোগ দিয়েছিলেন তিনিও কিনা সেই দলে ভিড়লেন। আপাতত প্রফুল প্যাটেল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হবার দৌড়ে রয়েছেন। মারাঠা ভূমি দখলে বিজেপি এখানে অন্য গেম প্ল্যান রচনা করেছিলো। যেভাবে ২০২৪ -এর আগে বিরোধীরা একজোট হবার বার্তা দিচ্ছিল তাতে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরাতে বিজেপি যে কোন কসুর বাকি রাখবে না তা সবাই জানতো। শ্যাম, দাম, দণ্ড, ভেদ সব অস্ত্রে বিরোধীদের বধ করতে নেমেছে বিজেপি শিবির। রাজ্যে রাজ্যে অপারেশন লোটাস সফলভাবে রূপায়ণ করতেও তাই ভোটকুশলীদের ময়দানে নামিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের শাসক শিবির।মহারাষ্ট্রকে এ যাত্রায় প্রথম টার্গেট করেছে শাসক। মহারাষ্ট্র অন্যতম বড় রাজ্য। উত্তরপ্রদেশের পর মহারাষ্ট্রই এখন সবচেয়ে বড় রাজ্য। অন্তত লোকসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যার নিরিখে। উত্তরপ্রদেশে আসন সংখ্যা ৮০।মহারাষ্ট্রে ৪৮।সেই মহারাষ্ট্রে শিবসেনাকে আগেই গর্তে ঢুকিয়ে দিয়েছে শাসক। রইলো কংগ্রেস আর এনসিপি। মারাঠা স্ট্রংম্যান শারদ পাওয়ারের দৌলতে মারাঠাভূমে এখনও বেশ প্রভাব রয়েছে এনসিপির। তাই এনসিপিকে বাগে আনতে পারলেই কেল্লাফতে। শেষ পর্যন্ত এনসিপিকে বাগে আনতে অন্তত আপাতত সফল কেন্দ্রের শাসক দল। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা আতঙ্কিত, বিরোধীরা যে ভাবে জোট বাঁধতে তৎপর হয়েছে তাতে। এবং একারণেই বিরোধী জোট যেকোনও মূল্যে ভাঙতে তৎপর শাসকরা। শাসক শিবির চাইছে ২৪-এ লোকসভাতে অন্তত ৪৮-এর মধ্যে ৪৫ আসন। তাই ২৪-এর আগে প্রথম অপারেশন লোটাস হয়েছে মহারাষ্ট্রে।
শোনা যাচ্ছে, এবার মোদি শাহ জুটির দ্বিতীয় টার্গেট বিহার। বিহারে সিবিআই -ইডির দৌলতে আরজেডির নেতানেত্রীরা প্রায় জেলের দোরগোড়ায়। নীতীশ কুমারের দলকে যদি ভাঙিয়ে আনা যায় তাহলে বিহারও প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসবে। এবার তাই কেন্দ্রের শাসকের সফট টার্গেট পাটলিপুত্র। যে পাটলিপুত্রে কিছুদিন আগে বিরোধী জোটের বীজ বপন করা হয়েছিল। এরপরেই শুরু হয়ে গেছে শাসকের তাণ্ডবলীলা। শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলেও বিহারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উপেন্দ্র কুশওয়াদা, চিরাগ পাশোয়ানদের পুনরায় জায়গা করে দেওয়া হতে পারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। বিহারে নীতীশ কুমারকে একটা ঝটকা দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ-সুশীল মোদিরা।
শুধু মহারাষ্ট্র কিংবা বিহারেই নয়, শাসকের নজর পড়েছে কর্ণাটকেও। কর্ণাটকে সফট টার্গেট করা হয়েছে জেডিএস-কে। এজন্য জেডিএস নেতা কুমারস্বামীরা প্রবল চাপে এবং আতঙ্কে রয়েছেন। ভাঙনের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। যদিও কুমারস্বামী পাল্টা বলছেন যে কংগ্রেস বরং ভাঙবে রাজ্যে।
এরপরের শাসকের টার্গেট মরু রাজ্য রাজস্থান। রাজস্থানে শাসক কংগ্রেসে গেহলট-পাইলটদের বিবাদকে কেন্দ্র করে বিজেপি একটা সুযোগ নিতে চাইবে। এই রাজ্যে যদি বিজেপির ইশারায় কংগ্রেস ভাঙে তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে মরিয়া হয়েছে বিজেপি। ২০২৪ সালের আগে রাজ্যে রাজ্যে অপারেশন লোটাস চালাতে তাই মরিয়া কেন্দ্ৰ।আগামী কিছুদিনের মধ্যে কর্ণাটকে বিরোধীদের দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু হবে। অর্থাৎ বিরোধী জোটের দ্বিতীয় বৈঠক। এই বৈঠকে কে কে যোগ দেবে তা নিয়ে এখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। গত বৈঠকে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে পরবর্তী বৈঠকে আপ যোগ দেবে কিনা তা বিভিন্ন যদি কিন্তু ইত্যাদি উপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ কংগ্রেসের মতিগতির উপরই আপ কর্ণাটকের বৈঠকে যোগ দেওয়াটা নির্ভর করছে। রইলো এনসিপি শারদ পাওয়ার গত বৈঠকে জোটের অভিন্ন নীতি নিয়ে একটি উপস্থাপনা রেখেছিলেন। সেই শারদ পাওয়ারের আসন টলমল কে ছেড়েছে বিজেপি। তাই সাধু সাবধান! ২০২৪ সালের আগে বিরোধীর জোট তো দূর, নিজেদের ঘর আগলে রাখতে পারে কি না তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।