ইণ্ডিয়া’ বিরোধিতায় মোদি!

 ইণ্ডিয়া’ বিরোধিতায় মোদি!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিরোধীদের ‘ইণ্ডিয়া’ জোটের নামে এত আপত্তি কেন শাসকের? বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তাহলে কি ইণ্ডিয়া’ নামের এতদিন প্যাটেন্ট রাখা বিজেপির এতে গোঁসা হয়েছে।এ কারণেই রাগ। যাবতীয় ক্ষোভ এবার ইণ্ডিয়া’ নামেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে বিরোধী ২৬টি দলের জোট ইণ্ডিয়া’কে বেনজির আক্রমণ করেছেন। ইণ্ডিয়া’ জোটের নামের সাথে ইণ্ডিয়া মুজাহিদিন, পপুলার ফ্রন্ট অব ইণ্ডিয়ার মতো ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম মুখে এনেছেন।মুখে এনেছেন ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির নামও। এই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির নাম নিয়ে বিরোধী জোটকে একহাত নিয়েছেন মোদি। এছাড়া ইণ্ডিয়ার সাথে দেশের অনেক নাম করা প্রতিষ্ঠান, নাম করা সংস্থা, সহ অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ইণ্ডিয়া’ জোটের মাঝে কিংবা ইণ্ডিয়া নামের সাথে প্রধানমন্ত্রী এদের তুলনা টানেননি। শুধু জঙ্গিগোষ্ঠী কিংবা ভারত শাসনকারী ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির নাম নিয়ে আসলে বিরোধীদের প্রতি তীব্র শ্লেষ এবং ক্ষোভ জাহির করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
মোদি জমানায় ইণ্ডিয়া নামটি যেন বিজেপির প্যাটেন্ট হয়ে দাঁড়ায়।ডিজিটাল ইণ্ডিয়া থেকে মেক ইন ইণ্ডিয়া,স্বচ্ছ ভারত অভিযান থেকে ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ প্রতিটি ক্ষেত্রে ইণ্ডিয়া বা ভারত শব্দ ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদ আর রাষ্ট্রবাদকে নিজেদের অনুকূলে নিতে চেয়েছে শাসক বিজেপি।এই শব্দগুলি ব্যবহার করে শাসক বিজেপি বারবার বোঝাতে চেয়েছে রাষ্ট্রের একমাত্র রক্ষাকারী এবং সেবক বিজেপিই।সেই অস্ত্রে বারবার বিরোধীদের ঘায়েল করতে চেয়েছে বিজেপি।এতে অনেকাংশে সফলও হয়েছে বিজেপি।কিন্তু অতি সম্প্রতি কর্ণাটকে হিন্দুত্বের জিগির তুলেও শেষরক্ষা করতে পারেনি বিজেপি। কর্ণাটকে বিজেপিকে ধাক্কা খেতে হয়। ফলে ক্ষমতার থেকে এবারের মতো দূরে রাখতে হয়েছে বিজেপিকে।বিজেপি এতদিন মনে করেছিল হিন্দুত্ব আর রাষ্ট্রবাদ বুঝি তাদের প্যাটেন্ট। কিন্তু কর্ণাটকে হিন্দুত্বের জিগির তুলে মার খেতে হয়েছে বিজেপিকে।আর শেষ মার দিয়েছে বুঝি বিরোধী জোট।২৬টি দলের বৈঠক সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়। আর এতেই ২৬টি বিরোধী দলের জোট ইণ্ডিয়া গঠিত হয়। ইণ্ডিয়া’ মানে ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যানায়েন্স (INDIA) বিরোধীরা জোট গঠন করে শাসক শিবিরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিল এবার দেশে লড়াই হবে এনডিএ বনাম ইণ্ডিয়া।আর এতেই বিজেপি তথা শাসক শিবিরে সিঁদুরে মেঘ দেখার উপক্রম হয়েছে।নাহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো বিজেপির একমেবদ্বিতীয়ম নেতৃত্ব কি না ইণ্ডিয়া’ জোটের সমালোচনার এতটা শেষ্টাত্মক বক্তব্য টেনে এনেছেন।শুধু তাই নয়, বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে মোদি আসলে এই বক্তব্য রেখে দলকেও বুঝিয়ে দিয়েছেন আগামীতে ইণ্ডিয়া জোট সম্পর্কে তার দলের অবস্থান কি হবে? কর্ণাটকে বিরোধী দলগুলি তাদের জোটের নাম ‘ইণ্ডিয়া’ নামকরণ করে একপ্রকার আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপিকে একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল এই ‘ইণ্ডিয়া’ নামটা। রাহুল গান্ধী তা লুফে নেন। এরপরই বিরোধী দলের তরফে শাসকের তরফে হুঙ্কার ছাড়া হয়,পারলে ইণ্ডিয়ার মোকাবিলা করে দেখাক বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদি। এবং জিতবে ইণ্ডিয়াই।রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এই প্রথম নরেন্দ্র মোদিকে তার নয় বছরের রাজত্বে বিরোধীদের সম্মিলিত জোটের সামনে কিছুটা হলেও নড়বড়ে দেখাচ্ছে। তাই নরেন্দ্র মোদিকে এখন এনডিএর বৈঠক করতে হচ্ছে। যে নরেন্দ্র মোদি অটলবিহারী বাজপেয়ী, আদবানীদের নাম পর্যন্ত মুখে নেননি এতদিন তাদের নামও নিতে হচ্ছে।এনডিএর শরিকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে বৈঠক করেছেন।এর অন্যতম কারণ ছিল নরেন্দ্র মোদি নিজেই ইণ্ডিয়ার চাপটা অনুভব করছেন।আর সর্বশেষ যেটা হলো তা হলো বিরোধী জোটকে সন্ত্রাসবাদী জোটের সাথে মিলিয়ে দেখা। লালুর আরজেডি তো বলেই দিয়েছে শুধু ২/৩টি নাম কেন নিলেন মোদি।আইআইএম, আইআইটি, ইণ্ডিয়ান আর্মি, ইণ্ডিয়ান এয়ার ফোর্স, ইণ্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন ইত্যাদির মতো দেশের আরও বিশ্ববন্দিত প্রতিষ্ঠানগুলির নাম কেন নিলেন না মোদি ‘ইণ্ডিয়া’ জোটের সাথে। আসলে নরেন্দ্র মোদি ফিলিং নাভার্স। সেজন্যই ইণ্ডিয়া জোট নিয়ে উল্টোপাল্টা বকাঝকা। তবে নরেন্দ্র মোদির মতো বিজেপির প্রবল ক্ষমতাধর ব্যক্তি এহেন ‘উপমা’ ইণ্ডিয়া জোটকে না দিলেই
বোধহয় ঠিক করতেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.