ঘাটতি বাজেটে ছ’বছরেই ঋণের বোঝা দ্বিগুণ : কংগ্রেস।

 ঘাটতি বাজেটে ছ’বছরেই ঋণের বোঝা দ্বিগুণ : কংগ্রেস।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- বেকার সমস্যা, কর্মচারী বঞ্চনা সহ নানা জ্বলন্ত সমস্যা জিইয়ে রেখেই পেশ করা হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। মঙ্গলবার এই বাজেটকে এক কথায় দিশাহীন বলে উল্লেখ করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। তারা মনে করে, বাজেটের ৭০ শতাংশই পুরানো খতিয়ান থেকে সামনে তুলে আনা হয়েছে। অবশিষ্ট যে ৩০ শতাংশ রয়েছে, তাতেই নতুন করে বেশকিছু বিষয়কে সামনে তুলে আনার চেষ্টা হয়েছে মাত্র। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা বলে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলেও মনে করছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিন বলেন, গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে কোনও দিশা নেই এই বাজেটে। অথচ সবকা সাথ সবকা বিকাশের কথা বলে মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। গতানুগতিক বাজেট পেশ করে আবার ধন্যবাদও জানাতে চাইছে তারা। আসলে এটি অনেকটা এটিএম থেকে টাকা তুলে এটিএমকে ধন্যবাদ জানানোর মতো। পিসিসি সভাপতি বলেন, ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাম সরকার নাকি মানুষের কাঁধে ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে গিয়েছিল বলে ঢাকঢোল পেটায় তারা।এখন দেখছি মাত্র ছ’বছরেই ৬১১ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট, তাও আবার ২৪,৮৩২ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে ! মানেটা দাঁড়ালো, ছ’বছরে প্রায় দ্বিগুণ ঋণের বোঝা। তার উপর চলতি অর্থবছরে আরও প্রায় ২৬শো কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই বাজেটে। পিসিসি সভাপতি বলেন, জনগণের উপর এত বড় ঋণের বোঝা চাপিয়েও রাজ্যের শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী, যুবকদের জন্য না আছে কোনও কর্মসংস্থানের দিশা, না আছে গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের মজুরি বৃদ্ধির কোনও দিশা। সরকারী কর্মচারীদের তাদের ন্যায্য পাওনার জন্যও সরকার কোনও ধরনের প্রস্তাব রাখেনি এই বাজেটে। স্বাভাবিকভাবেই একে জনবিমুখ বাজেট বলেও মনে করেন তিনি।এ দিন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিগত দিনে বাজেটে উল্লিখিত বিভিন্ন বিষয়ের বাস্তবায়ন নিয়েও চেপে ধরেন সরকারকে। বলেন, ২০২১ সালে পরবর্তী তিন বছরের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী গ্রাম প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছিল।এ বাবদ মোট ১৩ কোটি টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্পটিই ভেস্তে গিয়েছে। তিনি বলেন, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী পরিকাঠামো ফান্ডও গঠন করা হয়। এতে ২০২১-২২ অর্থবাজেটে দুশো কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। পিসিসি সভাপতির প্রশ্ন, কোথায় গেলো এই টাকা?জনজাতিদের শিল্প ও সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র ক্রয় করার জন্য এককালীন আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা ছিল। এ জন্য মোট ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও রাখা হয়। একই সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরে পুরস্কার প্রাপকদের সংবর্ধনা জানানোর উদ্দেশে আরও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কোথায় গেলো এই অর্থরাশি? এ দিন একই এলাকার মধ্যে বিভিন্ন দপ্তরের কাজকর্মগুলিকে নিয়ে আসার লক্ষ্যে নতুন অফিস ভবন নির্মাণের কথা বলেছিল সরকার। পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে এ বাবদ ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। অথচ রাজ্যের কোথাও এ ধরনের ভবন নির্মাণে একটি ইটও গাঁথা হয়নি। পিসিসি সভাপতি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পুষ্প উদ্যান প্রকল্পেও ২০২৩ সালের মধ্যে ফুল চাষিরা যাতে ১০০ কোটি টাকা লাভ করতে পারে এ জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন নামেও জনজাতিদের দ্রুত আর্থিক উন্নয়ন ও জমির যথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে রাবার চাষের পরিকল্পনা নেয়। অথচ এর একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। নানা প্রকল্পের নামে নানা সময়ে মানুষের সাথে প্রতারণাই শুধু করা হয়েছে।সাংবাদিক সম্মেলন থেকে পিসিসি সভাপতি আরও বলেন, মোট ৬৪টি দপ্তর নিয়ে এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে এমন ১৫টি দপ্তর রয়েছে যাদের বরাদ্দ কমিয়ে আনা হয়েছে। উল্লিখিতভাবে যে ৮টি দপ্তরের বাজেট ব্যাপক মাত্রায় কমানো হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে আরডি, আইটি, আইসিএ, পিডব্লিউডি (ডব্লিউআর)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলিও। আরডিতে গত অর্থবছরের তুলনায় কমানো হয়েছে ২৭৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আইটিতে কমানো হয়েছে ১৪৩ কোটি ৫২ লাখ। আইসিএতে কমানো হয়েছে ৭৮ কোটি ৭৭ লাখ। পিডব্লিউডি (ডব্লিউআর)-তে ৬৫ কোটি ৭৩ লাখ। এছাড়াও পিআরটি অ্যান্ড পিটিজি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরও রয়েছে। তার কথায় এভাবে বরাদ্দ কমিয়ে আদৌ কী উন্নয়ন সম্ভব ?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.