শাহবাজ শরিফ উবাচ

 শাহবাজ শরিফ উবাচ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সন্রাসবাদ আর আর্থিকভাবে বিধ্বস্ত পাকিস্তানকে তিনি খাদের কিনার থেকে বৈতরণী পার করিয়েছেন।তার নেতৃত্বেই বিবিধ সংকটের ধাক্কায় টলে যাওয়া পাক অর্থনীতি কিছুটা সচল হয়েছে। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে তিনিই মিত্রদেশগুলির দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন।সেই পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।তিনি বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং থমকে থাকা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায় পাকিস্তান।শরিফ বলেছেন, ‘এ নিয়ে দ্বিমতের আর কোনও অবকাশ নেই যে,দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধ কোনও বিকল্প নয়।আমরা দুই দেশই দারিদ্র্য ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’ভারত-পাক যুদ্ধের ইতিহাস টেনে শরিফ বলেছেন, ‘যুদ্ধের ফলে বাড়ে কেবল দারিদ্র্য ও বেকারত্ব। আর অন্যদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনগণের হিতার্থে উন্নয়নের জন্য অর্থে টান পড়ে।’শরিফ ইতিপূর্বেই ঘোষণা করেছেন, আগামী ১৪ আগষ্ট, পাক স্বাধীনতা দিবসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি থেকে ইস্তফা দেবেন। ফলে বিদায়ের পূর্বাহ্নে ভারত সম্পর্কে নেহাতই কথামালা, ইংরেজিতে যাকে বলে টাং ‘ইন চিক’, তিনি সেভাবে কথাগুলি বলেননি বলেই আপাতভাবে মনে হচ্ছে। কারণ, ভারত সম্পর্কে ওই অনুষ্ঠানে তিনি যা বলেছেন, পরক্ষণেই আন্তরিকভাবে এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিবেশীকেও (ভারত) বুঝতে হবে যে, আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক প্রতিবেশী হতে পারব না, যতক্ষণ না আমাদের অন্তর থেকে অস্বাভাবিকতা দূর হয়।’শরিফ যে এই প্রথম ভারতকে আলোচনার প্রস্তাব দিলেন তা নয়।এ বছরের গোড়ায় জানুয়ারীতেও তিনি এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন।এর পরেও সম্পর্কের শৈত্য কাটেনি। ২০১৯ সালের আগষ্টে কাশ্মীরের মাথা থেকে বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর থেকেই দিল্লীর সঙ্গে ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছয়। গত জুনে আমাদের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর মন্তব্য করেন, পাকিস্তন তাদের আন্ত:সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ নীতি বাতিল না করলে ভারতের পক্ষে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। এটা সর্বাংশে সত্য যে, একই সঙ্গে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার পরিসর তৈরির প্রয়াস সমান্তরালভাবে চলতে পারে না। সন্ত্রাস ও আলোচনা যুগপৎ অসম্ভব।এমনিতে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব অন্তহীন। বিবিধ দ্বন্দ্বের মূল শিকড় কাশ্মীর। ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তির শর্ত মেনে ভারত বরাবর কাশ্মীরকে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা মনে করলেও পাকিস্তান তলায় তলায় কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় নিয়ে যেতে চায়। তারা চায় রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ। আবার দুই দেশই সাধারণ নির্বাচন সামনে এলে পারস্পরিক বৈরিতাবে নানা আঙ্গিকে কাজে লাগিয়ে, দেশের মাটিতে উক্ত জাতীয়তাবাদের বীভ বপন করে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়।পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে ভারতের তরফে প্রচেষ্টা কম ছিল না। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সেই প্রচেষ্টা আরও গতিশীল হয়। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদী হামলা সেই প্রয়াসে জল ঢালে। এমন পরিস্থিতিতে পাক প্রধানমন্ত্রী শরিফ যে প্রকৃত অর্থেই সম্পর্কের শৈত্য কাটাতে আগ্রহী, না কি নিছক আগামী অক্টোবরে সেদেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে কোনও কৌশলী পদক্ষেপ, নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। ভারতকে পাকিস্তানের এখন দরকার মূলত বাণিজ্যের কারণে। শরিফ যদি ভারতের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি এই মর্মে কোনও বার্তা দিতেন যে, তার দেশ কট্টর মৌলবাদ এবং সেই সূত্রে প্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটনেও সমধিক সচেষ্ট, একমাত্র সেক্ষেত্রেই অর্থবহ সংলাপের পরিসর তৈরি হওয়া সম্ভব। শাহবাজ সরকার নির্বাচিত নয়, ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতি পর্ব-উত্তর ক্ষমতার হস্তান্তর মাত্র। গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা বরাবর সংকীর্ণ স্বার্থবাদী। বিশ্বাসভঙ্গতা দেশটির মজ্জায় বহমান। সেদেশের জল- হাওয়ার এমনই গুণ যে, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতায় মানবাধিকারের সব চারাগাছ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়।এ হেন দেশের সঙ্গে সংলাপের মঞ্চ তৈরি হবে, কথাটা শ্রুতিনন্দন হলেও আদতে সোনার পাথরবাটি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.