আশা-উদ্দীপনার প্রহর গুনছেন ভারতীয়রা।

 আশা-উদ্দীপনার প্রহর গুনছেন ভারতীয়রা।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নীল আকাশের বুক চিরে সাদা ধোঁয়ার রাস্তা বেয়ে চাঁদে পাড়ি দিল চন্দ্রযান-৩। কোটি কোটি মানুষের আবেগ, বহু বিজ্ঞানীদের বহু রাত জাগা অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। গত তিন দশক ধরে ভারত, পৃথিবীর মহাকাশ বিজ্ঞানের মানচিত্রে প্রথম সারির চার-পাঁচটি দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।আমরা জানি, মহাকাশের বিভিন্ন উপগ্রহ, গ্রহ, এমনকী চাঁদের কাছে নিজেদের উপগ্রহও সফলভাবে পাঠিয়েছে ভারত। কয়েক বছর আগে গোটা ভারতবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, কখন চন্দ্রযান-২ থেকে একটি অবতরণকারী যান ‘বিক্রম’ ইংরেজিতে যাকে ল্যান্ডার বলে, সেটি চন্দ্রপৃষ্ঠের মাটি স্পর্শ করবে। সেই বিক্রমের ভিতর ছিল প্রদক্ষিণকারী যান রোভার ‘প্রজ্ঞান’, যে যানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরে বেড়াবে। বিক্রম ও প্রজ্ঞানের অবতরণকে ঘিরে ভারত জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চন্দ্ৰপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে থাকাকালীন, হঠাৎ সুনির্দিষ্ট পথ থেকে যানটি বিচ্যুত হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভারতের মাটি থেকে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগও। সেদিন আশাভঙ্গের সকাল দেখেছিল ভারত। বিদেশি কিছু শক্তি বলেছিল, ভারতবর্ষ হয়তো এখনও সেরকম প্রযুক্তি তৈরি করতে পারেনি। এইসব কথা মাথায় রেখে মূলত ইসরোর বিজ্ঞানীরা গত কয়েক বছর প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন, আবার চন্দ্রাভিযান এবং চন্দ্রবিজয়ের।চন্দ্রবিজয় বলতে বোঝালাম, চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণ করা ও তার আশপাশের জায়গাগুলির খুঁটিনাটি ছোট্ট স্বয়ংক্রিয় যানের মাধ্যমে দেখা। তার থেকেই চন্দ্রযান ৩-এর উৎপত্তি।শুধু ভারতের বিজ্ঞানীরাই নন, সঙ্গে রয়েছে ছোট-বড় অনেক সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। সংস্থাগুলো বাণিজ্যিক হলেও এই চন্দ্রযান তৈরির ক্ষেত্রে তারা বুদ্ধি লাগিয়েছেন। এবার চন্দ্রযান-৩-এ প্রদক্ষিণকারী কোনও আলাদা উপগ্রহ থাকছে না। রকেট সিস্টেমের মাধ্যমে চাঁদের কাছে পৌঁছে তার থেকে অবতরণকারী যানটিকে ‘বিক্রম’ চন্দ্রপৃষ্ঠে ছেড়ে দেওয়া হবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, বিক্রম থেকে প্রজ্ঞান বেরিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরবে।৫ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হবে চন্দ্রযানকে। তারপর চাঁদের কক্ষপথে ওই যান ঘুরবে। ১৫ আগস্ট নাগাদ চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে উপবৃত্তাকর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করবে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ২৩ আগস্ট আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, চাঁদের বুকে অবতরণের। গতবার অবতরণকালে সাফল্য আসেনি। এবার বিজ্ঞানীরা যানে ছোটখাটো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করেছেন। এমনকী সেটি কীভাবে নামবে, তার পদ্ধতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচারও করেছেন। গত এক বছর ধরে কখনও হেলিকপ্টার থেকে কখনও উঁচু ক্রেনের মাধ্যমে এটিকে অবতরণ করানো হয়েছে। চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার আগে তার গতিবেগ হবে প্রতি সেকেন্ডে মাত্র দু’মিটার।এখন ল্যান্ডার বিক্রম ১২০ ডিগ্রি কোণে নামলেও উল্টে পড়বে না। তার জন্য এর চারটি পায়া শক্তিশালী করা হয়েছে। গতবার বিক্রমে ছিল পাঁচটা রকেট। এবছর চারটি রকেট রাখা হয়েছে। এই রকেট নিয়ন্ত্রিত হবে পৃথিবী থেকে। চন্দ্ৰযান ৩-এর খরচ মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা। শ্রীহরিকোটা ছাড়াও বিজ্ঞানীদের কন্ট্রোলরুম হবে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত মহাসাগরের উপর অবস্থিত একটি জাহাজ। অবতরণকারী যানে সাত রকমের সেন্সর থাকছে। এই সেন্সর ঠিক করে দেবে, কীভাবে সঠিক জায়গায় নামা যায়। নামার মুহূর্তে যদি দেখা যায় সেখানে পাথর আছে. তাহলে যানটি নিজেরই সরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। চাঁদের পৃষ্ঠ দেশের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে চার কিলোমিটার বাই আড়াই কিলোমিটার জায়গায় এটির অবতরণ করবে। বিক্রম-প্রজ্ঞান চাঁদের বুকে যে তথ্য পাবে, প্রথমত সেই তথ্য বিশ্লেষণ করতে সময় লাগবে। এর মাধ্যমে আমরা চাঁদ সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে পারব। যদিও এখনই তার প্রভাব সমাজজীবনে পড়বে তা নয়। এই ধরনের বিজ্ঞান অভিযানের প্রভাব এক-দু’দিনে বোঝা যায় না। আজ থেকে ১৫-২০ বছর পর হয়তো মানবজীবনের প্রভাব পড়তে শুরু করবে।চাঁদে হয়তো একদিন জল না হলেও জলীয় বরফ পাওয়া
সেই জলকে বিভাজন করে হাইড্রোজেন অক্সিজেন তৈরি করে কৃত্রিম বায়োস্ফিয়ার তৈরি করা যাবে। সেই হাইড্রোজেন দিয়ে রকেটের জ্বালানি তৈরি করা যাবে। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা উৎসাহ আছে সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু বিজ্ঞানী মহলে এর উৎসাহ যথেষ্ট। কারণ চাঁদের নেমে কি খনিজ পাওয়া যায় তার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.