নয়া প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা, ধান উৎপাদনে ঘাটতি মেটাতে বড় উদ্যোগ নিল কৃষি দপ্তর।

 নয়া প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা, ধান উৎপাদনে ঘাটতি মেটাতে বড় উদ্যোগ নিল কৃষি দপ্তর।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- অপর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে এবছর রাজ্যে আউশ ধান চাষ ও উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবছর ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৷ কিন্তু সময়মতো বৃষ্টির অভাবে মাত্র ৭,৪৮৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে উৎপাদন অনেকটাই কমে যাবে। ওই সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিলো ৫৮৪ মিলিমিটার। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২৮০ মিলিমিটার। যা প্রয়োজনের তুলনায় ৫৯ শতাংশ কম। এতে কৃষকরাও বড় ধরনের আর্থিক সঙ্কটে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে যাতে খাদ্য সঙ্কট তৈরি না হয় এবং কৃষকদের আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে না হয়, তাই রাজ্য সরকার এবং কৃষি দপ্তর বড় ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আউস ধান উৎপাদনে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেই ঘাটতি পূরণের জন্য আমন ধান চাষে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শুধু গুরুত্ব দেওয়াই নয় ৷ কৃষি বিজ্ঞানীদের নির্দেশ মোতাবেক বিশেষ পাঁচ পদ্ধতিতে আমন ধান চাষ করে উৎপাদন বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী ইন্ট্রিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করছে কৃষি দপ্তর। সোমবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে করে এই কথা জানান কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ।এই প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আউশ ধান চাষ ও উৎপাদনে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা আমরা আমন ধান উৎপাদনে সেই ঘাটতি পূরণ করবো। মন্ত্রী বলেন,পরিস্থিতি অনুধাবন করে সরকার এবং দপ্তর আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এই বিশেষ প্রকল্প নিয়ে এসেছে। আমন ধান চাষের মরশুমে ১৫ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৫১৮.০৮মিলিমিটার।আশা করছি আগামীদিনে আরও বৃষ্টি হবে। তাই দপ্তর এবার ১লক্ষ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে যেভাবেই হোক এবার আমন ধান চাষ করা হবে। এর জন্য নয়া প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার ও কৃষি দপ্তর অতিরিক্ত ৬৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা খরচ করবে। এর মাধ্যমে প্রতিহেক্টর জমিতে অতিরিক্ত ৫০০ কেজি করে ধান উৎপাদন বাড়ানো হবে। বর্তমানে প্রতিহেক্টর জমিতে ৩২০০ কেজি ধানের ফলন হয়। সেই জায়গায় ৩৭০০ কেজি উৎপাদন করা হবে। এরজন্য কৃষকদের প্রতিহেক্টরের জন্য কৃষকদের দেওয়া হবে ৫৬০০ টাকা করে। এর মধ্যে ২০৮.৫০ টাকা দরে প্রতি হেক্টরের জন্য ৬ কেজি করে ইউরিয়া সার দেওয়া হবে। এছাড়া কৃষকরা যদি এসএসপি, এমওপি সহ অন্যান্য অর্গানিক সার ক্রয় করে দপ্তরে রসিদ জমা দেয়, তাহলে প্রতি হেক্টরের জন্য তাদের দেওয়া হবে ১৭১১.৫০ টাকা করে। অবশিষ্ট ৩৭৭০টাকা নগদে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হবে। এই ভাবে প্রতিকানির জন্য দেওয়া হবে ৯০৪ টাকা করে। এর মধ্যে ৬৬০ টাকা নগদে। অবশিষ্ট অর্থ ইউরিয়া সার ও অন্যান্য সার বাবদ দেওয়া হবে।মন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে কৃষকদের ধানচাষে পাঁচটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।এক,জমিতে লাইন করে ধানের চারা রোপণ করতে হবে। দুই, চারার বয়স ১২ দিন থেকে ২০ দিনের মধ্যে হতে হবে। তিন, প্রতি গোছায় দুটি করে চারা থাকতে হবে। চার, চারা রোপণের ২৫ দিন পর এবং ৪৫ দিন পর দুই দফা আগাছা পরিস্কার করতে হবে। পাঁচ, দুই দফা আগাছা পরিষ্কারের পর দুই দফা সার ছিটিয়ে দিতে হবে। এই পাঁচ পদ্ধতি অবলম্বন করলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি হবেই। আমন ধান চাষে এই বিশেষ উদ্যোগ সঠিকভাবে রূপায়ণের জন্য সোমবার প্রজ্ঞাভবনে কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ রাজ্যের সকল স্তরের কৃষি আধিকারিক, অফিসার, এবং কর্মচারীদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠকে সারা রাজ্য থেকে প্রায় সাড়ে তিনশজন কৃষি আধিকারিক, অফিসার, কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামীকাল থেকে আগামী একমাস কৃষি দপ্তরের কোনও আধিকারিক,অফিসার, ছুটি নেবেন না এবং স্টেশন লিভ করবেন না। একেবারে বিশেষ কোনও কারণ ছাড়া।এই এক মাসে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা সারা রাজ্যে কৃষকদের কাছে যাবে।অফিসে বসে না থেকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে একেবারে গ্রাউণ্ড লেভেলে কাজ করবে।যদিও দপ্তরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে গোটা রাজ্যে কৃষকদের নিয়ে বিশেষ শিবির করা হয়েছে।কৃষকদের বোঝানো হয়েছে।এখন এই উদ্যোগ বাস্তবে রূপায়ণের কাজ শুরু করা হবে। মন্ত্রী বলেন, আটটি জেলার মধ্যে দক্ষিণ এবং সিপাহিজলা হচ্ছে রাজ্যের শষ্য ভাণ্ডার। কাছাকাছি রয়েছে গোমতী জেলা। কিন্তু আউশ ধান চাষে এবার বড়সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৃষ্টি। মন্ত্রী বলেন, প্রতি হেক্টরে ধান উৎপাদনে সারা দেশে রাজ্যগুলির মধ্যে পঞ্চম স্থানে আছে ত্রিপুরা।উত্তর-পূর্বে ত্রিপুরা প্রথম স্থানে। বর্তমানে পাঞ্জাব এক নম্বরে। পাঞ্জাবে প্রতিহেক্টরে ধান উৎপাদন হয় ৪৩৬৬ কেজি। দ্বিতীয় তামিলনাড়ু প্রতিহেক্টর ৩৫৭৪ কেজি। তৃতীয় অন্ধ্রপ্রদেশ প্রতি হেক্টর ৩৩৯৫ কেজি, পঞ্চম ত্রিপুরা প্রতিহেক্টর ৩০৪৪ কেজি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.