২৭ হাজার ৬৫৪ কোটির ঘাটতি বাজেট পেশ

 ২৭ হাজার ৬৫৪ কোটির ঘাটতি বাজেট পেশ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি || ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য রাজ্যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ২৭ হাজার ৬৫৪.৪০ কোটি টাকা। শুক্রবার রাজ্যের অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় এবারের বাজেটের বরাদ্দ ৯.৮৭ শতাংশ বেশি। বাজেট প্রস্তাবে অবশ্য ৬১১.৩ কোটি টাকার ঘাটতি দেখানো হয়েছে। এই ঘাটতি কীভাবে মেটানো হবে তার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা না হলেও খরচের বহর কমিয়ে ঘাটতির ভার লাঘব করার কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। নতুন করে কর আরোপের ঘোষণাও নেই পরিকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় মূলধনি ব্যয় ধরা হয়েছে ৫,৩৫৮.৭০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় যা ২২.২৮ শতাংশ বেশি। নিজস্ব কর খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩,৩৬০ কোটি টাকা। কর বহির্ভূত খাতে রাজস্ব আদায় ধরা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। বাজেট প্রস্তাবে মোট প্রাপ্তি ২৭ হাজার ৪৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। বাজেটে শিক্ষাখাতে সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নমূলক ও বিভিন্ন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত দপ্তরগুলির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ধরা হয়েছে শিক্ষা (বুনিয়াদি, বিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা এবং যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর সহ) দপ্তরের ক্ষেত্রে। এই দপ্তরের মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৯৩৮.৭৬ কোটি টাকা। মোট বাজেট প্রস্তাবের ১৭.৮৬ শতাংশ ব্যয় হবে শিক্ষাখাতে। পঞ্চায়েত সহ গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪১৮.৭০ কোটি টাকা যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১২.৩৬ শতাংশ। পূর্ত দপ্তরের (সড়ক ও সেতু, পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি এবং জল সম্পদ) জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬১২.৪২ কোটি টাকা যা মোট বাজেট বরাদ্দের ৯.৪৫ শতাংশ।


স্বরাষ্ট্র দপ্তরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪২৩.৬৪ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭৫৫.৬২ কোটি টাকা। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪৩৬.৪১ কোটি টাকা। এবারের বাজেট প্রস্তাবে ১৩ টি নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ডাইরেক্টরেট অব গুড গভর্নেন্স নামক একটি নতুন অধিদপ্তর স্থাপন করারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। দপ্তরগুলোর কার্যকারিতা এবং মানুষের জন্য নিয়মের বাধ্যবাধকতার বহর কমানোর লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের কথাও বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।বাজেট প্রস্তাব পেশ করে পরবর্তী সময়ে বিধানসভা প্রেস কর্নারে সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, এই বাজেট রাজ্যকে একটি উন্নত রাজ্যে পরিণত করার নীল নকশা। রাজ্যের অর্থনীতি ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। ২০২২-২৩ সালে রাজ্যে জিএসডিপির বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৮০ শতাংশের মতো যা ওই সময়ে জাতীয় স্তরের বৃদ্ধির হারের তুলনায় বেশি। ওই সময়ে জাতীয় পর্যায়ে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.২০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজ্য আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার আট শতাংশের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। চলতি বছর জাতীয় পর্যায়ে এই বৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশে গিয়ে পৌঁছতে পারে বলেও অর্থমন্ত্রীর অভিমত। বাজেট প্রস্তাবকে ভবিষ্যৎমুখী, প্রবৃদ্ধি অভিমুখী হিসাবে অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী শ্রীসিংহরায় বলেন, সমাজের সব অংশের মানুষের কল্যাণের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। বাজেট প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা সহ ১৩টি নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জন আরোগ্য যোজনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য সরকার খুবই সংবেদনশীল। চিকিৎসার জন্য কারোর আর্থসামাজিক অবস্থায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্যই সর্বজনীন এই প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। নতুন ঘোষিত প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী ইন্টিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম, মুখ্যমন্ত্রী স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট স্কিম, মুখ্যমন্ত্রী ট্রাইবেল ডেভেলপমেন্ট মিশন, মুখ্যমন্ত্রী স্যাটেলাইট টাউন ডেভেলপমেন্ট স্কিম, মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্প, মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প সহ অন্যন্য।অর্থমন্ত্রী জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা ২০২৩ নামে একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য বিমা যোজনা চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে যা হবে সর্বজনীন এবং প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত পিএম জেএওয়াই প্রকল্পের ধাঁচে তেরি করা হবে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা ২০২৩ রাজ্যের অবশিষ্ট ৪.৭৫ লক্ষ পরিবার পিছু সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকার বিমার সুবিধা প্রদান করবে। সরকারী কর্মচারীরাও এই বিমা প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবেন। এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার ৫৯ কোটি টাকা প্রতি বছর ব্যয় করবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, আমন ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী ইন্টিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (এমআইসিএমপি) প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। এর জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। কৃষকদের উন্নত চাষাবাদের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য কিষান সহায়তা মোবাইল অ্যাপ চালুর প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। এই খাতে ৪.১০ কোটি টাকার ব্যয়বরাদ্দ ধার্য করা হয়েছে। প্রাণীসম্পদের সার্বিক উন্নয়নে চলতি প্রকল্পগলিকে সমন্বিত করে মুখ্যমন্ত্রী প্রাণীসম্পদ বিকাশ যোজনা চালু করা হবে। এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য বিকাশ যোজনায় ১২ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, মাছের পোনার উৎপাদন ইত্যাদি করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনার জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট স্কিমে আট কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ট্রাইবেল ডেভেলপমেন্ট মিশনের জন্য ত্রিশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা রয়েছে। সিএম-সাথ (চিফ মিনিস্টার্স স্কলারশিপ ফর অ্যাচিভার্স টুয়ার্ডস হায়ার লার্নিং) প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরে ব্যয় হবে পঞ্চাশ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১২০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আকাঙ্ক্ষা স্কিমের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী স্টে ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রামে মহিলা অ্যাথলিটদের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্সের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী স্যাটেলাইট টাউন ডেভেলপমেন্ট স্কিমের জন্য দশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় বসার আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণের লক্ষ্যে বাজেটে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থ দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পাণ্ডে, অতিরিক্ত সচিব আকিঞ্চন সরকারও উপস্থিত ছিলেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.