কে বেশি বলীয়ান।

 কে বেশি বলীয়ান।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পশ্চিমবঙ্গে দশম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যালট গণনা সমাপ্ত। প্রায় একচ্ছত্র জয়ী হয়েছে সে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের শেষ স্তর জেলা পরিষদের ৯২৮ আসনের মধ্যে ৮৮০ আসনে তারা জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় স্তর পঞ্চায়েত সমিতির ৩৪১ আসনের মধ্যে জয়ী হয়েছে ৩১৩ আসনে এবং প্রথম স্তর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩,৩১৭টির মধ্যে ২,৬৪১ আসনে তাদের জয়ডঙ্কা উড়েছে।অথচ ভোটের ‘চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পরেও প্রার্থীদের জয়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সে রাজ্যের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করতে ‘পারল না উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে।সে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিক লিখিত নির্দেশে জানিয়েছেন, এই মামলার রায়ের উপরই নির্ভর করবে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়। ভোটের ফলাফলে জয়ী হয়ে যারা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে জয়ের শংসাপত্র পেয়েছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যেন তাদের কর্ণকুহরে এই নির্দেশটি পৌঁছে দেয়, সে কথাও আদালতের আদেশনামায় বলে দেওয়া হয়েছে।এহ বাহ্য, বঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট এবং গণনা পর্বে হিংসা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি এই সূত্রে যে মন্তব্যটি করেছেন সেটি সমধিক প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘ভোটের পালা সাঙ্গ হওয়ার পরে, এমনকি ভোটের ফল ঘোষণার পরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, গোটা রাজ্য জুড়ে ব্যাপক আকারে সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। কোনও রাজ্য সরকার যদি তার সীমানাভুক্ত নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, সেটা খুবই উদ্বেগের, অতিশয় গুরুতর বিষয়’ অর্থাৎ তৃণমূল শাসিত বঙ্গের অভ্যন্তরে যে একটা অনিয়ন্ত্রিত গোলযোগ বহমান এবং নির্বাচনকালে যা প্রকট হয়েছে, আদালতের এহেন মন্তব্যের অন্তর্নিহিত নির্যাস কিন্তু সেটাই। হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ উপাদান হিসাবে, সঙ্গতভাবেই কেন্দ্রের শাসকবর্গকে পশ্চিমবঙ্গে সংবিধানের ৩৫৫ ধারা বলবৎ করার প্রশ্নে উৎসাহ দান করতে পারে। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য মণিপুরে ৩৫৫ বলবৎ হয়েছে। যেকোনও রাজ্যের সরকার তার নাগরিকদের বাঁচার ন্যূনতম অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হলে সেই সরকার সংবিধান দ্বারা চালিত হচ্ছে কিনা, সেই জরুরি প্রশ্নটি উঠে যায়। তবে এ দেশে সবকিছুই যে সংবিধান এবং আইনের অনুপুঙ্খ মেপে হয় তা নয়। কারণ অনেক কিছুর ভিতরে অনেকাংশ জুড়ে থাকে রাজনৈতিক সমীকরণের বিন্যাস। বিশেষত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আদালতের হস্তক্ষেপ শেষ পর্যন্ত কতদূর কার্যকর হবে,হতে পারে, রাজনীতির ট্রাপিজের ময়দানে তা নিয়ে সংশয় ছিল এবং আজও আছে।ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী,একবার নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে সচরাচর আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করে না।এমনটাই হয়তো বাঞ্ছনীয়। সুপ্রিম কোর্টেরও এমনটাই অভিমত। একাধিক রাজ্যের হাইকোর্টেরও একই অভিমত। তদুপরি বিভিন্ন রাজ্যের যে নিজস্ব পঞ্চায়েত আইন থাকে, সেটি নিজেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন।সেই আইনের বাইরে গিয়ে কোনও নির্দেশ দান সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষেও কার্যত সম্ভব নয়।এই আইনের আবার তথাকথিত একটি ছিদ্রও’ আছে। সেটি হলো, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তাকে সেই রাজ্যের সংশ্লিষ্ট আদালতে নির্বাচনি যাচিকা দায়ের করতে হবে। সেই মামলা দেওয়ানি বিধিতে বিচার হয়। ভারতবর্ষে একটি দেওয়ানি মামলার ভবিতব্য কী, তা ভুক্তভোগীই জানেন। প্রশ্ন জাগে, গোটা বিষয়টি সম্যক জানার পরেও একটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থীদের জয়- পরাজয়ের ভাগ্য ঝুলিয়ে রাখতে পারেন? উত্তরটি মহামান্য বিচারপতিরাই বলতে পারেন। তবে কুতূহলী নাগরিক-মনে এমন সংশয়ও জাগে, তবে কি সবকিছুর গভীরেও নিহিত রাজনীতির বীজ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা আগামী ২০ জুলাই। দেখ যাক, কে বেশি বলীয়ান, আদালত না রাজনীতি!

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.