মহাকাশ বিজ্ঞানে দিশা দেখাচ্ছে ভারতীয় স্টার্টআপ।

 মহাকাশ বিজ্ঞানে দিশা দেখাচ্ছে ভারতীয় স্টার্টআপ।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মহাকাশ বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতীয় স্টার্টআপগুলি আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় নিজের স্বতন্ত্র ক্ষেত্র তৈরি করতে চলেছে।এই স্টার্টআপ উদ্যোগগুলি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক সহযোগিতার সুযোগগুলি। উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে নিজেকে বৃহৎ আঙ্গিনায় নিয়ে যেতে পারে এবং সেই পথে এগোচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। এই স্টার্টআপ উদ্যোগগুলি কক্ষপথে স্যাটেলাইটগুলিকে পুনরায় জ্বালানি দেওয়ার লক্ষ্য থেকে শুরু করে পৃথিবীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের মতো বিভিন্ন দিশারি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ২০২০ সালে ভারত তার মহাকাশ খাত উন্মুক্ত করে দেবার পর থেকে ১৫০টিরও বেশি স্টার্ট-আপ রকেট এবং কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি, মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ সুবিধা স্থাপন
এবং মহাকাশ পর্যটনের সম্ভাবনা অন্বেষণের মতো ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করছে। ইকোনমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত আর্টেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হবার সুবাদে এবং মহাকাশ খাতে, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়গুলোতে সমাধানের উপর অধিক নজর দিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক মার্কিন সফরের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার দিক আরও এক কদম এগিয়েছে এবং যার মাধ্যমে এই ক্ষেত্রটিতে বেসরকারী অংশীদারদের জন্য দুয়ার খুলে যাবে বলে মনে করছেন শিল্প গোষ্ঠীর শীর্ষ কার্যনির্বাহীরা।এটি একটি ভালো শুরু,কারণ ১০-১৫ বছর আগেও এটি শোনা যেতো না যে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ বা প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত কোনও প্রযুক্তি অন্য কাউকে সরবরাহ করতে পারে।এটি যেন একটি নিষিদ্ধ ক্ষেত্র ছিলো। এখন, আমরা এই সানরাইজ সেক্টরে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলছি।’ ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন, মনস্তু মহাকাশ নামক সংস্থার সহ প্রতিষ্ঠাতা তুষার যাদব। মুম্বাই ভিত্তিক মনস্তু স্যাটেলাইটের জন্য গ্রিন প্রপালশন সিস্টেম তৈরি করছে এবং আগামী বছরে একটি পরীক্ষামূলক উড়ানের মধ্যদিয়ে এর প্রযুক্তির বৈধ পাবার আশা করছে। এই সংস্থা মহাকাশে একটি জ্বালানি স্টেশন নির্মাণের ডিজাইন করছে। এতে সম্ভব হলে, কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর কক্ষপথে চলাকালে জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে যাতে এগুলোকে পরিত্যাগ না করে, সেখানেই যাতে পুনরায় জ্বালানি ভরার ব্যবস্থা করা যায় তার জন্য জ্বালানি স্টেশন নির্মাণের প্রকল্প। ইণ্ডিয়ান স্পেস অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক, (অব) লেফটেন্যান্ট জেনারেল একে ভাট বলেছেন, ‘মহাকাশ ক্ষেত্রে অনেক প্রযুক্তিই দ্বৈত ব্যবহারের প্রযুক্তি, তবে এটি একটি ইঙ্গিত যে এখন এর জন্য প্রক্রিয়াগুলি সহজতর হবে।’ গত বছরের নভেম্বরে হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক স্কাইরুট অ্যারোস্পেস একটি সফল রকেট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার চার বছরের মধ্যে বিক্রম-এস নামে একটি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে। এটি ভারতে প্রথম বেসরকারীভাবে নির্মিত মহাকাশ রকেট। ইসরো-এর প্রাক্তন বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনীয়ারদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি এখন ছোট উপগ্রহগুলিকে কক্ষপথে স্থাপন করার জন্য বিক্রম সিরিজের রকেটের তিনটি রূপ তৈরি করছে। ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যাণ্ড অথরাইজেশন
সেন্টার (ইন-স্পেস) এর চেয়ারম্যান পবন গোয়েঙ্কা বলেন, বেসরকারী কোম্পানিগুলো এই যে সমস্ত কাজ করছে, সেগুলো কিন্তু ইসরো কাজগুলোকে নকল করে করা হচ্ছে না। স্কাইরুট এবং অগ্নিকুলের তৈরি মহাকাশযানগুলোর নিজস্ব স্বতন্ত্রতা রয়েছে। স্যাটেলাইট অ্যাপ্লিকেশনগুলি প্রযুক্তির দিক থেকে খুব নিখুঁত এবং অত্যাধুনিকও।গত বছর চেন্নাই এর অগ্নিকুল কসমস সংস্থা শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে নিজস্ব একটি রকেট উৎক্ষেপণের লঞ্চপ্যাড উদ্বোধন করে। উল্লেখ্য, শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে ইসরো তার মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ করে। যেহেতু ভারতে মহাকাশ প্রযুক্তি এবং মহাকাশ ডেটার চাহিদা খুব কম, তাই দেশীয় বেসরকারী সংস্থাগুলো বিশ্বব্যাপী বিচরণের ক্ষেত্র ও তাদের পণ্যের বাজার অন্বেষণ করছে।গোয়েঙ্কা বলেছেন, ইতিমধ্যেই তারা কিছু সাফল্য দেখতে শুরু করেছে। কয়েকটি সরকারী সংস্থার কাছ থেকেও কিছু বরাত পাচ্ছেন। যা ঘটছে তা আরেকটি বড় ব্যাপার। তিনি উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিকনেসেন্স থেকে বেঙ্গালুরুভিত্তিক পিক্সেল নামক কোম্পানি স্যাটেলাইট থেকে হাইপার-স্পেকট্রাল ইমেজ সরবরাহের জন্য পাঁচ বছরের একটি বরাত পায়। ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী বৈশ্বিক মহাকাশ অর্থনীতি, মার্কিন মূল্যে যা ৯.৬ বিলিয়ন-এর সাপেক্ষে ভারতের মহাকাশ অর্থনীতি ২.১ শতাংশ, যা তুলনায় খুব। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অতীতের ট্যাবু ভেঙে দিয়েছেন, এবং বেসরকারী ক্ষেত্রের জন্য মহাকাশ প্রযুক্তির তালা খুলে দিয়েছেন। তিন বছরের মধ্যে আমাদের ১৫০টিরও বেশি স্টার্ট-আপ হয়েছে, যারমধ্যে কয়েকটি এই প্রথম প্রকাশ হলো। বিশ্ব মাপকাঠিতে তা স্বীকৃতিও পাচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতকে মহাকাশ ক্ষেত্রে সমান সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে। ৫০ বছর আগে যা ভাবা হতো তার ঠিক বিপরীত, যখন প্রতিটি দেশ মহাকাশ ক্ষেত্রে এগোনোর জন্য শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই লাইন দিয়ে থাকত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.