হোয়াটসঅ্যাপে জুডো শিখছেন আফগান মহিলারা।
তাদের দেশে তালিবান শাসনের ররক্তচক্ষু সেখানে স্কুল- কলেজ যাওয়াই যায় না, তার উপর মার্শাল আর্ট শেখা! কিন্তু আফগান নারীরা থেকেই আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে চান। অতএব, নিজেদের দেশ থেকে বহু দূরে,শীতের চাদের ঢাকা নরওয়েতে হোয়াটসঅ্যাপের তারা জুডো শিখছেন।নরওয়ের রাজধানী অসলোর হাউগেরুড এলাকায় রয়েছে মার্শাল আর্ট ট্রেনিং সেন্টার। সেখানে কুদসিয়া খলিলি নামের এক আফগান নারী জুডো ম্যাটে তার ট্রেনিং পার্টনারের মুখোমুখি হয়েছেন, সেই ঘটনা (ছবিতে বসা) পরে জানাজানি হয়। ওই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, কুদসিয়ার ট্রেনিং পার্টনার একজন নরওয়েজিয়ান মহিলা। ট্রেনিংয়ের এক পর্যায়ে তিনি কুদসিয়ার জুডো খেলার উর্দির কলার ধরে আঘাত করেছেন।সেই আঘাতের অভিঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন তিনি। কুদসিয়ার সঙ্গে একই হলে পাশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন নরওয়েজিয়ান জাতীয় জুডো দলের সদস্যরা। তারা কুদসিয়াকে মেঝেতে পড়ে যেতে দেখে কিছুটা শঙ্কিত।
কিন্তু এ আফগান নারীও হাল ছাড়ার পাত্র নন। মাত্র ২২ বছর বয়সি কুদসিয়া স্বভাবে মৃদুভাষী। তবে জুডোর ম্যাটে পা রাখলেই তিনি অন্য মানুষ। তখন তিনি একজন শক্তিশালী লড়াকু সৈনিকের মতো পূর্ণ শক্তিতে লড়াই করেন।তালিবান শাসনের আগে আফগানিস্তানে মেয়েদের মধ্যে জুডো খেলার চল ছিল। আফগানিস্তান মহিলা জুড়ো দলের সাবেক কোচ ছিলেন ফরহাদ হযরতি। ২০২১ সালে সে দেশে তালিবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারীদের মেয়েদের মার্শাল আর্ট নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই সঙ্গে আফগান মেয়েদের হাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পার্ক কিংবা জিমে যাওয়া এবং নানা ধরনের খেলাধুলোয় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকেও মেয়েদের বঞ্ছিত করা হয়। তবে কিছু আফগান তরুণী যেন অদম্য। তারা তালিবানের কঠোর অনুশাসনের তোয়াক্কা না করেই গোপনে জুডোর প্রশিক্ষণ চালু রেখেছেন। গোপন স্থানে একত্র হয়ে তারা অনলাইনে হোয়াটসঅ্যাপে কোচ ফরহাদের কাছে তালিম নিচ্ছেন।তালিব সরকারের নজর এড়াতে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্র্যাকটিশ করেন না। গত পনেরো বছর ধরে প্রশিক্ষণরত এমনই এক আফগান মহিলা জানান, তিনি আজও জুডোতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। হোয়াটসঅ্যাপের এক গ্রুপ কলে ওই মহিলা বলেন, ‘এক-একজন মহিলা বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে জুডোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।কেউ নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রশিক্ষণ
নিচ্ছেন। আবার কেউ অন্য মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কেউ নিচ্ছেন নিজেদের আত্মরক্ষার্থে।’ উল্লেখ্য,সম্প্রতি নওরয়ে সরকারের তরফে কুদসিয়াকে একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে।কিন্তু দেশে থাকা সতীর্থদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে তার মন খারাপ। অন্যদিকে কোচ ফরহাদ বর্তমানে অসলোর একটি রিফিউজি সেন্টারে বসবাস করছেন। তিনি জুডো
কমিউনিটির সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করায় নরওয়ে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।