প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্রমোদীর অফিসে রাহুল গান্ধি, সঙ্গে মজুত ছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতিও!!
উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে

সাধারণ মানুষের বেলায় কেউ যদি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায় তাহলে তাকে অপরাধী বলা হয়।অথচ নীরব মোদি,মেহুল চোকসি কিংবা বিজয় মালিয়াদের মতো প্রতারকরা ব্যাঙ্কের টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এই আর্থিক জালিয়াতদের দেশে ফেরাতে পারেনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। বরং সরকারী ভাষায় এদের পরিচয় আর্থিক জালিয়াত কিংবা প্রতারক নয়। এদেরকে সরকারীভাবে বলা হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। অথচ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা লুট করে বিজেপি আমলেই দেশ ছেড়েছিলেন এই আদরের দুলালরা। ব্যাঙ্কের হাজার হাজার কোটি টাকা এই ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী কাম জালিয়াতেরাই দেশ থেকে তুলে নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিলেও আজ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসককে এই সম্পর্কে কোন কড়া অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। বিস্ময়কর হলো, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বরাবরের মতোই শনিবারও রোজগার মেলার বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়িয়ে নীরব মোদি, মেহুল চোকসি কিংবা বিজয় মালিয়াদের বিরুদ্ধে একটি টুঁ শব্দ উচ্চারণ না করলেও সটান তিনি যে বিষয়টি আবিষ্কার করলেন তা হলো দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার। শনিবার রোজগার মেলার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৭০ হাজারের বেশি যুবক-যুবতীর হাতে ভিডিওর মাধ্যমে নিয়োগপত্র তুলে দেন। দেশের একসাথে মোট ৪৪ টি জায়গায় এই রোজগার মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারী চাকরিতে প্রায় ১০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান ও চাকরির সুযোগ সম্প্রসারিত করা যাবে। আর লোকসভা ভোটের মুখে শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে কর্মসংস্থানের এই সুযোগ তুলে দিতে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী ভোটের প্রচার সারলেন দেশের পূর্বতন সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ নিন্দাবাক্য, সমালোচনা ও বিষোদগারের মাধ্যমে। বললেন, মনমোহন সিংয়ের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি বিরাট লোকসানের মধ্য দিয়ে গেছে। অথচ তাঁর নিজের সরকারের সময়ে ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা আজ গোটা বিশ্বে সমাদৃত। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারত বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে। অথচ ৯ বছর আগে দেশের মানুষ অনলাইন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। কিছু কিছু বিশিষ্ট পরিবারের ঘনিষ্ঠরা আগের সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকা ঋণ পেয়ে যেতেন। লোকসভার ভোট এবং আসন্ন চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকারী চাকরির নিয়োগপত্র শিক্ষিত বেকারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই রোজগার মেলার আয়োজন করে চলেছেন। যদিও বছরে ২ কোটি সরকারী চাকরির প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিন আগে দেওয়া সত্ত্বেও এখন ২০২৪-এর ভোটের আগে ১০ লক্ষ সরকারী চাকরিতে নিয়োগ করার কথা বলছেন মোদি। যদিও বিরোধীদের নিরন্তর অভিযোগ হলো, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরেই ৪০ লক্ষ পদ শূন্য পড়ে আছে। কিন্তু এতগুলো বছর সেগুলো পূরণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন ভোটের আগে রোজগার মেলার নাম দিয়ে চাকরি বিলিতে নেমেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বেকারদের কর্মসংস্থান এবং নতুন রোজগার সৃষ্টি করা অবশ্যই সরকারের সদর্থক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কিন্তু ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির লোকসান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যে অনেকটাই ফাঁপা তা বিগত কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার। কারণ কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের আর্থিক নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও ভ্রান্তির কারণেই দেশে গত ৩ বছরে ২০ হাজার ছোট-মাঝারি শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে কর্ম হারিয়েছেন অন্তত কয়েক লক্ষ মানুষ। শুধু তাই নয়, তাঁর আমলেই বিপুল অঙ্কের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে দেশ ছেড়েছেন বিজয় মালিয়, মেহুল চোকসি ও নীরব মোদির মতো শিল্পপতিরা। অথচ ব্যাঙ্কিং সেক্টরে দুঃসময়ের জন্য ফের ইউপিএ জমানাতেই নিশানা করে তোপ দাগছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে আবার গত ৯ বছরে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক মার্জ করেছে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে দেদার বেসরকারীকরণও বিজেপি আমলেই হয়েছে। অতীতে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কর্মসংস্থান, পরিকাঠামো উন্নয়ন, আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের লক্ষ্যে। অর্থাৎ ব্যাঙ্ককে একটি সামাজিক উন্নয়নের ভূমিকায় ব্যবহার করাই ছিল পূর্বতন সরকারের লক্ষ। মানুষের গচ্ছিত অর্থের নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল এর মধ্যে অন্যতম। অর্থা বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা ও কর্মপদ্ধতি দেখে যা মনে হচ্ছে তা হলো দেশে আর রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের কোন প্রয়োজনই নেই। বেসরকার ল্যাঙ্কের অনিশ্চয়তার জন্য ইন্দিরা গান্ধী ব্যাঙ্কগুলির জাতীয়কর করেছিলেন। অথচ মোদি সরকারের সময়েই সরকার পুনরায় ব্যাঙ্কগুলিকে বেসরকারীকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী সরকারের ভুল নীতি। পছন্দের লোকেদের কম সুদে ঋণ পাইয়ে দেওয়া, ঋণ শোধ না করলে দায় ব্যাঙ্কের ঘাড়ে চাপানো। এরই
নীটফল ব্যাঙ্কগুলোর দূর্বল হয়ে পড়া। যার মূর্তিমান দৃষ্টান্ত মালিয়া, চোকিস,নীরব মোদিরা তো আছেনই। অথচ রঘুরাম রাজন যখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ছিলেন, তিনি এই ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন। কিছু বাধার কারণেই তাকে পদ ছেড়ে দিতে হয়েছে। অথচ এই সরকারের বিরুদ্ধে নীরব মোদি, বিজয় মালিয়াদের পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নয়া নীতি অনুযায়ী ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া অর্থ কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে শোধ নাও করেন, তাকে মীমাংসা বা নিগোসিয়েশনের সুবিধা দেওয়া হবে। ঋণের নামে প্রতারণার ক্ষেত্রেও এই সুযোগ প্রযোজ্য। স্বাভবিক কারণেই তাই প্রশ্ন আসে, ব্র্যাঙ্কিং ব্যবস্থার অধোগতির এই দায় কার?